বাংলা একাডেমির তিনটি পুরস্কার ঘোষণা

আগের সংবাদ

মহাসড়কে পদে পদে মরণফাঁদ :

পরের সংবাদ

ই-অরেঞ্জ নিয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট : কিছু দুর্নীতিবাজের কারণে দেশে সংকট তৈরি হচ্ছে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতারণা বিষয়ে জমা দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, কতিপয় দুর্নীতিবাজের কারণে দেশে সংকট তৈরি হচ্ছে। পরে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
ই-অরেঞ্জের প্রতারণার বিষয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) জমা দেয়া প্রতিবেদনটির শুনানির শুরুতে বিএফআইইউর আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, প্রতিবেদনে তারা অনেক টাকা উত্তোলন করেছে বলে উল্লেখ করলেন। তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল? তার প্রকৃত সুবিধাভোগী কারা? ওই টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে? তা তো সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। আপনাদের এই প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আর পুলিশের রিপোর্টে পরিষ্কার করে ও সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। আর দুদকের রিপোর্টে তারা পাশ কাটিয়ে গেছেন।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম হাইকোর্টকে বলেন, একটা ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের নামে এত টাকা লেনদেন হচ্ছে, এই টাকা কোথায় যাচ্ছে? কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে? এর ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছে কিনা? সেটা তো এনবিআরের দেখা উচিত। আর বিএফআইইউর কাজটা কী? এসব বিষয় আসেনি। এজন্য পূর্ণাঙ্গ করে একটি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশনা চাচ্ছি।
তখন আদালত বলেন, এ সমস্ত লোকের কারণেই ঝামেলা হচ্ছে। দেশে কত উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ রাস্তাঘাটের কী উন্নয়ন হয়েছে! দেখলে মনে হবে না দেশের মধ্যে আছি। কতিপয় দুর্নীতিবাজ লোকের কারণে এখন সংকট তৈরি হচ্ছে। পরে আদালত আগামী ৪ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে বিএফআইইউ, দুদক, পুলিশ প্রধানকে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন। অভিযোগের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি শত শত কোটি টাকার যে লেনদেন হয়েছে, তার থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে কিনা তা জানাতে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ই-অরেঞ্জ থেকে ৭৭ কোটি টাকার পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার ৫৪৭ জন গ্রাহকের পক্ষে মো. আফজাল হোসেন, মো. আরাফাত আলী, মো. তরিকুল আলম, সাকিবুল ইসলাম, রানা খান ও মো. হাবিবুল্লাহ জাহিদ নামের ৬ গ্রাহক চলতি বছরের মার্চে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে ৫ সেপ্টেম্বর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা, স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বীথি আক্তারসহ আরো অনেককে বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে দুদক ও বিএফআইইউকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
সেই মোতাবেক গত বুধবার (২ নভেম্বর) হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে বিএফআইইউ। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে এটির মালিকানায় সোনিয়া মেহজাবিন থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা পরিবর্তন করে তার ভাই পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত) শেখ সোহেল রানার স্ত্রী নাজনীন নাহারা বীথির নামে স্থানান্তর করা হয়। সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ নগদ ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে মোট ১৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনুপ্রবেশের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে শেখ সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি আছেন সোহেল রানা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়