সাজ্জাদুল তুহিন, মান্দা (নওগাঁ) থেকে : মান্দায় বাড়তি দামে সার বিক্রিতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক। রবি মৌসুমের সরিষার ফসলের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। সারের সংকট দেখিয়ে চড়া দামে সার বিক্রি করছেন কৃষি অফিসের বিসিআইসির অনুমোদিত রাসায়নিক সার ডিলাররা। এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কৃষি কর্মকর্তার। ডিলার পয়েন্টে কিছু সার কৃষকদের দেয়া হলেও প্রতি বস্তায় ১০০-১৫০ টাকা বেশি নিচ্ছেন তারা। ডিলার সিøপে সরকার নির্ধারিত মূল্য লিখে সার দিলেও হাতে দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, ডিলার মালিকরা রাতারাতি খুচরা দোকানদারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন সার। ফলে ডিলার পয়েন্টে গিয়ে সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। প্রতিনিয়ত কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হয়ে উচ্চমূল্যে সার ক্রয় করছেন রবি ফসল সরিষার জন্য। এতে লাভবান হচ্ছেন ডিলার মালিক ও অসাধু ব্যবসায়ীরা।
আরো অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ সুবিধার জন্য ডিলার পয়েন্টে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের সামনে বেশি দামে সার বিক্রি হলেও দেখে না দেখার ভান করছেন তারা। উপজেলাজুড়ে চলছে সার কালোবাজারির মহোৎসব। যেন দেখার কেউ নেই। এছাড়া এক ইউনিয়নের ডিলার অন্য ইউনিয়নের লোকজনের কাছে সার বিক্রি করে মোটা অঙ্কের ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। ডিলার পয়েন্টে সার না থাকলেও স্থানীয় দোকানগুলোতে বেশি দামে হরহামেশায় মিলছে সার।
সরজমিন মান্দা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, ডিলার পয়েন্ট থেকে বেশি দামে সার কিনছে কৃষক। মাস শুরুর কয়েকদিন যেতেই অনেক ডিলার পয়েন্ট একদম ফাঁকা দেখা যায়। তবে সাব-ডিলারদের চিত্র আলাদা। যথেষ্ট পরিমাণ সার মজুত তাদের গোডাউনে। পাশেই মেসার্স বাপ্পী সরকার ডিলার পয়েন্ট অথচ মাস শুরুর কয়েকদিন দিনের মধ্যেই সার শেষ। একই ইউনিয়নে সেসার্স সইদুল ইসলাম ট্রের্ডাস সেখানেও নেই নির্ধারিত মূল্যের সার। ডিলারদের কাছে সার না পেয়ে কৃষক সাব-ডিলার অথবা দোকানদারের কাছ থেকে বেশি দামে সার ক্রয় করছে। আবার অনেক ডিলারের কাছে সার থাকলেও তারা বলছে রাজশাহী থেকে বেশি মূল্য দিয়ে সার কেনার কারণে বেশি দামে তা বিক্রি করতে হচ্ছে।
মান্দা ইউনিয়নের ডিলার পয়েন্টে কৃষক আজিজার রহমান বলেন, পাশের উপজেলার গাবতলি বাজারের ডিলার পয়েন্টে সারের দাম কম অথচ এখানে ৫০-১০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। দোকানে দাম আরো বেশি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলার এক ডিলারের ম্যানেজার বলেন, এসব সার কারসাজিতে কৃষি অফিস জড়িত। ডিলারের লাভের ২ পার্সেন্ট কমিশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দিতে হয়। গোপনে এসব টাকা না নিলে লাভের অংশ বেশি থাকবে। টাকা না দিলে আরো সমস্যা, সব সময় ছোট ছোট ভুল ধরে অফিস। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ডিলার পয়েন্ট পরিদর্শন করছি। কোনো ডিলার পয়েন্টে সার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি। মাঠ পর্যায়ে অফিসাররা কাজ করছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথাই বলবে সেগুলো নেগেটিভ না দেখে পজিটিভ ভাবুন।
যে অভিযোগগুলো উঠেছে তা সঠিক নয়।
উল্লেখ্য, সার কারসাজির কারণে নওগাঁ জেলার মান্দা, মহাদেবপুর, বদলগাছী, নিয়ামতপুর উপজেলার চারজন কৃষি কর্মকর্তাকে একযোগে বদলির আদেশ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিনকে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক হিসেবে বদলির আদেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বদলি আদেশের কয়েক দিনের মাথায় অজ্ঞাত কারণে সে আদেশ আবার স্থগিত হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।