পাচার অর্থ ফেরাতে আট দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক

আগের সংবাদ

টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর : দেশীয় গ্যাস-কয়লা উত্তোলন, তেলের মজুত ও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানো, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি

পরের সংবাদ

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ৪২ ভাগ শিশুর রক্তে অক্সিজেন ঘাটতি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। দেশে প্রতি বছর ২৫ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়। দরিদ্র পরিবার এবং শহরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। মারাত্মক নিউমোনিয়ায় ভোগা শিশুদের ৪২ ভাগের ক্ষেত্রেই দেখা দেয় রক্তে অক্সিজেন ঘাটতি। যাকে বলা হয় হাইপক্সেমিয়া। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত যেসব শিশুর হাইপক্সেমিয়া রয়েছে তাদের প্রাণহানির সংখ্যাও বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিন্তু হাইপক্সেমিয়া নেই তাদের তুলনায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত যেসব শিশুর হাইপক্সেমিয়া আছে তাদের মৃত্যু ৫ গুণ বেশি হয়ে থাকে।
মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তা বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসের প্রাক্কালে গতকাল বুধবার এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইসিডিডিআর,বি। দুপুরে প্রতিষ্ঠানের সেমিনার রুমে এই অনুষ্ঠানে দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির নিউট্রিশন এন্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি এবং প্রতিষ্ঠানের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএইডের মনিটরিং, ইভালুয়েশন এন্ড লিনিং এডভাইজার বিভাগের সিনিয়র গবেষক ড. কান্তা জামিল, আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র ডিরেক্টর ডা. শামস এল আরেফিন প্রমুখ।
অক্সিজেনের গুরুত্ব তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ২১ শতাংশ। আমরা যে বাতাসে শ্বাস নেই তাতে আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু যাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ এর চেয়ে কম তারা হাইপক্সেমিয়া সমস্যা দেখা দেয়। তখন ওই ব্যক্তির জন্য বাড়তি অক্সিজেন দিতে হয়।
ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারাত্মক অক্সিজেন ঘাটতিতে ভোগেন। যার মধ্যে ৩ কোটি ২০ লাখই শিশু। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অবকাঠামো অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে নিউমোনিয়া নিয়ে আসা শিশুর প্রায় ৪২ শতাংশই সংকটে ভোগেন। যাদের হাইপক্সেমিয়া থাকে। হাইপক্সেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য চিকিৎসা হিসেবে অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন। এ জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়া প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা যায়, মাতৃদুগ্ধ পান, সার্বিক পুষ্টির বিষয়ে জোর দিলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। এছাড়া মেডিকেল অক্সিজেন নিরাপত্তাসহ দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্বল্পমূল্যে অক্সিজেন উদ্ভাবন জরুরি বলেও মত দেন এই গবেষক।
বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ এর তথ্য তুলে ধরে ডা. মোহাম্মাদ জোবায়ের চিশতি বলেন, বাংলাদেশে এক-চতুর্থাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৩টি অক্সিজেন উৎসের যে কোনো একটি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ ভাগে কনসেনট্রেটর, মাত্র ২১ ভাগের ফ্লো মিটারসহ অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া মাত্র ৬ ভাগের অক্সিজেন সরবরাহ বা বিতরণের ব্যবস্থা এবং পালস অক্সিমিটার ছিল। ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে পরিচালিত আইসিডিডিআর,বি’র নেতৃত্বাধীন আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৬০টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৭২ ভাগে হাসপাতালে পালস অক্সিমেট্রি যন্ত্রটি রয়েছে এবং মাত্র ৭ ভাগের আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইসিস (রক্তে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ, অক্সিজেনের ঘনত্ব, এসিড-ক্ষারের ব্যালান্স ইত্যাদি পরিমাপ করার পরীক্ষা) করার ব্যবস্থা রয়েছে। করোনা মহামারির সময় বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে, পালস অক্সিমিটার এবং বাবল সি-প্যাপের মতো স্বল্প মূল্যের উদ্ভাবনমূলক বিষয়টি গ্রহণ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৪ সালে মেডিকেল অক্সিজেন সিকিউরিটিবিষয়ক দ্য ল্যানসেট গেøাবাল হেলথ কমিশনে সহসভাপতিত্ব করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই কমিশনে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ডা. শামস এল আরেফিন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়