রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

সুন্দরবন : ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনা শুরু আজ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খুলনা প্রতিনিধি : সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে তৃতীয়বারের মতো বাঘ গণনার কাজ শুরু হচ্ছে । আজ রবিবার বনের কালাবগি এলাকায় বাঘ জরিপ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।
এবারই প্রথম বাঘের পাশাপাশি হরিণ ও শূকর গণনা করা হচ্ছে। এজন্য সুন্দরবনের ৬৬৫ স্পটে স্থাপন করা হচ্ছে জোড়া ক্যামেরা। বাঘ গণনার ফলাফল জানা যাবে ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ে।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’-এর আওতায় সাতক্ষীরা রেঞ্জে বনের মধ্যে বাঘের গতিবিধি ও পায়ের ছাপ লক্ষ্য করার কাজ করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ করতে যাচ্ছি। এর আগে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয়েছিল। গত দুবার খুলনা রেঞ্জ, সাতক্ষীরা রেঞ্জ এবং শরণখোলা রেঞ্জ জরিপ এলাকার আওতাভুক্ত ছিল। এবার আমরা চাঁদপাই রেঞ্জকেও অর্ন্তভুক্ত করতে যাচ্ছি। ফলে সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের আওতায় থাকবে।
তিনি আরো বলেন, সুন্দরবন অনেক বড় এলাকা। এক বছরের মধ্যে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে এই কাজ করা সম্ভব না। আমাদের যে ৪৫০টি ক্যামেরা রয়েছে সেগুলো দিয়ে মার্চের মধ্যে জরিপ কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। শুষ্ক মৌসুমে ক্যামেরাগুলো বসাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এই কাজগুলো করতে পারব না। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত খুলনা রেঞ্জ এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ করব। আর নভেম্বর-ডিসেম্বরে চাঁদপাই রেঞ্জ এবং শরণখোলা রেঞ্জে কাজ করব।
তিনি জানান, সব মিলিয়ে ৬৬৫টি গ্রিডে জোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ২০০টি, খুলনা রেঞ্জে ১৪০টি, শরণখোলা রেঞ্জে ১৮০টি, চাঁদপাই রেঞ্জে ১৪৫টি। প্রতিটি গ্রিডে এক জোড়া ক্যামেরা বসানো হবে। প্রতি গ্রিডে ৪০ দিন ক্যামেরা থাকবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর ক্যামেরার ব্যাটারি ও এসডি কার্ড পরিবর্তন করতে হবে।
ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে আমরা ছবি তুলব। তারপর অ্যানালাইসিস করব। এরপরই বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। ফলে ২০২৪ সালের জুন-জুলাই মাসে গিয়ে বাঘের সংখ্যা ঘোষণা করা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বাঘ-মানুষের দ্ব›দ্ব। এই দ্ব›দ্ব নিরসন করতে পারলে আমরা বাঘ সংরক্ষণ করতে পারব। সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্ব›দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য রয়েছে। ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিম, কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ এবং ভিলেজ কনজারভেশন ফোরামের সবাইকে নিয়ে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করব। বাঘ যখন গ্রামে চলে আসবে, সেই সময়ে বাঘকে কীভাবে নিরাপদে সুন্দরবনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় সেই ব্যাপারে কাজ করব। এছাড়া সুন্দরবনের ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগে। ওই এলাকা কিন্তু বাঘের আবাসস্থল। ওই আগুন নির্বাপণের জন্য সেখানে কিছু টাওয়ার স্থাপন করা হবে। সেজন্য ফায়ার ফাইটিং যন্ত্র কেনা হবে। এই দুটি হচ্ছে মূল বিষয়। আর গত ৫ বছর ধরে সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস হয়েছে, তাতে দেখা যায় সুন্দরবন দুদিন পানির নিচে থাকে। এ কারণে অভয়ারণ্য এলাকাতে ১২টি কিল্লা স্থাপন করা হবে। এখন আমরা দেখি সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসে বাঘ, হরিণ পুকুরের পাশে অবস্থান নেয়। ওই সময়ে বাঘ, হরিণ কিল্লাতে আশ্রয় নেবে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিতে আমরা চেষ্টা করছি বাঘ এবং বাঘের শিকার করা প্রাণী কীভাবে আরও দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা যায়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে হরিণ, শূকরের সংখ্যাও নির্ণয় করার চেষ্টা করব।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বাঘ শুমারি খাতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে বাঘ গণনার কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। পরে অক্টোবরে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ছাড় দেয় পরিকল্পনা কমিশন। অবশেষে ১ জানুয়ারি থেকে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ শুমারির কাজ শুরু হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়