৪০তম বিসিএস : নন-ক্যাডারদের সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ মোমবাতি প্রজ্বালন

আগের সংবাদ

ঝুলে গেল সমন্বিত তিস্তা প্রকল্প : ভূরাজনৈতিক চাপের কারণে এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে আগ্রহ হারিয়েছে সরকার, এখনো হাল ছাড়েনি চীন

পরের সংবাদ

জেট ফুয়েলের বাড়তি দাম সমন্বয়ে বাড়ছে ভাড়া : বিমানে যাত্রী কমার শঙ্কা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : বিমান পরিচালন ব্যয়ের অর্ধেকই চলে যায় জ্বালানি কিনতে। সেজন্য জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে পরিচালন ব্যয়ও বেড়ে যায়। আর সেই ব্যয় সামাল দিতে বাড়িয়ে দেয়া হয় যাত্রীভাড়া। এদিকে করোনা মহামারির দুই বছরে জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। করোনার অভিঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পর গত কয়েক মাস ধরেই বিমানের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে। এবার দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে জ্বালানির দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। এতে বিমান পরিচালন ব্যয়ে বড় ধরনের ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলোকে। এমন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ রুটে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ানো নিয়ে সমালোচনা করেছেন অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির স্টেকহোল্ডাররা। তারা বলেছেন, বিশ্ববাজারে দাম স্থিতিশীল থাকলেও দেশে অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে বিমানভাড়া বেড়ে গেলে যাত্রী কমে যেতে পারে। যার প্রভাব পড়বে এয়ারলাইন্সসহ পর্যটন খাতে।
বিমানের জ্বালানি জেট ফুয়েল দেশে উৎপাদন না হওয়ায় চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এই সংস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি সেই জ্বালানি এয়ারলাইন্সগুলোতে সরবরাহ করে থাকে। স¤প্রতি জেট ফুয়েলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে যা কার্যকর হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক রুটের জন্য জেট ফুয়েলের দাম প্রতি লিটার ১.০৯ ডলার থেকে কমিয়ে ১ ডলার করা হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেট ফুয়েলের দাম গত প্রায় দুই বছরে ১৭ দফায় বাড়িয়েছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি। এতে দাম বেড়েছে ১৭০ শতাংশ। জ্বালানির এমন উচ্চমূল্য সামাল দিতে এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীভাড়া বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে সব চাপ এসে পড়েছে যাত্রীদের ওপর। আকাশপথে ক্রমাগত যাত্রীসংখ্যা কমে আসছে। ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বিমান সংস্থাগুলোকে। আর যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়ছে দেশের পর্যটন খাতেও।
এয়ারলাইন্সগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বছর দুয়েক আগেও বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে যেখানে সর্বনি¤œ ভাড়া দুই থেকে আড়াই হাজার ছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার টাকারও বেশি। জেট ফুয়েলের দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, সৈয়দপুর, রাজশাহী রুটের ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। এর ওপর ভাড়া আরো বাড়লে নিশ্চিতভাবে লোকসানের মুখে পড়তে হবে বিমান সংস্থাগুলোকে। এমন আশঙ্কার কথা বলছেন বিমান সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বিমান খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ারলাইন্সের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পরিচালন ব্যয় হয় জ্বালানিতে। সে কারণে জেট ফুয়েলের দাম যত বাড়বে, ব্যয়ও তত বাড়বে। অনেক দেশে কম দামে জ্বালানি কিনে যাত্রীদের কমদামে টিকেট দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে অতিরিক্ত দামের প্রভাবে বিমান সংস্থাগুলোর রাজস্ব দিন দিন কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে দেশের এয়ারলাইন্সগুলো।
জানতে চাইলে নোভো এয়ার-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এভাবে দফায় দফায় জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা কোনোভাবে সামাল দিতে পারছি না। দিনের পর দিন আমরা প্রচণ্ডভাবে লোকসান দিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা টিকেটের দামও বাড়াতে পারছি না। কারণ বিমানের পক্ষ থেকে না বাড়ালে আমরা কিভাবে বাড়াব? মধ্যবিত্তরা বিমানে চড়াই ছেড়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরে প্রতি মাসে তিন লাখের মতো যাত্রী আমাদের সেবা নিতেন, সেখানে তা এখন দুই লাখে নেমে এসেছে। আমরা সারভাইব করতে পারছি না। একটা পর্যায়ে এসে হয়তো আর টিকে থাকাও যাবে না। এ সংকট সমাধানের জন্য সরকারের কাছে প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছি না।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিমান প্রতিষ্ঠান ইউ এস বাংলা এয়ারলাইন্স ২০১৪ সাল থেকে আকাশ শাসন করছে। ২টি বিমান নিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট শুরু করা সংস্থাটির বহরে বর্তমানে ১৩টি বিমান রয়েছে যার মধ্যে এটিআর আছে ৬টি, বোয়িং আছে ৪টি এবং বোম্বারডিয়ার ড্যাশ আছে ৩টি। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার পিআর মো. কামরুল ইসলামের কণ্ঠেও একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল।
এ প্রসঙ্গে মো. কামরুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারির দুই বছরে জেট ফুয়েলের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এতে এয়ারলাইন্সগুলোকে প্রচণ্ডভাবে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এভাবে যদি লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে এর সঙ্গে বিমান সংস্থার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা বারবার কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে অনঢ়।
অথচ কোভিডের সময় যেখানে সারা পৃথিবী এ ইন্ডাস্ট্রিকে বাচানোর চেষ্টা করেছে, সেখানে আমাদের দেশে এ নিয়ে বিবেচনা করা উচিত। তা না হলে এ খাত আরো হুমকির মুখে পড়বে। আর এভিয়েশন খাত যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর নেতিবাচক প্রভাব পর্যটন খাতেও পড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়