সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল : শান্তিপূর্ণ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

আগের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

পরের সংবাদ

জন্মদিন > কবি এজাজ ইউসুফীর উত্তরাধুনিক জানালা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কখনো কখনো সময় লাগে সাহিত্যের সংসারে নানামুখী ভাবনা ও চিন্তা-চেতনা প্রকাশে ব্রতীদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগসূত্র তৈরি হতে। পরিচয় ও সম্পর্ক তৈরি হয় আমার সঙ্গে, লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক কবি এজাজ ইউসুফীর, যবে থেকে কবি এজাজ দৈনিক পূর্বকোণে যোগ দিয়ে নিজের দৃঢ় অবস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হয়। সময়টা সম্ভবত ছিল ১৯৯৭ সালের পরপরই। তখন দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার দশ-দশটি বছর অতিক্রম করেছে। সহ-সম্পাদকের পদে নিযুক্ত হয়ে ক্রমে ফিচার সম্পাদক পদে আসীন হয় এজাজ ইউসুফী। এই সময়ে মধুর হয়ে ওঠে আমাদের ভাব-ভাবনার ক্রম সম্পর্ক। তারপর তো বিরামহীনভাবে নিত্যদিনের সঙ্গ। সময়টা ছিল এজাজের দীর্ঘদিনের শ্রমের সাফল্যের কাহিনীতে ভরপুর। এজাজের ইউসুফী দক্ষতা আর দূরদর্শিতায় এই দৈনিকের শিল্প-সাহিত্যের পাতা রাজধানীর প্রথম কাতারের প্রায় সব দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতার প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে উঠেছিল। দায়িত্ব পালনে নিবেদিত, সপ্রাণ মানুষের জীবনে এমন কৃতীময় ঘটনা তো ঘটেই। ঘটেছিল দৈনিক পূর্বকোণের ক্ষেত্রেও, এজাজ ইউসুফীর বিভাগীয় দায়িত্বভার আন্তরিকভাবে সম্পন্ন ও সম্পাদনায়।
জীবিকার কারণে ফিচার বিভাগের বিষয়ভিত্তিক নানা ক্রোড়পত্র প্রকাশে কবি এজাজ ইউসুফী সর্বদা নিবেদিত থাকলেও স্বভাবতই এই কবিবন্ধু ছিল লিটল ম্যাগাজিন অন্তপ্রাণ। ‘লিরিক’ লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশেরও এজাজ ইউসুফী, যথাযথ দায়ভাগ স্বকীয় নিজস্বতায় স্বাভাবিক আন্তরিকতা দিয়ে সম্পাদন করেছে। এ সম্পাদনার কাজটি এজাজ সম্পন্ন করে গেছেন সমাজের পরিবর্তনের ধারা পর্যবেক্ষণে রেখে। আমার ধারণা, এজাজ ইউসুফী যদি দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত না হতো, তাহলে, তরুণতর এমন এক বন্ধুর সঙ্গে আমারও হয়তো কোনোদিন ব্যক্তিগত পর্যায়ের সম্পর্কসূত্রের বয়ন হতো না। এক্ষেত্রে আমাদের বয়সের দুস্তর দূরত্বটাই ছিল প্রধানতম বাধা। কিন্তু অন্তরাত্মার মিল যদি কোনো পর্যায়ে একই নীতি-নৈতিকতা ও ভাবনাচিন্তার ভুবনে ডুব দেয়, যদি আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতির ঐতিহ্যিক রূপায়ণের ঐক্যচিন্তা সমতা লাভ কোরে একই স্থানে নোঙর ফেলে, তখন আর প্রবীণ-নবীনের জন্ম তারিখের অতি-ফারাক মূল্য বহন করে না। এজাজ ও আমার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিস্তারে এই সাম্যই ভূমিকাবাহী হয়েছিল।
বিগত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুর দিকে একদা জন্ম নেয়া ‘লিরিক’ লিটল ম্যাগাজিনটি ছিল সর্বসাধারণের কাছে কাব্য ও সাহিত্যের ভুবনে নবীন আগন্তুক। তাদের ‘সবুজ আড্ডা’ নব কাব্য ভাবনায় ক্রমে হয়ে উঠতে চায় বিগত দশকের ধারাগুলোকে অতিক্রম করে ভিন্নতরো কণ্ঠস্বর নির্মাণে তৎপর হতে। কবি এজাজ ইউসুফী এ কণ্ঠস্বরের সংঘনায়ক। পরবর্তী সময়ে এ আড্ডার সদস্যবৃন্দের বেশ কয়েকজনই স্বনামধন্য কবি ও ঔপন্যাসিক রূপে দেশব্যাপী খ্যাতিবাহক হয়ে সমাদৃত হয়ে চলেছে। বিষয়টি এ নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনায় আসা প্রাসঙ্গিকতা রাখে না। এখানে আলোচ্য শুধু সবুজ আড্ডা ও লিরিক ম্যাগ সম্পাদক কবি এজাজ ইউসুফীর ভূমিকা নিয়ে।
আন্দোলন, সে যে কোনো ধরন কিংবা যে কোনো বিষয়েই হোক, হোক নানা ক্ষেত্রেরই, তার জন্য আবশ্যিক হয় কিছু দক্ষ সংগঠকের। এবং তার জন্য চাই তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতাও। সবুজ আড্ডাকে জমিয়ে তোলা, একই সঙ্গে লিরিক সাহিত্য ম্যাগের ধারাবাহিক প্রকাশনা সম্ভব করে তোলার কাজটি হয়েছে এজাজ ইউসুফীর মতো একজন সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন কবির সুদৃঢ় পরিচালনায়। এজাজ তাদের আড্ডার নিয়মিত সহযোগীদের অনেককেই এই কর্মযজ্ঞে প্রাণিত করতে পেরেছিল। ফলত, সুসংহত সংঘবদ্ধতায় পরবর্তী দশকে পৌঁছে সবুজ আড্ডার কাব্যকর্মীরা নতুন এক সাহিত্যধারার আন্দোলনের বাহক হতে পেরেছিল। যে আন্দোলনের নাম- ‘উত্তর আধুনিক সাহিত্য’। বাংলাদেশের উত্তর আধুনিক সাহিত্য আন্দোলন উদ্গাতা কবি এজাজ ইউসুফী। তার ভাষায়, তাকে এ সাহিত্যরসের সন্ধান যিনি দেন, তিনি হলেন সাহিত্য মহলের সর্বজনের প্রিয় এবং বহুমুখী পাঠবিদ্যায় অভিজ্ঞব্যক্তিত্ব একজন নিভৃতবিহারী সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ।
উত্তর-আধুনিক সাহিত্যচেতনার সহযাত্রী হয়ে ওঠে কবি এজাজ ইউসুফী ১৯৯০ সালের দিকে। তখন কোলকাতার ‘গাঙ্গেয় পত্রে’র কুশীলবদের সাহিত্য ভাবনা সত্তরের দশকের শেষের দিকের সূচনাপর্বে যেরূপ ছিল, তাকে দীর্ঘকালের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সুসংহত করতে সক্ষম হয়েছে। বলা হয়, উত্তর আধুনিকতা হলো, ঔপনিবেশিক শোষণকালের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকে বেরিয়ে আসা। এ আদর্শের অনুসারীরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব দেশের কৃষ্টি, ইতিহাস, সংস্কৃতি, তৃণমূলের লোকজীবন ও লোকসাহিত্যের নির্যাস আহরণে সমৃদ্ধতা অর্জন করবে। অতঃপর নিজেদের সামগ্রিক জীবনাচার ও আত্মপরিচয়ে যুগ-যুগান্তরের ঐতিহ্য, ইতিহাস আর কৃষ্টিকে সংযুক্ত করে তারা সৃষ্টিকর্মে নিজ নিজ দেশের সাহিত্য-শিল্পকে স্বকীয় ভাষ্যে দার্ঢ্য ও মেরুদণ্ডী করে তুলবে। আজকের যুগে দেশ দেশে জাদুবাস্তবতার সাহিত্যের জয়-জয়কার। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চায় দীর্ঘ ঔপনিবেশিকতাবাদের তরল খোয়ারির নেশা থেকে বেরিয়ে এসে, উত্তর-আধুনিকতাবাদের চাষাবাদ করে মুক্তচেতনায় ওই পঙ্গুত্ব থেকে ক্রমশ নিজেদের উত্তরণ ঘটাবে। শুধু বুঝতে হবে যে, উপনিবেশিক বন্ধনে আবর্তিত সব সাংস্কৃতিকচর্চাই চোরাবালির মাঝে আত্মসমর্পণ করে চলা। সব দেশেরই শোষিত মানুষ একালে ওই চোরাবালি থেকে তাদের উদ্ধার কামনা করে। চায়, তাদের কবি-শিল্পী ও কথাকারবৃন্দ নিজস্ব সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে বন্ধ্যত্বকালের ধারাবাহিকতাকে অতিক্রম করতে থাকবে।
১৯৮০-র দশকের দিকে কবিতাকর্মী কবি এজাজ ইউসুফীসহ ও তার সমসাময়িক কাব্যসাথীবৃন্দ মিলে ‘সবুজ আড্ডা’র সূচনা করে। সবুজ আড্ডা নামকরণের প্রধান কারণ সাহিত্যকর্মীদের মুখর সমাবেশটি হতো চকবাজার এলাকায় সবুজ হোটেল নামের একটি রেস্তোরাঁয়।
উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হলো, সাধারণত সাহিত্য, রাজনীতি ও শিল্পসংস্কৃতির আড্ডা জমে চা-মিষ্টি কিংবা অন্যান্য কিছু মুখরোচক জলখাবার সমৃদ্ধ দোকানে বা রেস্তোরাঁয়। রেস্তোরাঁ না হলে সাহিত্য সংস্কৃতির ও রাজনৈতিক আড্ডা সাধারণত জমেই না। কলকাতার বইপাড়া ও কলেজ স্ট্রিটের সেই ‘কফি হাউজ’ যত না খাবারের দোকান, তারও চেয়ে বেশি খ্যাত কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের বিচরণ ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডাবাজির জন্য। আমাদের রাজধানী, বাংলাদেশের ঢাকা মহানগরীর ‘বিউটি বোর্ডিং’ও একসময় এ দেশের কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডায় সরগরম থাকত। এখন আর নেই, সেই অতীত ঐতিহ্য। চট্টগ্রামে সাধুর দোকানও নেই, চিম্বুক রেস্তোরাঁও নেই। চৈতন্য গলির জলযোগের আড্ডাও এখন স্তব্ধ। এক কালের বোস ব্রাদার্সও নিস্তব্ধ। নেই, হাজারী গলির রাজনৈতিক আড্ডা হ্যাপিলজ। বর্তমানে কিছু কিছু বিশেষ আড্ডাও অবশ্য আছে। প্রধানত, সেগুলো হয় অভিজাত কিংবা সম্পন্ন গৃহস্থের ড্রয়িংরুমে, নানাপদের আহার্যের সমাহারে। আড্ডা বলি তাকে, যেখানে সর্বজনের মতবিনিময় ও তাদের আগমনকে স্বাগত জানানোর উৎসাহ উদারতা থাকে। সম্পন্ন মহলের ওই সব আড্ডা, তা কিন্তু নয়। ‘সবুজ আড্ডা’ সবুজ হোটেলের টেবিলে এখন টিমটিম করে জ্বলছে। কারণ, সময়ের পরিবর্তন। আর কবি এজাজ ইউসুফী আজকাল চট্টগ্রামে খুব বেশি থাকে না। অধিকাংশ সময়ই থাকে রাজধানী ঢাকায়। দৈনিক পূর্বকোণে কলমপেষার ফিচার বিভাগের মানোন্নয়নের দায়বদ্ধতা এখন আর তার নেই। এখন শুধু অখণ্ড অবসর। এখন কেবল অব্যাহত লেখালেখির কাল।

১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে আধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশিত হলে ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের অর্থকরী চাকরি ছেড়ে লেখালেখির নেশার প্রশ্রয়ের টানে সহকারী সম্পাদকের সম্মানজনক পদে যোগ দিই। আমন্ত্রণ পাই পত্রিকাটির মালিক খোদ ইউসুফ চৌধুরীর কাছ থেকে। এ আমন্ত্রণ কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করিনি। বলেছিলাম, আমন্ত্রণ সম্পাদকের কাছ থেকে পেলেই নিরাপদ। তাতে, যথাযথভাবে এই চাকরিতে টিকে থাকা সম্ভব হবে। তার জন্যই একটুখানি কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছিল বটে আমাকে। কারো কোনো সুপারিশ দরকার হয়নি। তৎকালীন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ওই পত্রিকায় আমাকে সংযুক্ত করার প্রস্তাবটি মাত্র পেশ করতে হয়েছে। এসব কথা বলার প্রয়োজন হলো এই জন্য যে, সেকালে দৈনিক পূর্বকোণে কাজ করতে পারাটা ছিল চট্টগ্রামের সাহিত্যসেবীদের একটি স্বপ্ন। কবি এজাজ ইউসুফীও এই দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় প্রবেশ করে। তবে সে সুযোগটা এজাজ পেয়েছে আপন যোগ্যতায়। দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার মালিক, যোগ্যতাসন্ধানী সেই ইউসুফ চৌধুরীরই সিদ্ধান্তে এবং অমিত পৃষ্ঠপোষকতায় এজাজ ইউসুফী আমাদের সহকর্মীতে পরিণত হয়।
সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণ মূলত কবিজনশাসিত খবরের কাগজই ছিল। এর আত্মপ্রকাশের পর থেকেই। তাই চট্টগ্রামের লেখক, কবি, কথাকার ও শিশুসাহিত্যিকদের দিবারাত্রির আড্ডা-সমাবেশ ঘটেতে থাকে এ পত্রিকায়। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন সদা-গম্ভীর শুভ্রকেশধারী দেশখ্যাত এক সাংবাদিক। তার নাম কেজি মুস্তাফা। পাকিস্তান আমলে ছিলেন সমগ্র পাকিস্তানের সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রগতিশীল প্রধান নেতা। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দিয়ে ইরাকে পাঠান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে বহুকাল তিনি ক্ষমতা দখলকারীদের অবরুদ্ধ বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেননি।
শিল্পসাহিত্যের কিছু সারস্বত তরুণ কর্মী দল আর অন্যান্য সহচরদের নিয়ে আপাত গম্ভীর সম্পাদক কেজি মুস্তাফা পত্রিকা সম্পাদনাকর্ম ভীষণভাবে উপভোগ করেছেন। মাঝে মাঝে ভাবি, কী এক ভালো লাগার দিন ছিল সেই সময়গুলোয়। এই দিনগুলোতে কবি এজাজ ইউসুফীও আমাদের সহকর্মী হলে কেজি মুস্তাফা নিশ্চয় তার পত্রিকার টিম নিয়ে আরও তৃপ্ত হতেন। কবি এজাজের কর্ম-কুশলতার মাঝে তিনি আস্থাভাজন ও নির্ভরযোগ্য একজন সাংবাদিককে খুঁজে পেতেন। যা তিনি সদা-সর্বদাই সেসব দিনে খোঁজ করে গেছেন।
উত্তর আধুনিকতাবাদী কবিতাসংসারে ব্যক্তিমানব কবি এজাজ ইউসুফীর খোলা জানালায় দাঁড়ালে, আমরা দেখব, মূলত কবিতাপ্রাণতায় মগ্ন থাকা সত্ত্বেও কবিতা গ্রন্থের চাইতে গদ্যগ্রন্থই প্রকাশিত হয়েছে তার বেশি। ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি কবি এজাজ ইউসুফীর জন্ম, চট্টগ্রাম শহরের লাভ লেনে। তাহলে কবি এখন বয়সের ঘর ৬৩ পেরিয়ে ৬৪-তে ব্যাটিং চালিয়ে যাচ্ছে। তারুণ্যের কালে এজাজ কিছুকাল ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড় রূপে পরিচিতি লাভ করেছিল। লিরিক লিটল ম্যাগটি সম্পাদনা করে চলেছে ১৯৮২ সাল থেকে। অর্থাৎ মাত্র ২২ বছর বয়সকালেই সম্পাদনার গুরুভার হাতে নেয়া শুরু। ‘স্বপ্নাদ্য মাদুলি’ একমাত্র কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলো ‘লিরিক’। রাশা প্রকাশনী থেকে প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘উত্তর আধুনিকতা : নতুন অন্বয়ের পরিপ্রেক্ষিত’ প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে। বাতিঘর ২০১৬ সালে প্রকাশ করে সম্পাদনা গ্রন্থ ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-লিরিখ বিশেষ সংখ্যা’। একই প্রতিষ্ঠান বাতিঘর ২০১৬ সালেই প্রকাশের দায়িত্ব নেয় ‘উত্তর আধুনিকতা : নতুন অন্বয়ের পরিপ্রেক্ষিত’ প্রবন্ধ গ্রন্থটির পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ। খড়িমাটি ২০১৭ সালে প্রকাশ করে প্রফুল্ল রায়ের উপন্যাস ‘রামচরিত্র’-এর নাট্যরূপ ‘রামচরিত’। ২০১৮ সালে খড়িমাটি থেকেই প্রকাশিত হয়, বিশিষ্ট প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাক্ষাৎকার ও বিবিধ’। সাক্ষাৎকার ভিত্তিক গদ্যগ্রন্থ ‘১০ গুণীর দীপ্র কথকতা’ প্রকাশিত হয় খড়িমাটি থেকেই ২০২৩ সালে। ২০২২ সালেই খড়িমাটি থেকে বের হয় সাক্ষাৎকার গ্রন্থ ‘আমার সকল কথা’।
কবির কাছে জানতে চেয়েছিলাম দীর্ঘকাল ধরে কবিতাচর্চা সত্ত্বেও, বিশেষত উত্তর আধুনিকতার ধারণা সমন্বিত কাব্যভাষায় নির্মিত তার কবিতার স্বাদ ‘স্বপ্নাদ্য মাদুলি’ ভিন্ন আর কোত্থাও পাঠকেরা পায় না। এ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শীঘ্রই কবির দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হতে যাচ্ছে, যাতে উত্তর আধুনিকতাচর্চার কাব্যকথা, বিষয় ভাবনা, নির্মাণ, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং আর্থ-সামাজিক চেতনাধৃত রাজনৈতিক চিন্তা ও আত্মপরিচয়ের ছায়াদৃশ্যের বিশদ বিচরণ প্রতিফলিত হবে।
আগেই বলেছি, কবি এজাজ ইউসুফী সংগঠনিক পারিপাট্যে অতীব সক্ষমতার সমন্বয় ঘটাতে চতুর। সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের গুণে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির পদও অলংকৃত করতে সক্ষম হয়। সাহিত্যচর্চায় উত্তর আধুনিক চিন্তার এই উদ্গাতা বহু পুরস্কারে ভূষিত। কবি বর্তমানে অবসর জীবনযাপনের সুযোগে রাজধানী ঢাকা আবিষ্কারে সচেষ্ট। ভ্রমণভীতি ও প্রবাসভীতি জয় করে চট্টগ্রাম থেকে দূরে-দূরান্তরে পরিক্রমার পর্যটক হয়ে পড়েছে এজাজ ইউসুফী।
লিরিক লিটল ম্যাগাজিনকে নির্ভর করে এক দঙ্গল কাব্যভাবুকদের নিয়ে উত্তর আধুনিকতাচর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন কবি এজাজ ইউসুফী। এদেশে উত্তর আধুনিক সাহিত্যচর্চাও প্রায় ৩৩ বছরের নদী পার হতে চলল। সবাই কি সংঘবদ্ধতায় থেকে কথা রাখতে পেরেছে? বিরাজমান পরিবেশ পরিস্থিতির পটচিত্র এমন প্রশ্নই করে। প্রার্থিত পরিবর্তন আনায় কতটুকু সমর্থ হয়েছে? এটিও একটি জিজ্ঞাসা। ভয়, মৌলবাদের কৃপাণ যে আমাদের সবার চেতনার স্তরে স্তরে আঘাত করে চলেছে!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়