পাচার অর্থ ফেরাতে আট দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক

আগের সংবাদ

টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর : দেশীয় গ্যাস-কয়লা উত্তোলন, তেলের মজুত ও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানো, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি

পরের সংবাদ

কর্ণফুলীর তীরে ড্রাইডকের নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী ড্রাইডক লিমিটেডসহ আশপাশের সব স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সাতদিনের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীসহ অন্যান্য নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও জলাধার এর দখল ও দূষণ’ সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা সভা শেষে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, কর্ণফুলী ড্রাইডকের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম করা হবে। সেই টিম নির্ধারণ করবে সেখানে কী হয়েছে এবং কীভাবে নদী উদ্ধার করা হবে। ততদিন কাজ বন্ধ থাকবে। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কর্ণফুলী নদী শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয় সারাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ নদী বাংলাদেশের লাইফ লাইন। এই নদী দিয়ে দেশের ৯৫ শতাংশ আমদানি-রফতানি পরিচালিত হয়। কর্ণফুলী নদীর প্রবাহ বা নাব্যতা যদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার সকালে আনোয়ারার বদলপুরা এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির পাশে কর্ণফুলী ড্রাইডকসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আমরা সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি এই প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি নদী দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে। সেগুলো অবমুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, কর্ণফুলী ড্রাইডকের প্রায় সব অংশই নদীর মধ্যে অবস্থিত। এই ফিশারিঘাট (চাক্তাই ভেড়া মার্কেটের বিপরীতে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত নতুন ফিশারিঘাট), এখানে যে বরফকল সবই নদীর ভেতর ছিল। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এখানে অনেক সরকারি সংস্থা আছে। সিটি করপোরেশন, সিডিএ, বন্দর, জেলা প্রশাসনের চোখের সামনে একটা নদী কী করে দখল করে ফেলল। এটা মেনে নেয়া যায় না।
প্রসঙ্গত চট্টগ্রামের আনোয়ারার বদলাপুর মৌজায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া এবং ব্যক্তি মালিকানা থেকে কেনা ৩০ একর জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে কর্ণফুলী ড্রাইডক।
কর্ণফুলী নদী রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি : এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন। গতকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে টানা ৮ ঘণ্টা নদীর মাঝখানে অনশন করে দুই শতাধিক সাম্পান মাঝি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর তীরে টিকে থাকা আড়াই শতাধিক বনজ ও ওষুধি গাছ সংরক্ষণ করার দাবি জানান তারা। নইলে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আদালতে যাওয়ারও হুমকি দেন তারা।
নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ২ হাজার ১৮১ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও তা সাড়ে তিন বছরেও কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। আমরা কি ধরে নেব সরকারের চেয়ে জেলা প্রশাসনের চেয়ে দখলদাররা শক্তিশালী। জেলা প্রশাসন দখলদারদের শক্তি মোকাবেলা করতে অপারগ। আর পনেরদিন অপেক্ষা করেই কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আপনাদের বাধ্য করার যে প্রক্রিয়া সেটাই সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, হালদার মোহনা থেকে বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকায় তিন হাজারের বেশি অবৈধ দখলদার কর্ণফুলী নদী দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা এই দখলের সঙ্গে জড়িত। এসব অসাধু চক্র প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করার কারণেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের উপদেষ্টা মেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নোমান আহমদ সিদ্দিকি, সংগঠনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, পরিবেশ সংগঠন গ্রিন ফিঙ্গার্সের কো ফাউন্ডার আবু সুফিয়ান রাশেদ, রিতু ফারাবি, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি জাফর আহমদ, সহসভাপতি লোকমান দয়াল প্রমুখ।
এছাড়া কর্ণফুলী নদী রক্ষায় অবিলম্বে ৮ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েস। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে এসব প্রস্তাব জানান সংগঠনের সভাপতি শরীফ চৌহান। তার মধ্যে আছে- কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সিএস অনুসারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মতে নদীর জমি দখলমুক্ত করা, আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রণীত অবৈধ স্থাপনার তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ এবং তালিকা অনুসারে উচ্ছেদ কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে শেষ করা, নদীর তলদেশ ভরাট হওয়া বন্ধে নিয়মিত ড্রেজিং ও সংযুক্ত খালসমূহে পানি প্রবাহ অবাধ করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ। নদীর দূষণ ঠেকাতে দুপাড়ে অবস্থিত শিল্প কারখানাগুলোতে বাধ্যতামূলক ইটিপি স্থাপন এবং ইটিপি কার্যকর আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মিত পরিদর্শনের দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রস্তাব করা হয় পয়োবর্জ্য দূষণ ঠেকাতে মহানগরীর খালগুলোর মুখে পরিশোধনে প্ল্যান্ট স্থাপন এবং নদীতে চলাচলকারী লাইটারসহ ছোট নৌযানের জ্বালানি ও বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। সার্বিকভাবে কর্ণফুলী নদীকে দখলমুক্ত রাখতে উদ্ধার হওয়া নদীর জমি পুনর্দখল ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নদীর জমিতে দেয়া অবৈধ লিজ অবিলম্বে বাতিল করার দাবিও জানানো হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়