রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা : বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চরম দুর্ভোগে পৌরবাসী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পৌরবাসী। জানা গেছে, ভয়াবহ আর্সেনিক ও আয়রনের পর এবার মিঠা পানির বদলে উঠছে লবণাক্ত ও উষ্ণ পানি। দিনদিন ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে নেমে যাচ্ছে পানির স্তুর। এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় বিশুদ্ধ পানির জন্য ছুটছেন সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই বিশুদ্ধ পানি কিনে খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার জোড়বাগান, রেহাইচর, চাঁদলাই, শিবতলা, রাজারামপুর ও নামোশংকরবাটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠা পানির অঞ্চলে বেশ কিছুদিন ধরে উঠছে লবণাক্ত আর উষ্ণ পানি। এলাকার বাসিন্দাদের বাসাবাড়ি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবারই ভোগান্তির কারণ এখন এই খাবার পানি। নামোশংকরবাটি মহল্লার নূর বানু বলেন, পৌরসভা থেকে আমরা যে পানিটা পাচ্ছি। এ পানি অত্যন্ত লবণাক্ত আর উষ্ণ। খাওয়া যায় না। অন্য এলাকা থেকে পানি এনে খেতে হয়। প্রায় এক বছর থেকে আমাদের পানি নিয়ে এই ভোগান্তি সইতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সব ভোগান্তি মেনে নেয়া যায়। কিন্তু পানির সমস্যা যে কতটা কষ্টের তা না দেখলে বুঝবেন না।
শিবতলা মহল্লার বাসিন্দা ইয়াসমিন বলেন, টিউবওয়েল থেকে আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত লালচে পানি ওঠে। আর পৌরসভার লাইনে যে পানি আমাদের দেয়া হয়, সে পানি লবণাক্ত ও উষ্ণ। কোনোটাই ব্যবহার যোগ্য নয়। ফলে অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়। রেহাইচর এলাকার শিউলি বেগম বলেন, নলকূপের পানিতে আয়রন ও আর্সেনিক আছে। আর পৌরসভার পানি লবণাক্ত ও দুর্গন্ধে ভরা। এই পানি খেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। সাদা কাপড় পরিষ্কার করলে লাল হয়ে যায়। কাপড় আর ব্যবহার করা যায় না। নলকূপের পানিতে আয়রন আর আর্সেনিকযুক্ত। এ পানি খেলে আমাদের হাত ফুলে যায়। এ ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই। শহরের এক চা বিক্রেতা বলেন, চায়ের দোকানে অনেক পানির দরকার হয়। কিন্তু বিশুদ্ধ পানির বড় সংকট। যথেষ্ট পানি না থাকায় ক্রেতাদের পানি কিনে খাওয়াতে হয়। এতে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪১ হাজার লিটার। চাহিদার বিপরীতে একটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ২৫টি ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে এক কোটি ৯৩ লাখ ৪১ হাজার লিটার সরবরাহ করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অতিম কুমার সরকার বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপের ব্যবহার আর চরাঞ্চলে পদ্মা, মহানন্দা ও পূণর্ভবা নদীর পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় পরিবেশগত এই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এখন অনেক গভীরে নলকূপ বসানোর পরও পানি উষ্ণ এবং লবণাক্ত উঠছে। আর উপরের স্তরে আর্সেনিক ও আয়রনের সমস্যা, যা জটিল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান হোসেন বলেন, পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর এখানে যে লবণাক্ত পানি, এটাও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আগামীতে আমরা কীভাবে জনসাধারণকে পানি সরবরাহ করব তা নিয়েও উদ্বেগে রয়েছি। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান বলেন, এখানে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বিষয়টি সিভিল সার্জন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। তারা বিভিন্ন পরীক্ষা করছে। আর পৌরবাসীকে পানির সমস্যা থেকে বাঁচাতে আমরা কাজ করছি।
সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ বলেন, ইতোমধ্যে পানির নমুনা সংগ্রহ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। নমুনায় সোডিয়াম ক্লোরাইড যে লবণ তা উচ্চমাত্রায় পাওয়া গেছে। এখানে আয়রনের মাত্রাও সাধারণের চেয়ে বাড়তি। এ পানি ব্যবহার করলে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। ফলে পৌরসভাবাসীকে এ পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়