পাচার অর্থ ফেরাতে আট দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক

আগের সংবাদ

টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর : দেশীয় গ্যাস-কয়লা উত্তোলন, তেলের মজুত ও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানো, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি

পরের সংবাদ

কপ টুয়েন্টি সেভেন : দরিদ্র দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে চাওয়াই কি অগ্রগতি!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : মিসরের শারম আল-শেখে গত সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া ‘কপ টুয়েন্টি সেভেন’ নামের জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন এতে আগত প্রতিনিধিরা। উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে, এটি এক ‘ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেবার প্রশ্নটি অনেক দিন ধরেই একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে ছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেকদিন ধরেই বলে আসছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাদের দায় খুবই সামান্য – কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুঁকিতে আছে, এবং সে কারণেই তারা জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণাম মোকাবিলার জন্য আরো বেশি অর্থ চায়।
কিন্তু ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো এতদিন এই দায়দায়িত্ব¡ এবং ক্ষতিপূরণের প্রশ্নটি আলোচনার বাইরে রাখতে চাইছিল – যা এবার পাল্টে গেছে। সম্মেলনের আগে দুদিন ধরে আলোচনার পর এ বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্বাগতিক মিসর বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রশ্নে দেশগুলোকে এখন ‘অঙ্গীকার-প্রতিশ্রæতির পর্ব শেষ করে বাস্তবায়নের যুগের সূচনা করতে হবে।’ সে ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলার খরচ মেটানোর বিষয়টি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
এতদিন ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের আলোচনায় বড় বিষয় হয়েছিল কীভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানো যায়, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা যায়।
তবে তৃতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে, এই সমস্যার প্রধান কারণই তো শিল্পোন্নত দেশগুলো – কিন্তু এর পরিণামে যে দেশগুলোকে সবচেয়ে প্রত্যক্ষভাবে ভুগতে হবে তারা হচ্ছে দরিদ্রতর উন্নয়নশীল দেশগুলো। তাই শিল্পোন্নত দেশগুলোর কি উচিত নয় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এর মোকাবিলার জন্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করা? যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি মাত্রায় এগুলোর শিকার হচ্ছে তারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছে এর মোকাবিলায় তাদের অর্থ দরকার। আর এটাকেই বলা হচ্ছে ‘লস এন্ড ড্যামেজ।’
ধনী দেশগুলো ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য দরিদ্রতর দেশগুলোকে বছরে ১০০০০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে।
মূলত দুটি ক্ষেত্রে এ সহায়তা দেয়া হবে। একটি হলো মিটিগেশন বা গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানো, আরেকটি হচ্ছে এডাপ্টেশন বা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য নেয়া পদক্ষেপ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপদাপন্ন ৫৫টি দেশে ইতোমধ্যেই (২০০০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত) যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ হচ্ছে ৫০,০০০ কোটি ডলারেরও বেশি। আগামী দশক এ ক্ষতি আরো ৫০,০০০ কোটি ডলার বেড়ে যাবে।
দরিদ্র এবং কম শিল্পোন্নত দেশগুলো বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়ার কারণে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, তারা ক্ষতি কাটাতে গিয়ে আরো বেশি করে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে।
ধনী দেশগুলো ২০০৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় ১০,০০০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছিল – যা ২০২০ সালের মধ্যে দেবার কথা।
সেই বছর শেষ নাগাদ ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলার দেয়া হয়, তবে ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবার কথা। গত বছর ‘গøাসগো ফিনান্সিয়াল এলায়েন্স ফর নেট জিরো’ নামে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। এই এজেণ্ডায় ১৩০ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ সমাবেশ করার জন্য ৫৫০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অঙ্গীকার করেছে। গত বছরের গøাসগোতে কপ টুয়েন্টি সিক্স সম্মেলনের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ‘জি সেভেন্টি-সেভেন প্লাস চায় না’ উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল যেন ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১.০ ট্রিলিয়ান ডলারের ব্যবস্থা করা হয়। সে বছর কপ টুয়েন্টি সিক্সের সময় ‘লস এন্ড ড্যামেজে’র জন্য স্কটল্যান্ড ১০ লাখ ডলারের কিছু বেশি অর্থ দেবার অঙ্গীকার করে। ডেনমার্ক বলেছে – তারা ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেবে। গত সপ্তাহে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এ জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
এছাড়া শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জোট ভি-টুয়েন্টি লস এন্ড ড্যামেজের অর্থায়ন করতে আংশিক বীমাভিত্তিক একটি উদ্যোগ নিতে রাজি হয়েছে। তবে এওসিস এর বিরোধিতা করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত খাতে অর্থ দেবার ব্যাপারে অতীতে নানা ধরনের সমস্যা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিকতার কারণে এ ধরনের অর্থ ছাড় করতে প্রচুর সময় লেগে যায়। তাছাড়া গ্রহীতা দেশগুলোতে সুশাসনের দুর্বলতা এবং দুর্নীতির মতো সমস্যাও রয়েছে।
তবে এসব কারণ দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ সহায়তার প্রশ্নটি বার বার ঠেলে একপাশে সরিয়ে দেয়া হবে – দরিদ্র দেশগুলো এটা মানতে চায় না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়