ঢাকা মহানগর আ.লীগ : দক্ষিণে সমাবেশ উত্তরে বিক্ষোভ আজ

আগের সংবাদ

১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন : ঢাকার গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ঘোষণা > ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণমিছিলের কর্মসূচি

পরের সংবাদ

সাধারণ রঙ্গালয়ের ১৫০ বছর : ঢাকা ও কলকাতায় উৎসব

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেড়শ বছর আগে ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর, দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক অভিনয় এবং টিকেট কেটে থিয়েটার দেখার প্রচলন শুরু। সেটিই সাধারণ রঙ্গালয়ের সূচনাক্ষণ বলে চিহ্নিত নাট্যশালার ইতিহাসে। এর প্রভাব প্রবলভাবে পড়ে পরবর্তী শতকের বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনে। যাত্রা, পাঁচালি, কবিগান, হাফ-আখড়াইতে অভ্যস্ত বাঙালি ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় ধারার বিনোদনেও ঝুঁকে যায়। তৎকালীন কলকাতার চিৎপুরে ‘ঘড়িওয়ালা বাড়ি’ নামে বিখ্যাত ছিল মধুসূদন সান্যালের বাড়ি। সে বাড়ির উঠোন মাসিক চল্লিশ টাকায় ভাড়া নিয়ে শুরু হয় ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’। সেই ঐতিহাসিক দিনের সার্ধশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা ও কলকাতায় পৃথক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন দুই দেশের নাট্যকর্মীরা। কলকাতায় বঙ্গ নাট্য সংহতি বছরব্যাপী আয়োজন সাজিয়েছে। অপরদিকে ঢাকায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘ঢাকা থিয়েটার’ ও ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’। বাংলাদেশের নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, “৭ ডিসেম্বর ১৮৭২, বাংলা নগরনাট্যের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। এদিন দ্বারোদঘাটন হয়েছিল সাধারণ রঙ্গালয়ের, আর দর্শনীর বিনিময়ে শুরু হয়েছিল বাঙালির মঞ্চাভিনয়। আমাদের নাট্যশিল্পীদের জন্য এটি আনন্দের দিন। কারণ ১৫০ বছর আগে ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়েই সাধারণ রঙ্গালয়ে জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত হয়েছিল। ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর নীল দর্পণ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে সাধারণের জন্য নাট্য মঞ্চায়নের সূচনা হয়। তাই দিনটিকে উদযাপন করতে ভারত ও বাংলাদেশে নানা আয়োজন করা হয়েছে। কলকাতায় নাট্যোৎসবে আমার নির্দেশনায় ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়ন হয়েছে। এটি ভালো লাগার মতো ঘটনা।” বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতার তপন থিয়েটারে বাংলাদেশের নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে বঙ্গ নাট্য সংহতির বছরব্যাপী আয়োজনের। দীনবন্ধু মিত্রের লেখা ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়েই ১৫০ বছর আগে দ্বারোদঘাটন হয়েছিল সাধারণ রঙ্গালয়ের। তপন থিয়েটার মিলনায়তনে ‘নীল দর্পণ’ মঞ্চস্থ করে ঢাকার রেপার্টরি নাট্যদল ‘বাঙলা থিয়েটার’। এদিন মিলনায়তনে উপচেপড়া দর্শক নাটকটি উপভোগ করেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ‘নীল দর্পণ’ নাটকটি ঢাকায় মঞ্চায়ন হবে বলেও জানান মামুনুর রশীদ। নাটক মঞ্চায়নের পর উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এই নাটক যদি আপনাদের হৃদয়কে এতটুকু স্পর্শ করে থাকে, তাহলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় ধরনের সুযোগ ছিল। আমাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে বঙ্গ নাট্য সংহতি। তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ বঙ্গ নাট্য সংহতির বছরব্যাপী আয়োজনে ১৭টি পুরনো নাটকের নব মঞ্চায়ন, পঞ্চরঙ্গ নাটিকা, আলোচনা সভা, গবেষণা গ্রন্থ, স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। কলকাতায় উদযাপনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়, যা বাগবাজারে গিরিশচন্দ্র ঘোষের বাড়ি থেকে মিনার্ভা থিয়েটার এবং রাসবিহারী মোড়ের তপন থিয়েটারে গিয়ে শেষ হয়। সেই শোভাযাত্রায় অংশ নেন বাংলাদেশের রামেন্দু মজুমদার ও মামুনুর রশীদ। এছাড়া কলকাতার নাট্যব্যক্তিত্ব দেবাশিস মজুমদার, বিভাস চক্রবর্তী, চন্দন সেন, অংশুমান ভৌমিকসহ অনেকেই অংশ নিয়েছেন। শোভাযাত্রার একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে কলকাতার নাট্য সমালোচক অংশুমান ভৌমিক লিখেছেন, ‘আমরা ভাষায় এক, ভালোবাসায় এক। আজ বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড়শ বছর পেরোনোর উৎসবের সূচনা শোভাযাত্রায় শোভাবাজারের পথে শামিল বাংলা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের পাঁচ মুখ- রামেন্দু মজুমদার, দেবাশিস মজুমদার, বিভাস চক্রবর্তী, চন্দন সেন, মামুনুর রশীদ। এমন বিজ্ঞাপন ইতিহাসের পাতায় একবারই হয়।’ অপরদিকে ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতির আইভি রহমান মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘ঢাকা থিয়েটার’ ও ‘বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার’। ‘ন্যাশনাল থিয়েটার : ইতিহাসের পুনর্ভাষ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। আলোচক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক পবিত্র সরকার, বাংলাদেশের নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সাধনা আহমেদ। পাঠ-অভিনয় ও আলোচনা করেন শিমুল ইউসুফ। আলোচনার পূর্বে রতন সিদ্দিকী রচিত ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

:: মাহফুজ সুমন

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়