নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ইমরান খানকে বাঁচালেন এক যুবক : প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দিকে সন্দেহের তীর

আগের সংবাদ

এ মরণফাঁদ থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

পরের সংবাদ

মহাসড়কে পদে পদে মরণফাঁদ :

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** অব্যবস্থাপনা, অনিয়মে ঝুঁকি বেড়েছে ** জাতীয় সড়ক কাউন্সিলের ১১১ সুপারিশ উপেক্ষিত **

দেব দুলাল মিত্র : নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে দেশের মহাসড়কগুলো। চালকদের বেপরোয়া গতি, তিন চাকার যানবাহন ও মোটরসাইকেল চলাচল, রোড ডিভাইডার না থাকা, মহাসড়কের পাশে হাটবাজার বসা, অনেক ক্ষেত্রে গাড়ির ফিটনেস না থাকা ও চালকের অদক্ষতাকে এর জন্য দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। কোনো কোনো মহাসড়ক বছরের পর বছর ধরে খানাখন্দে ভরা। এসব কারণে চলাচলে ঝুঁকি ও দুর্ভোগ বেড়েছে বলে মনে করেন তারা।
মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের পক্ষ থেকে বার বার ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। এমনকি উচ্চআদালত থেকেও নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু কারোরই সেদিকে তোয়াক্কা নেই। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার অটোরিকশা, অটো, টেম্পো এবং রিকশা ভ্যানসহ সব ধরনের অযান্ত্রিক ও ধীরগতির যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। কিন্তু গত ৬ বছরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কেউ নিয়ম মানছে না। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও তেমন জোরাল উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে মহাসড়কে ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক ছাড়া অন্য সব মহাসড়কেই থ্রি-হুইলার ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করছে, দুর্ঘটনাও বেড়েছে।
মহাসড়কে যানবাহন চালকদের বেপরোয়া গতি অন্যতম সমস্যা। ২০২০ সালে করোনার কারণে প্রায় দুই মাস সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপরও দুর্ঘটনা কমেনি। বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ওই বছর সড়কে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও চালকদের বেপরোয়া গতি ও আইন না মানায় মহাসড়ক নিরাপদ রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর ধারা ৪৪-এ মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ সড়ক বা মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির সড়কে মোটরযানের গতিসীমা নির্ধারণ বা পুনঃনির্ধারণ

করতে পারবে। চালক নির্ধারিত গতিসীমার অতিরিক্ত গতিতে মোটরযান চালাতে পারবে না। কোনো মোটরযান চালক সড়ক বা মহাসড়কে বিপজ্জনকভাবে বা অননুমোদিতভাবে ওভারটেকিং করতে পারবে না। কিন্তু এই আইন কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
ভোগান্তির অপর নাম টঙ্গী-গাজীপুর সড়ক। গত ১০ বছর ধরে ধুলাবালি, খানাখন্দ, জলাবদ্ধতা আর ভোগান্তি এই সড়ক ব্যবহারকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকদের নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে সিত্রাংয়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে এই সড়কের অবস্থা আরো বেহাল আকার ধারণ করে। ফলে পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই মহাসড়ক ব্যবহার না করতে যানবাহন চালকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। উত্তরা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মহাসড়কে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজের জন্য ৫ বছর সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু গত প্রায় ১১ বছরেও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এই মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে টঙ্গী থেকে গাজীপুর যেতে ৬ ঘণ্টাও সময় লাগছে। ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও তা এখন সবার জন্য গা-সওয়া হয়ে গেছে।
বলাকা পরিবহনের চালক মফিজুর রহমান বলেন, টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পৌঁছতে এখন ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ৪০ মিনিট লাগত।
ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুরের শেরুয়া বটতলার কাঁচাবাজারটি দীর্ঘদিন ধরে যানজট, পথচারীদের ঝুঁকি ও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। মহাসড়কের পাশ ঘেঁষেই এই বাজার দিন দিন আকারে বড় হচ্ছে। বাজারের ভেতরে জায়গা না থাকা এবং এই বাজারে কোনো খাজনা দিতে হয় না বলে মহাসড়কের জায়গায় নতুন নতুন দোকান বসছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের দূরপাল্লার বাসসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তারপরও সওজ ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বাজারটি উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ বছরে এই বাজার এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ৫০টি দূরপাল্লার যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বলে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, ফেনী, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এলাকার বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ অযান্ত্রিক যানবাহন এখনো চলাচল করছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জের মহাসড়কের অবস্থাও বেহাল। এই সড়কের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন স্থানে রাস্তা প্রশস্তকরণ, বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বিশৃঙ্খলভাবে বাস দাঁড়ানো, থ্রি-হুইলার ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল, ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কটিতে ঝুঁকি রয়েই গেছে। একই ধরনের অবস্থা রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে।
সড়ক বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. এম হাদিউজ্জামান বলেন, দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম রয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা ও পলিসিতে ঘাটতি থাকায় মহাসড়কে অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ ও স্থানীয় প্রশাসনে সরকারের যারা দায়িত্বে আছেন- তারা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন না। ফলে দুই লেনের মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর করার পরও দুর্ঘটনা কমছে না। মোটরসাইকেলের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। মহাসড়কে ঝুঁকি কমাতে চাইলে সড়ক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। সব মহাসড়কের দুই পাশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সার্ভিস রোড চালু করতে হবে। এতে মহাসড়ক একদিকে ঝুঁকিমুক্ত হবে এবং থ্রি-হুইলারসহ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে। আনফিট যানবাহন সরিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মহাসড়ক নিরাপদ করতে হলে জাতীয় সড়ক কাউন্সিলের দেয়া ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। সিটি সার্ভিসের ৯৮ শতাংশ বাস-মিনিবাস চলাচলের অযোগ্য। আন্তঃজেলা দূরপাল্লার ৪৮ শতাংশ বাস ২০ বছরের বেশি পুরোনো। আনফিট, লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন সরিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া দক্ষ চালকের অভাব রয়েছে। পরিকল্পনা করে মহাসড়কগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন খুবই জরুরি। পুলিশ ও মালিক-শ্রমিকদের চাঁদাবাজি বন্ধ করা জরুরি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়