সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল : শান্তিপূর্ণ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

আগের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

পরের সংবাদ

জন্মদিন > বাবুল আনোয়ারের কবিতা : নিমগ্ন জোছনার উৎস

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘অলৌকিক পুড়ে যায় শিল্প ও সুন্দর/ দৃশ্যহীন এ আগুন দেখে না কেউ।/ স্মৃতির জনপদ পোড়ে মেধাবী মনন/ বোধের সুষমা পোড়ে স্বপ্নের বন।/ এ আগুনে ফাগুন পোড়ে-/ প্রিয়তোষ নাম/ শব্দহীন এ আগুন জ্বলে জ্বলে যায়।’ এই ছয় লাইনের কবিতাটির লেখক বাবুল আনোয়ার। কবিতার শিরোনাম অন্য রকম আগুন, কাব্যগ্রন্থ- ‘তবুও রয়েছি জেগে’। গ্রামে আমাদের মা-বোনদের কাছে শুনেছি, তারা বলতেন, হাড়ির একটা ভাত টিপ দিয়ে হাড়ির সমস্ত ভাতের অবস্থা জানা যায়। একই ভাবে বাবুল আনোয়ারের উপরোক্ত ছয়টি লাইন পড়ে, বাবুল আনোয়ারের কবিতার প্রতি এক ধরনের মোহ তৈরি হয়, ভালোলাগা তৈরি হয়, সেই থেকে তার সব লেখা পড়তে থাকি, কোনো বই হাতে পেলে, না পড়া পর্যন্ত স্বস্তি মেলে না। কবিতায় তিনি আঁকেন পাওয়া-নাপাওয়া, ব্যথা-বেদনার রং। শব্দের বুননে ধরা দেয় প্রেম-দ্রোহ, উচ্ছ¡াস।
বাবুল আনোয়ারের জন্ম ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৬০, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার, বড়ভিটা গ্রামে। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি নিজেও পেশাগত জীবনে সরকারি কলেজের অধ্যাপক। সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত ছিলেন দীর্ঘদিন। লেখালেখি করা একসময় শখ থাকলেও এখন আর সে পর্যায়ে নেই, এখন তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত একজন কবি। জন্মদিনে তার কবিতার বিশ্লেষণ, আমাদের কবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে।
বাবুল আনোয়ারের কবিতার ভাষা, উপমা, উপস্থাপন আপাতত দৃষ্টিতে সহজ-সরল-সজল মনে হলেও পাঠান্তে মনে হবে, কোথায়, কি যেন অধরাই রয়ে যায়। যেমন ‘বিস্ময়ের কি এক আলো-ছায়া দেখি শেলীর চোখে/ আজকাল। কখনো তার দুটি চোখে শুভ্র / গোলাপ নিয়ে ফুটে ওঠে ভোর। দু’চোখের কার্নিশ/ ছুঁয়ে যেন বয়ে যায় গতিময় আলোর প্রপাত (কবিতা-শেলীর চোখে আজকাল)।’ পড়ার পরে ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে, এখানে যতটা বলা হয়েছে, তার চেয়ে অবলা রয়েছে অনেক। এটা-ই বোধ হয় অনুরণন বা কাব্যময়তা, যা পাঠককে ভাবায়, পোড়ায়। এই রহস্যময়তা বাবুল আনোয়ারের প্রায় প্রতিটি কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায়।
সমসাময়িক যারা ভালো কবিতা লিখছেন, তাদের দু’চারজনের নাম বললেই বাবুল আনোয়ারের নাম চলে আসে। তার চেয়ে বড় কথা, সাহিত্য সাময়িকীর পাতা খুললে, কোথায়ও না কোথাও বাবুল আনোয়ারের লেখা দেখা যায়। আর শুধু কবিতাই নয়, গল্প-প্রবন্ধ-নিবন্ধও দাপটের সাথে তিনি লিখছেন।
তিনি কবিতায় যেমন বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলেছেন, তেমনি সমাজে অসঙ্গতি তুলে এনেছেন। যেমন, ‘জনক তোমার জাগরণে’ কবিতায় তিনি লিখেছেন কালের কণ্ঠস্বর হয়ে আছ তুমি/ আদিগন্ত সবুজে, ছাপ্পান্ন হাজার/ বর্গমাইল জুড়ে অনিন্দ্য অহংকারে/ বুকের উজ্জ্বল নিভাঁজে। তোমার দীপ্ত/ মুখের আদলে কথা বলে বাংলাদেশ/ স্বপ্নের পথ দেখায়- তোমার পথে পথ চলি/ শপথে বৈভবে, তোমার জাগরণে জেগে/ থাকে বাংলাদেশ। এ কয়েকটি লাইনে দেশের প্রতি কবির যে মমতাবোধ, তা ফুটে উঠেছে। অথবা ‘বিষণ্ন গোলাপের হে ব্যথিত কবি’ কবিতায় তিনি লেখেন, মৃত জোছনায় জেগে ওঠা চরের নতুন/ শস্যের ঘ্রাণ এনে দিত/ মানবিক উষ্ণতার নরম চাদরে ঢেকে/ দিত অসুস্থ শরীর। কিছুই মেলেনি তার/ তবু বুনো ফুলের গন্ধে বিদীর্ণ রাত জেগে জেগে/ তুমি নুলো ভিখিরির গান শুনেছ-/ রোদ ও বৃষ্টির মুগ্ধতায় লুকিয়েছ তৃষ্ণার্ত হৃদয়। কবি এখানে ভেতরের অব্যক্ত কথা ব্যক্ত করেছেন ধীরলয়ে। গভীর আবেগে। বাবুল আনোয়ারের প্রতিটি কবিতায় পাঠকের মননকে জাগিয়ে তোলার প্রয়াস লক্ষণীয়। প্রতিটি কবিতা যেমন গভীর ও অতলস্পর্শী, তেমনি ব্যাপক। আছে বিষয় ও ভাষার কারুকাজ, আছে অভিনব বর্ণনা, আছে ঔদার্য ও বিস্ময়। প্রায় প্রতি কবি ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম না করলেও প্রেমের কবিতা লিখতে পিছপা হন না। একই ধারায় বাবুল আনোয়ারও প্রেমের কবিতা লিখেছেন, যেমন ‘একদিন চলে গেলে কোন বিষণ্ন সন্ধ্যায়/ ধান ক্ষেতের সবুজ নিবিড় আড়ালে/ উদাম হাওয়ার কোমল শরীর ছুঁয়ে/ কাউকে না জানিয়ে কিছু নীরব হারালে/ জোছনার ¤øান আলোয় দুঃখ কি পাবে (কবিতা- চলে গেলে একদিন)?’ এখানে শুধু প্রেম না, প্রকৃতিও ছুঁয়েছে সময়কে। তাই তো বাবুল আনোয়ারের কবিতা পাঠকের এতটা কাছের, সমীহের। উপলব্ধির গভীরে দোলা দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়