স্বাস্থ্যমন্ত্রী : বিদেশফেরত কর্মীদের এইচআইভি পরীক্ষা করতে হবে

আগের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রাম : নিñিদ্র নিরাপত্তা, সাজসজ্জা ও প্রচারণা সম্পন্ন

পরের সংবাদ

‘এক পয়সা মুনাফা পাই না’

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গতকাল শুক্রবার তার নতুন ছবি ‘খেলা যখন’ মুক্তি পেয়েছে। তার আগে ভারতীয় গণমাধ্যমের কাছে অকপট পরিচালক অরিন্দম শীল। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য

‘খেলা যখন’ আপনার অন্যান্য থ্রিলারের চেয়ে কতটা আলাদা?
বাংলায় থ্রিলার মানেই গোয়েন্দা গল্প। সেটার জন্য যদি কাউকে দোষারোপ করতে হয়, তা হলে সেটা আমাকেই করতে হবে। এই বলে আমি গোয়েন্দা জঁরকে ছোট করতে চাইছি না। কিন্তু এটা মানতেই হবে যে, গোয়েন্দা জঁরটা থ্রিলার জঁরের একটা অংশ মাত্র। এই যে অন্য রকম থ্রিলার ছবি, যেটা আমরা ইউরোপীয় বা দক্ষিণ এশীয় ছবিতে দেখছি সেটা কোথাও বাংলা ছবিতে দেখতে পাচ্ছি না। ‘খেলা যখন’-এর আইডিয়াটা ছিল এমন একটা ছবি তৈরি করা, যেটার শুধু ভাষাটাই বাংলা। সমগ্র অভিজ্ঞতাটা আন্তর্জাতিক। বাংলা ছবির বাজেট আগামী কয়েক বছরে বিশাল কিছু বদলাবে বলে মনে হচ্ছে না। এই বাজেটেই কাজ হবে। যত দিন না একটা বিশাল ‘ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক’ আসে, তত দিন এটাই চলবে। তাই ‘কম বাজেটে কাজ করি’ বলে দুঃখ না করে আমরা যদি এগিয়ে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের ঠেলি আরও ভালো কাজ করার জন্য- সেই ভাবনা থেকেই ‘খেলা যখন’।

‘ধনঞ্জয়’র পর মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে এই ছবি তো আপনার দ্বিতীয় কাজ?
মিমিকে ‘ধনঞ্জয়’-এ ব্যবহার করার পর মনে হয়েছিল যে, ওর মতো তথাকথিত বাণিজ্যিক অভিনেতাদের মধ্যে অনেক বেশি ক্ষমতা আছে। যে জন্য আমি কোয়েল মল্লিককেও নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, এই চরিত্রে মিমিকে মানাবে। চরিত্রটার দুটো দিক আছে। মিমির সেই স্মার্টনেস আছে। আমরা অনেক ওয়ার্কশপ আর ট্রেনিং করেছি। মিমি খুবই নিষ্ঠা ভরে কাজটা করেছে। আপনি ব্যোমকেশ করেছেন, শবর করেছেন, মিতিন মাসি করেছেন। সবই গোয়েন্দা গল্প।

এগুলোকে আপনি আলাদা করেন কী করে?
এখন ফেলুদাও করছি। ছবির বিষয়বস্তু মাথায় রাখি। এটা মানতে হবে যে, প্রত্যেকটা গল্প বা ফ্র্যাঞ্চাইজির একটা নিজস্বতা আছে। আমি সেই নিজস্বতাগুলোকে খুব জোরদার করে তুলে ধরি। শবরের যে ‘র’ ব্যাপারটা বা ব্যোমকেশের যে ব্যোমকেশ-অজিত-সত্যবতীর সম্পর্ক, তার মাউন্টিং বা লার্জার-দ্যান-লাইফ ব্যাপার- এর প্রত্যেকটা করার সময় আমি পুরোপুরি সেটাতেই নিজেকে নিমজ্জিত রাখি। অন্য কিছু ভাবি না। অনেক সময় যেটা হয়, আমার চিত্রনাট্যকার ব্যোমকেশের সঙ্গে ফেলুদার সংলাপ গুলিয়ে ফেলে। সেটা সম্বন্ধে আমি খুব সাবধানী। আমি আর পদ্ম (পদ্মনাভ দাশগুপ্ত) খুব সাবধান থাকি যে, এরা কে কীভাবে কথা বলে, কেমন আচার-আচরণ করে। একসঙ্গে কাজ করতে করতে আমাদের একটা বোঝাপড়া হয়ে গেছে। আর আমি সব সময় চেষ্টা করি নতুন কিছু তুলে আনতে। যা দর্শককে আগে দিয়ে এসেছি সেটার পুনরাবৃত্তি আমি কখনো করি না।

আপনি তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রীর এত কাছের লোক। পার্টিতে যোগ দেননি কেন?
আমি তৃণমূলের কাছের লোক নই। পার্টির সঙ্গে আমার কোনো সংযোগ নেই। আমি পার্টির কোনো কাজ করি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করি। ওর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে আমার ওকে ভালো লাগা। কোথাও মনে হয়েছিল যে, ভদ্রমহিলার একটা জেনুইনিটি আছে। সেই জেনুইনিটি দিয়ে উনি কোনো ভালো কাজ করতে চান। এ কথা ঠিক যে আমি বামপন্থি চিন্তাধারার মানুষ ছিলাম। তার শিকড় আমার মধ্যে থেকে কখনো উড়ে যেতে পারে না। সেটা একটা শিক্ষা। আমি সেই শিক্ষায় বড় হয়েছি। বামপন্থির প্রতি আমার বিরাগ নেই। আমার বিরাগ বামফ্রন্টের প্রতি। ৩৪ বছরের শাসন কালের পর তারা মানুষকে ভুলে গেল। সেই শিকড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু গভীর যোগ তৈরি করেছেন। যখন ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়, তখন আমার মনে হয়েছিল ইনিও কমিউনিস্ট। কমিউনিস্ট হওয়ার জন্য কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হতে হয় না। আমার মতে, বিবেকানন্দও বিরাট সমাজতান্ত্রিক। উনি তো কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না। তো ওই জায়গা থেকে মমতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক বলুন, আর যোগাযোগ বলুন। উনি মানুষকে সম্মান করতে জানেন। সেই জায়গা থেকে উনি কিছু কাজের ভার দিয়েছেন আমাকে— যার মধ্যে অন্যতম হল কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবের সিনিয়র অ্যাডভাইজর করেছেন আমাকে। ওর আগের আমল থেকেই আমি এই উৎসবে কাজ করেছি। বুদ্ধবাবুর (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) সময়ও আমি চলচ্চিত্র উৎসবে কাজ করেছি। এর জন্য আমি কোনো টাকা-পয়সা পাই না। আমি তা চাইও না। আমি এই সরকার বা পার্টি থেকে এক পয়সা মুনাফা পাই না। আমার এই পার্টির সঙ্গে, বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটা সৌজন্যতা আছে। সেটাকে আমি কোনোভাবেই অপরাধ বলে মনে করি না। আমি বিশ্বাস করি যে, যে কাজটা আমি সবচেয়ে ভালো পারি, সেটা হলো চলচ্চিত্র। এ বছর আমার এই জগতে ৩৫ বছর পূর্ণ হলো। নির্দেশক হিসেবে ১০ বছর হলো। এই জায়গাটা তো সহজে অর্জিত হয়নি। আমি অভিনেতা থেকে যখন নির্দেশক হলাম, সেটা আমার ইন্ডাস্ট্রির অনেকে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু সেই নির্দেশক ১০ বছরের মধ্যে ১৮টা ছবি করে ফেলেছে। যার প্রায় সব ক’টা সুপারহিট অথবা ব্লকবাস্টার। তার সঙ্গে সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। তাকে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সেরা পরিচালক বলে মানা হচ্ছে এখন। এটা একটা বিশাল প্রাপ্তি। এতটা ভালোবাসা আমার রাজনীতির প্রতি নেই। অতটা শ্রমও আমি ওখানে দিতে পারব না। আরেকটা ব্যাপার হলো, তথাকথিতভাবে আমার একটা জায়গা আছে। সেই জায়গাটা কি আমি রাজনীতিতে যোগ দিলে পাব? কোনো দিন পাব না। আমি আমার পেশায় সেরার জায়গায় আছি। তার জন্য কখনো কোনো আপস করব না। গত নির্বাচনে আমাকে শুধু রাজ্য থেকে নয়, কেন্দ্রীয় সরকার থেকেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল দাঁড়ানোর জন্য। আমি তাদেরকে বার বার একটা কথা বলেছি। আমি মানুষের জন্য বা সমাজের জন্য আমার জায়গা থেকে কোনো কাজ যদি করতে পারি, যদি আপনাদের মনে হয়, তা হলে সেই কাজ আমি করব। কিন্তু আমি রাজনীতিক হয়ে পার্টি বা সরকারের কাজ করব না। করিও না।

সৃজিত মুখোপাধ্যায় চা-পান আসরে ডাকলে যাবেন?
অবশ্যই, কেন যাব না? সৃজিতের সঙ্গে তো অন্তত আমার কোনো সমস্যা নেই। দেখা হলে যথেষ্ট ভালো আড্ডা হয়। ও এখন ব্যস্ত মুম্বই-টুম্বই নিয়ে। এসভিএফ-এ বসে তো আমরা দু’জনে চা খাই।

আপনার এত হিট ছবি, কিন্তু সে রকম পুরস্কার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত থাকলেন কেন?
মানুষের স্বীকৃতি আমার কাছে সবচেয়ে বড়। সেই স্বীকৃতি আমি যা পেয়েছি বা পাচ্ছি, সেটা বোধহয় খুব কম নির্দেশক পেয়েছে। আমি কখনো ট্রোলড হই না, জানেন তো? আপনি আমার সোশ্যাল হ্যান্ডেল চেক করতে পারেন। আমার প্রচুর অনুরাগী আছেন, যারা আমার প্রভূত সম্মান করেন। এটা একটা বিশাল পাওয়া। এখন পর্যন্ত কোনো বড় পুরস্কার আমি পাইনি। আমার প্রথম ছবি একটি বিরাট পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। কিন্তু আমি হেরে গিয়েছিলাম অন্য একজনের কাছে। আমি জানি, আমার পুরস্কার ভাগ্য খারাপ। তবে আমার একটা থিওরি আছে। সেটা হল, সবার যা পাওয়ার পেয়ে নিক। আমার সমসাময়িকরা। আমার জুনিয়ররা। তার পর তো আমি আছিই।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়