প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর

আগের সংবাদ

১৭২ দেশে শ্রমবাজার : রেমিট্যান্স কমছে যে কারণে

পরের সংবাদ

মেঘনার ভাঙনে নিঃস্ব ঢালচরের বাসিন্দারা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ আর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটিসহ সব সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব সাহেব আলি। এখন আর কোথাও গিয়ে জমি কেনার সামর্থ্য নেই তার। আক্ষেপ করে জানান, চরফ্যাশন উপজেলার ভাঙনকবলিত বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন ঢালচরের বাসিন্দা বৃদ্ধ সাহেদ আলি মিয়া। এমন আক্ষেপ শুধু সাহেদ আলীর নয়, এই ইউনিয়নের আরো একাধিক বাসিন্দা এই ভাঙনে নিঃস্ব।
ঢালচরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার ভাঙনে ভিটেহারাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে চরের বাসিন্দারা দিশাহারা। বারবার সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধির কাছে গেলেও মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই হচ্ছে না তাদের। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, সরকারি চাল, গম, আটা, শাড়ি বা লুঙ্গি কিছুই দরকার নেই; শুধু মাথা গোঁজার এক টুকরা ভূমি চান তারা। সাহেদ আলি আরো বলেন, ৪৫ বছর ধরে ঢালচরে বসবাস করছি। ব্রিটিশ আমল থেকে এখানের মৎস্যঘাটে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে মাছের ব্যবসা করেছেন। আগুনে পুড়লে ভিটেমাটি থাকে, নদীর ভাঙনে আমাদের তাও নেই। আমার ঘরবাড়ি চারবার ভেঙেছে। এখন কোথায় যাব? তাই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি এক টুকরা জমি পাওয়ার আশায়। ঢালচরের আরেক বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। এখান থেকে চলে গেলে কী করব। নদীতে বারবার ভাঙলেও ঢালচরেই থাকতে হবে। ঢালচরের যুবক মো. মিরাজ বলেন, ঢালচরেই জন্ম। শৈশব, কৈশোর কাটিয়ে যখন সংসারের বোঝা ঘাড়ে চেপেছে, তখন নদী ভাঙনসহ নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যায়। পৈতৃকভাবে পাওয়া শেষ সম্পদটুকু নদীতে যাওয়ার পর আর কোনো জায়গা নেই আশ্রয় নেয়ার মতো। তাসনুর বেগম বলেন, আমরা এক টুকরা জমি চাই মাথা গোঁজার জন্য। মেঘনার ভাঙন আর নোনা পানির জন্য ফসল ফলাতেও পারি না। গেল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় আমাদের এই চরে ৩ ফুটের বেশি উঁচুতে পানি উঠেছিল। গৃহপালিত হাঁস-মুরগি পানিতে ভাসিয়ে নিয়েছিল। জেলে আবুল হোসেন বলেন, ভাঙনের কারণে এখন আর মৎস্যঘাট নেই। এখানে আগের মতো মাছের ব্যবসা হয় না। মাছ পেলে চরফ্যাশনের মৎস্যঘাটে নিয়ে যাই। আমাদের এখানে বন্যার সময় ট্রলার নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার মতো খাল নেই। একটি খাল খনন ও একটি ঘাট হলে আমাদের শত শত ট্রলার বন্যার সময় নিরাপদে বেঁধে রাখা যেত। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ড ভেঙে গেছে। এখানকার বাসিন্দারা ভাঙনের শিকার হয়ে মূল ভূখণ্ড চরফ্যাশনের বিভিন্ন এলাকায় বসত করছে। আমি পাশের আরেকটি চর তারুয়া এলাকায় আমার ইউনিয়নের ভূমিহীনদের জমি বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য আবেদন করেছি। তবে বনবিভাগ তা দিচ্ছে না। ঢালচরের মানুষ ভাঙন ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছে। বাজারটিও এখন নদীর প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ে ভেঙে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী ঢালচরের আয়তন ছিল ৩১ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার। ভাঙনের ফলে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪ ভাগের দুই ভাগে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নদীভাঙন রোধে উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি মাসিক উন্নয়ন সভায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। এলাকাবাসীর একটাই আবেদন তারুয়ারচর ও পূর্ব ঢালচরে ভূমিহীন পরিবারগুলোকে জমি বন্দোবস্ত দিলে তারা মাথা গোঁজার সুযোগ পাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান রাহুল বলেন, ভাঙনের শিকার ভূমিহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বন ও পরিবেশ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি উত্থাপিত করা হবে। এছাড়া একাধিক পরিবারকে উপজেলার বিভিন্ন আবাসনে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়