হাতিরঝিল লেক থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

এলসি-এনডোর্সমেন্টে বিড়ম্বনা : ডলার সংকটে মূলধনি যন্ত্রপাতি-কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত > বিদেশ যাত্রায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

পরের সংবাদ

ভোরের হাওয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমি আর আমার মা দাঁড়িয়ে আছি মৌচাক মোড়ে। একটা রিকশা পেলেই উঠে বসব। ধানমন্ডি যাব ছোট খালার বাড়ি। শহরে যানজট নেই। এত ভোরে যানজন থাকে না। ফজরের নামাজ পড়েই মা আমাকে ডেকে তুলেছেন জলদি তৈরি হতে। সকাল সকাল বের না হলে দেরি হবে। কোনো তাড়া নেই। মায়ের জ্যামে আটকে থাকা পছন্দ নয়। শুধু এ কারণেই কোথাও যেতে হলে তাকে নিয়ে খুব ভোরেই রওনা দিতে হয়।
একটা খালি রিকশায় উঠে বসলাম দুজনেই। মা চাদর জড়িয়ে নিয়েছেন। কার্তিক মাসের ভোর। একটু যেন হিম লাগছে। আমার টি-শার্ট গায়ে। হাতের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে শীতল বাতাসে।
ফাঁকা রাস্তা পেয়ে রিকশাওয়ালা দ্রুত টেনে চলে এলো। লিফটে চড়ে ছয় তলায় উঠে এলাম। এত সকালে খালার বাড়িতে কোনোদিন আসিনি। মা এসেছেন নিশ্চয়ই। বাবা বেঁচে থাকতে কত জায়গায় দুজনে মিলে ভোরেই চলে গিয়েছেন। দরজা খুললেন খালা নিজেই। আর কেউ জাগেনি। অসুস্থ মানুষ। নিজে উঠে এসেছেন। মা বললেন, তোর সঙ্গে তোর যে ভাশুরের মেয়েটি থাকে সে কই?
খালা বললেন, আছে। লুবণার বিয়ে ঠিক হয়েছে। গ্রাম থেকে ওর মা-বাবা এসেছে।
বসার ঘর পেরিয়ে আমি আর মা গেলাম খালার পিছু পিছু। এই বাড়িতে লোকজন কত সময় পর্যন্ত ঘুমায় জানা নেই। খালার ঘরে এসে বিছানায় আরাম করে শরীর এলিয়ে দিলাম। ভোরের দিকে ঘুমটা আমার গাঢ় হয়, শুধু মায়ের ডাকাডাকিতে কাঁচা ঘুম ছেড়ে সঙ্গে আসতে বাধ্য হয়েছি।
খালা বললেন, ডাকি ওদের।
মা বাধা দিলেন। বললেন, ওদের পরে ডাক। আগে আমি শুনি ঘটনা কী ঘটেছে।
খালা বলতে আরম্ভ করলেন। মা শুনে যাচ্ছেন। বেখেয়ালি মনে শুনতে শুনতে কখন বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। আমি বিম্মিত, হতবাক। নিজের নামটি কানে আসা মাত্রই লাফিয়ে উঠলাম যেন!
খালার বর্ণনা এ রকম- কাল ছিল খালার ভাশুরের মেয়ে লুবণার বিয়ে। ঘরোয়া বিয়ে বলেই আত্মীয়স্বজন তেমন কাউকেই ডাকা হয়নি, শুধু মেয়েপক্ষের লোকজন উপস্থিত। সকাল থেকেই লুবণার মেজাজ খিটখিটে গেছে। বিয়ের দিন কোনো মেয়ের মেজাজ খিটখিটে থাকে না, লুবণার মেজাজ খিটখিটে। তার দুই বছরের বড় ভাই ‘কিছু লাগবে কিনা’ জিজ্ঞেস করতে এসে ধমক খেয়েছে। জীবনে প্রথমবার বড় ভাইকে বকেছে। সবাই জানে মেজাজ খিটখিটের কারণে ওর এমন আচরণ প্রকাশ পায়। লুবণার মা এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে লুবু? হাবিবকে বকেছিস কেন?
লুবণা বিরক্ত হয়ে বলল, মা তুমি যাও তো। আমার সামনে থেকে সরো। না হলে তোমাকেও বকব।
মা চলে গিয়ে এলেন লুবণার বাবা। অবাক ব্যাপার, বাবাকে দেখা মাত্রই লুবণা নিজেকে সংযত রাখতে পারল না। বলে উঠল, তুমি আমার সামনে থেকে যাও। কাছে আসবে না। তোমাদের সবাইকে আমার অসহ্য লাগছে।
ঘটনা কী হচ্ছে লুবণা কাউকে কিছু বলছে না। তার হঠাৎ উ™£ান্ত আচরণ বাড়ির সবাইকে বিচলিত করছে। তার মামা, খালা এসেও ঘটনা উদ্ধার করতে পারলেন না। লোকজন যারা লুবণার ঘরে ছিল এক এক করে ঘর থেকে সরে পড়ল। ঘরে থাকল শুধু লুবণা আর ছোট খালা। লুবণা খালাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। খালা জিজ্ঞেস করলেন, এই বিয়েতে তোর আপত্তি থাকলে আমাকে বল।
লুবণা চোখ মুছতে মুছতে বলল, ছোট চাচি! আমি শামিম ভাইকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারব না।
নিজের নাম কানে আসা মাত্রই হতচকিত হয়ে গেলাম। বাকি ঘটনা পরে শুনব। মাঝপথেই খালাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন শামিম?
খালা আমার দিকে কঠিন কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন, থাক আর ভান করতে হবে না। সবার বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। তলে তলে কতদূর পৌঁছে গেছিস যে, আমার ভাশুরের মেয়ে এখন তোকে ছাড়া কোনো ছেলেকেই বিয়ে করবে না।
আমি বোয়াল মাছের মতোন ঢোক গিললাম মনের অজান্তেই। আসলে কী, লুবণা নামের কোনো মেয়ের সঙ্গে আমার ভাব-ভালোবাসা কিছুই ঘটেনি। খালার একজন ভাশুরের মেয়ে কয়েক মাস হলো গ্রাম থেকে এসেছে জেনেছি। তাকে দেখেছিও দুই-একবার। কখনো সামনাসামনি কথা হয়নি। যতদূর দেখেছি খুবই লাজুক গোছের মেয়ে। এমন মেয়ের সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আমার নিজেরই পেস্টিজে লাগে। অথচ কী কাণ্ড, মেয়েটি আমাকেই ভালোবেসে বসে আছে আর আমি তার কিছুই জানি না।
মা আমার দিকে পিট পিট চোখ করে তাকালেন। তার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমি বলতে যাচ্ছিলাম, ‘খালা আমার সঙ্গে লুবণার কোনোদিন কথাও হয়নি’… কিন্তু খালা আমাকে পাত্তা না দিয়ে ডাকলেন সবাইকে। বসার ঘরে সবাইকে জড়ো করলেন। লুবণাও ভীত পায়ে এসে বসল। এই প্রথম মেয়েটিকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম। স্বাভাবিক সুন্দর মেয়ে। সে আমার দিকে একবারই শুধু করুণ চোখে তাকাল। মনে মনে ঠিক করলাম, এই মেয়েটি একতরফা ভালোবেসেছে আমাকে। কেউ রাজি না থাক, তাকেই আমি বিয়ে করব।
জুয়েল আশরাফ
বাহ্রা চরকান্দা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়