কাগজ প্রতিবেদক : বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করছে একটি আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র। হ্যাক করা সেসব ক্রেডিট কার্ডের তথ্য আবার বিক্রি হয় ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মে’। বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি চক্র হাজার হাজার ডলার দিয়ে সেখান থেকে হ্যাক করা কার্ডের যাবতীয় তথ্য কিনছে। পরে কার্ডের সেসব তথ্য দিয়ে দেশে বসেই আন্তর্জাতিক নামি-দামি অনলাইন কেনাকাটার সাইটে নানা ধরনের পণ্যের অর্ডার করছে।
পণ্যটি হাতে পাওয়ার পর আবার বিভিন্ন ক্রেতার কাছে তা কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে প্রকৃত কার্ডধারীর কার্ড থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে ব্যাংক। এভাবে আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্রের সঙ্গে মিলে প্রতারণা করছে বাংলাদেশি কয়েকটি চক্র।
শুধু পণ্যই নয়, বিমানের টিকেট কাটা থেকে শুরু করে আরো বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও নিচ্ছে দেশি চক্রটি। ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগের পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক জানতে পেরেছে যে এতে বাংলাদেশের প্রতারক চক্রের হাত রয়েছে। পরে বিষয়টি নজরে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি)। তদন্ত শুরু করে ডিবির একটি টিম। বাংলাদেশি চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজও করছে ডিবির টিম।
ডিবি সূত্র জানায়, রাশিয়ান চক্রটি মূলত আমেরিকান অঞ্চলের ব্যাংকের গ্রাহকদের কার্ড হ্যাক করছে। চক্রটির কারণে বিদেশে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। কারণ ভুক্তভোগী গ্রাহকরা যখন দেখছে তাদের কার্ড হ্যাক হয়েছে। কার্ডে যে পরিমাণ টাকা ছিল, তা নেই। তখনই তারা ব্যাংকে গিয়ে অভিযোগ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও অভিযোগ যাচ্ছে। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দেখতে পায়, বাংলাদেশি কতিপয় লোক এই কাজ করছে। হ্যাক হওয়া ব্যক্তির ক্রেডিট কার্ডের যাবতীয় তথ্য ও কার্ড দিয়ে বাংলাদেশি চক্র পণ্য কিনছে। ডিবি বলছে, তারা এখন পর্যন্ত একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করলেই এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে , এ ধরনের আরো চক্র রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছেন, বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের কার্ড হ্যাক করছে রাশিয়ায় অবস্থান করা কিছু হ্যাকার। তারপর ডলারের বিনিময়ে কার্ডের যাবতীয় তথ্য ও নিয়ন্ত্রণ বিক্রি করে দেয়। তবে যে কেউ চাইলে এই কার্ড কিনতে পারবে না। কেবলমাত্র অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে ওই হ্যাকারদের সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ এবং আস্থাভাজনরাই কার্ডের তথ্য কিনতে পারে। কিন্তু তথ্য কেনার পর তারা সেই কার্ডে থাকা টাকা দেশে খরচ করতে পারে না। কার্ডের টাকা নিজ একাউন্টে নেয়া কিংবা উত্তোলন করাও সম্ভব নয়। তাই তারা আন্তর্জাতিক অনলাইন শপিং সাইট দারাজ, অ্যামাজন, আলীবাবা, আলী এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করে দামি পণ্যের অর্ডার করে সেই টাকা খরচ করে। আর পণ্য পাওয়ার পর তা আবার অন্য কোনো অনলাইন শপিংয়ে বা ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়।
ডিবির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এখন পর্যন্ত শত শত পণ্য বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। এতে লেনদেন হয়েছে কোটি কোটি টাকা। দেশের কিছু অনলাইন শপিং সাইটের সঙ্গে এই চক্রটির যোগাযোগ রয়েছে। ডিবি উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আকরামুল হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশি একটি চক্র প্রতারণা করছে, বিষয়টি নজরে আসছে। এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।