গ্রেপ্তার ৭ : ইশরাকসহ ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

আগের সংবাদ

শর্তগুলো কঠিন হলেও যৌক্তিক : আইএমএফের শর্ত মেনেই ঋণ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের, ব্যাংক ঋণের সুদ বাড়ানোর প্রস্তাবে ব্যবসায়ীদের আপত্তি

পরের সংবাদ

অনন্ত ছোঁয়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একটু আড়াল হলো পারুল। কারণ দ্রুত একটি মোটরসাইকেল পুকুরের পাশের রাস্তাটি দিয়ে বেরিয়ে গেল। তাতে দুজন লোক বসা আছে। একজন মাঝারি বয়সের, অন্যজন যুবক বয়সি এবং দেখতেও বেশ সুদর্শন বলে মনে হলো…। অবশ্য তাদেরকে সে আগে কখনো এই পাড়ায় দেখেছে বলে মনে হয় না। কারো বাড়ির অতিথি হবে হয়তো। যাই হোক এটা তার ভাবার বিষয় নয় এবং ভাবতেও চায় না। তাই চুপ করে পুকুর ঘাটলায় ডুমুর গাছের পাশে বসে পড়ল পারুল।
শরতের প্রখর রৌদ্রে যদিও বেশ তাপ রয়েছে, তবে মিষ্টতার আঁচটাও এই মুহূর্তে চুটিয়ে অনুভব করতে পারছে সে। কতগুলো পাতিহাঁস হেলেদুলে সাঁতার কাটছে, আবার কখনো ডুব দিয়ে শামুক খুঁটছে। সেই ঢেউতে ডুমুরের ফলগুলো পানিতে নৌকার মতো দুলছে আর দুলছে। সেই সঙ্গে দুলছে লাল শাপলার ছড়িয়ে থাকা পাতাগুলো। এভাবে দুপুরে বসে থাকাটা কিন্তু পারুলের রোজকার অভ্যাস। তবে কাল আর এখানে বসা হবে না। কারণ কালতো তার বিয়ে।
হঠাৎ পারুল বলে বাড়ির ভেতর থেকে ডাক পড়ল। ‘জি মা আসছি’ বলেই উঠতে হলো তাকে। ভেতরে যেতেই চুপিচুপি মা বলল, ‘তোর শ্বশুর বাড়ির থেকে লোক এসেছে। এখনতো কারেন্ট নেই তাই ওরা উঠোনেই বসেছে। যা ওদের জন্য শরবতটা নিয়ে যা।’ ‘আমি পারব না’, বলেই ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে লজ্জায় পালাল পারুল। যে মেয়েটি পারিবারিক শাসনের মধ্যে এতদিন বড় হয়েছে, নিজের চেহারাটাকে পরপুরুষের কাছ থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছে- তার জন্য ব্যাপারটা একটু কঠিনই বটে। তবে শেষ পর্যন্ত মা এবং ভাবির পীড়াপীড়িতে যেতেই হলো পারুলকে।
লাল সেলোয়ার-কামিজ পরে দুই গøাস রুহ্ আফজা হাতে তাদের সামনে এলো পারুল। দুজনই তাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। এ যেন ঘর থেকে বেরিয়ে এলো কোনো লাল পরি! কোনো সাজগোজ নেই, কোনো পারফিউম নেই, তবে হ্যাঁ উঠোনের বকুলের ম-ম গন্ধে পুরো বাড়িটা যেন ভরে গেছে। এবার একটু তাদের দিকে তাকাল পারুল। সে কী! এই দুজনকেই তো সে একটু আগে দেখেছে…।
এবার নীরবতার বরফ ভেঙে মধ্য বয়সি লোকটি পরিচয় দিল, ‘আমি বরের দুলাভাই আর এ বরের খালাতো ভাই লেবু মিয়া।’ লেবু মিয়া ভাবি বলে সম্বোধন করে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সালাম দিতে একটুও ভুল করল না। তাদের দুজনকে বসতে বলল পারুল এবং হাতে শরবত তুলে দিল। পারুলকেও পাশের চেয়ারটায় বসতে বলল লেবু মিয়া। কিন্তু পারুল বলল, ‘না আমি এখানে দাঁড়াই আপনারা বরং বসুন।’
লেবু মিয়া বলতে লাগল, ‘ভাবি আমি আসলে একটি চাকরি করি। আমার ছুটি শেষ। কাল আমাকে কর্মস্থলে ফিরতে হবে, আপনাদের বিয়েতে আসতে পারব না। তাই ভাবলাম আজ অন্তত আপনাকে এক নজর দেখে যাই। মাশাআল্লাহ, ভাবি আপনি খুব সুন্দর! নিশ্চয়ই আমার ভাইটা খুব ভাগ্যবান! দোয়া করি আপনারা অনেক সুখে থাকবেন।’
তারপর একঢোকে শরবতটা শেষ করে লেবুু মিয়া আল্লাহর কাছে শুকুরিয়া আদায় করে বলল, ‘এমনটাই চেয়েছিলাম।’ এরপর পারুলের দিকে গøাসটা বাড়িয়ে দিল। পারুল গøাসটা ধরলও। তবে লেবু মিয়া আর গøাসটি ছাড়ছে না। সে পারুলের দিকে একভাবে তাকিয়েই রইল! পারুল সরে যেতে চাইল। কিন্তু লেবু মিয়া ‘ভাবি দাঁড়ান, পিঁপড়া’ বলে পারুলের হাত চেপে ধরে গালটা হাত দিয়ে ডলে দিয়ে বলল, ‘আমার ভাবিকে কামড়াইস তাই না, আর কামড়াবি?’
পারুলের বুঝতে বাকি রইল না, পিঁপড়ে মারার নাম করে হবু দেবর তার গাল ছুঁয়েছে। তাই এবার ঠিক দৌড়ে ঘরে পালাল পারুল। এদিকে দুলাভাই এতক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও, পারুল যাওয়ার পর এমন আচরণের জন্য ঠিকই কিছু তিতে কথা শুনিয়ে দিলেন লেবু মিয়াকে।
এবার বিদায় নেয়ার পালা। পারুলের মা বলল, ‘তোমরা আজ থাকলেই পারতে বাবা।’ কিন্তু তাদের পক্ষে মোটেই থাকা সম্ভব নয়, লেবু মিয়াকে কাল কর্মস্থলে ফিরতেই হবে- সেটা বুঝিয়ে বললেন তার দুলাভাই। তবে তারা পারুলের কাছ থেকে আরেকবার বিদায় নিতে চাইছেন। কিন্তু পারুল লজ্জায় আর বাইরে আসছে না। মা কয়েকবার ডাকার পর অবশেষে বাইরে এসে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল পারুল।
লেবু মিয়া বলল, ‘ঠিক আছে ভাবি, আমিতো কাল চলে যাব। আবার কবে দেখা হবে…। একটু কাগজ-কলম দিন, আমার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে যাই। মনে চাইলে কখনো ফোন দিবেন।’
পারুলের মা বলল, ‘খুব সুন্দর কথা বলেছ বাবা। যা তো মা পারুল, কাগজ-কলমটা এনে দে। মোবাইল নম্বরটা দিয়ে যাক, মাঝে মাঝে কথা বলা যাবে।’
লেবু মিয়া মোবাইল নম্বরটা লিখে খাতাটা পারুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ভাবি একটু পড়ে দেখেন বুঝা যায় কিনা।’ ঠিক তখন পারুল খাতার দিকে তাকাল এবং পড়ার চেষ্টা করল, ‘আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি এতক্ষণ মিথ্যা বলেছি, আসলেও আপনাকে বিয়ের আগে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে, আগামীকাল এই লেবু মিয়ার সঙ্গেই আপনার বিয়ে হবে।’
এটা পড়েই সঙ্গে সঙ্গে আবার দৌড়ে ঘরে পালাল পারুল এবং আয়নার সামনে দুই হাতে মুখটা ঢেকে দাঁড়িয়ে রইল। এবার আস্তে আস্তে হাতটা সরিয়ে লেবু মিয়ার ছুঁয়ে দেয়া জায়গাটা দেখার চেষ্টা করল এবং ভাবতে লাগল শুধু আগামী দিনটি নয়, আগামী দিনগুলোর কথাও।
:: বালিয়াডাঙ্গা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়