রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

ঐতিহ্য হারাচ্ছে রায়গঞ্জের প্রাচীন জয়সাগর দীঘি : উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নেই উদ্যোগ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. পারভেজ সরকার, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) থেকে : রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছিতে অবস্থিত জয়সাগর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত এ দীঘিটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ঐতিহাসিক ও প্রাচীন জয়সাগর দীঘিটি বেশ বিশালাকার। প্রাচীনকালে দীঘিটির দৈর্ঘ্য ছিল আধা মাইল, প্রস্থ ছিল আধা মাইলের কিছু কম। এর আয়তন প্রায় ৫৮ একর ছিল। এই দীঘিটি নিয়ে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। সেন বংশীয় রাজা অচ্যুত সেন গৌড়াধিপতি ফিরোজ শাহর করদ রাজা ছিলেন। তার রাজধানী ছিল কমলাপুর। জানা যায়, ফিরোজ শাহের পুত্র বাহাদুর শাহ অচ্যুত সেন রাজার কন্যা অপরূপ সুন্দরী ভদ্রাবতীকে দেখে মুগ্ধ হন। তিনি তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাজা অচ্যুত সেন সম্মত না হওয়ায় বাহাদুর শাহ কমলাপুর আক্রমণ করে ভদ্রাবতীকে অপহরণ করে নিমগাছিতে নিয়ে যান। রাজা অচ্যুত সেন তার সৈন্যবাহিনীসহ বাহাদুর শাহকে আক্রমণ করেন। নিমগাছি প্রান্তরে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। বাহাদুর শাহের মুষ্টিমেয় সৈন্য সেনরাজের বিরাট সৈন্যবাহিনীর কাছে পরাজিত হয় (১৫৩২-৩৪ খ্রি.)। এ বিজয় গৌরবের স্মৃতি হিসেবে এবং পরকালের কল্যাণের জন্য তিনি নিমগাছির কাছে ‘জয়সাগারথ নামে এক দীঘি খনন করান।
যুদ্ধজয়ের কারণেই দীঘিটির নাম হয় জয়সাগর। চার পাড়ে ২৮টি বাধা ঘাট দিয়ে জয়সাগর দীঘি তৈরি করা হলেও, বর্তমানে এ ঘাটের কোনো চিহ্ন নেই। বিশাল দীঘিটির ভিতরে রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি দীঘি। অতীতের জয়সাগরের জৌলুস আগের মতো আর নেই। সংস্কারের অভাবে দীঘির পাড় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দীঘি এলাকায় অবাধে গবাদি পশু চড়ানোয় এবং যত্রতত্র পশুর মলত্যাগে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ঐতিহ্য রক্ষায় দীঘিটির সংস্কার বা উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় দর্শনার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এদিক থেকে। জয়সাগরের পূর্ব পাশে দর্শনার্থীদের বসার জন্য সিমেন্টের চেয়ার এবং টয়লেট রয়েছে। কিন্তু অযতেœর কারণে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় দিন দিন ঐতিহ্য হারাচ্ছে প্রাচীন এ দর্শনীয় স্থান।
বিগত বছরগুলোতে শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি জয়সাগরে ভিড় করত। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় ও শিকারিদের উৎপাতে অতিথি পাখিরা আর আসে না এখানে। এক সময় হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকত। কয়েক বছর ধরে সেখানে বিরানভাব বিরাজ করছে।
জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত এ দীঘিটির উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কয়েকশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দীঘিটির সংস্কার ও উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলে জয়সাগর তার হারানো জৌলুস ফিরে পেয়ে হয়ে উঠতে পারে জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়