বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন আর নেই

আগের সংবাদ

দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত : উত্তররাঞ্চলের কয়েক জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ > জনজীবন বিপর্যস্ত > বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই

পরের সংবাদ

বন্ধ হচ্ছে না কমলনগরের অবৈধ ইটভাটাগুলো

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার কামাল, কমলনগর (ল²ীপুর) থেকে : কমলনগরে কৃষিজমি দখল করে নির্মিত হচ্ছে একের পর এক অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের অনুমোদনহীন এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। হুমকির মুখে পরিবেশ। ভাটার কালো ধোঁয়ায় বিষাক্ত হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদ।
ইটভাটা নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই, ভূমি অফিস থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু কমলনগর উপজেলায় এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটাগুলো। এই নিয়ে ভোরের কাগজসহ একাধিক জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। কাঠ পুড়িয়ে ফসলি জমি কেটে চালানো হচ্ছে এসব অবৈধ ভাটা। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। যার কারনে দিনদিন এদের দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। 
কমলনগর উপজেলা সয়াবিন ও বাদামের শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। সবুজ বেষ্টনি ঘিরে একের পর এক গড়ে উঠেছে বাংলা ইটভাটা। এর মধ্যে শুধু চরকাদিরা ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে ৭টি ভাটা। এর মধ্যে বেশিরভাগ ভাটারই ছাড়পত্র বা অনুমোদন নেই।
অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটা তৈরিতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষকদের জমি দখলসহ চুক্তিভিত্তিক শিশুদের নিয়োগ ও সামান্য টাকায় শ্রমিক খাটিয়ে এমনকি বাংলা চিমনিতে লাকড়ি ব্যবহার করে ইট পোড়াচ্ছেন উপজেলার প্রায় ২০টি ভাটার মালিক। এতে ভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া আশপাশের পরিবেশকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। পাশাপাশি চলছে ফসলি জমির উপরের মাটি কাটার হিড়িক। ইটের মাটি সংগ্রহ করতে কৃষকদের লোভনীয় অফার দিয়ে তিন ও চার ফসলি জমির উর্বর অংশ কেটে নেয়ায় ভাটার আশপাশের ফসলি জমি কমে যাচ্ছে প্রতিবছর। ফলে ফসলের লক্ষ্যমাত্রা হুমকির মুখে পড়ে। এ ছাড়াও ইটভাটাগুলোকে ঘিরে বাড়ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় ইট তৈরিতে কৃষকের অভিযোগ আলোর মুখ দেখছে না। অভিযোগ করলেও, প্রশাসন আমলে নিচ্ছেনা। ইটভাটার কাজ শেষ হলে পরে তারা লোক দেখানো অভিযানে নামেন। স্থানীয়দের মতে, একটি প্রভাবশালী চক্র চাষাবাদের কথা বলে জমি লিজ নিয়ে ইটভাটা তৈরি করে। পরে লিজের মেয়াদ শেষ হলেও জমি মালিকদের জমি বুঝিয়ে না দিয়ে এভাবে অবৈধ দখল করে ইটভাটা তৈরি অব্যাহতভাবে চালাচ্ছেন তারা। আর প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ইটভাটাগুলোকে ঘিরে মাদক বেচাকেনা থাকলেও প্রতি বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব অবৈধ ইটভাটা।
উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাটাখালী এলাকা, চরকাদিরা ৪ নম্বর ওয়ার্ড, চরকাদিরা ইউনিয়নের চরঠিকা আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরে, চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু বাজারের উত্তরে, চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট-ইমান আলী মার্কেট সড়কের পাশে, হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া সবুজ কোম্পানি, করইতলা বাজারের পূর্ব পাশে মুসলিম পাড়া ও হাজিরহাট বাজারসংলগ্ন স্থানসহ প্রায় ২০টি ভাটা গড়ে উঠেছে এ উপজেলায়।
এলাকাবাসী এসব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে ল²ীপুর জেলা ও কমলনগর উপজেলা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 
চরকাদিরা ইউনিয়নের একটি ইটভাটার ম্যানেজার বলেন, এখানকার ইটভাটা থেকে স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ, থানা পুলিশকে মাসিক মাসোহার দিতে হয়। এছাড়া কিছু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক পরিচয়ধারী ব্যক্তিরাও মাসিক মাসোহারা নেন। যে কারণে অনুমোদন না থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না।
দুইজন ভাটার মালিক বলেন, কমলনগরে বেশিরভাগ ইটভাটার অনুমোদন নেই। কথা বললে সবারগুলোর কথা বলেন। আমরা জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভাটা চালই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান শুরু করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। যতবড় শক্তিশালী হোক না কেন, এ ব্যাপারে কোনো আপোস করবেন না বলে জানান ইউএনও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়