শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে নি¤œচাপ : মঙ্গলবার আঘাত হানতে পারে ‘সিত্রাং’

আগের সংবাদ

সিত্রাংয়ের ভয়াবহ ছোবল ১৩ জেলায় : ভোলা ও নড়াইলে ৩ জনের মৃত্যু > তিন বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ > ২৫ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে > তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

ভিক্ষুকের দোয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। অনেক দিন বৃষ্টির সঙ্গে মাখামাখি হয় না। তাই ভাবলাম বৃষ্টির ছোট ছোট ফোটা গায়ে পড়লে তেমন কিছু হবে না। বেশ হিম হিম ভাব আসবে। ভালোই লাগবে। মুষলধারে বৃষ্টি হলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম না। অবশ্য জামাকাপড়ে বৃষ্টির ফোটা পড়লে কিছু সময় পর জামাকাপড় দিয়ে একটা দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে! যা দীর্ঘক্ষণ সহ্য করার মতো নয়। প্রতিদিন বাসে দূরপাল্লার চলাচল করতে হয় বলে ব্যাগে বডি স্প্রে রাখি। কারণ আমার শরীর ঘামার অভ্যাস আছে। সুযোগ বুঝে মাঝে মাঝে স্প্রে করি।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো। বাস এসে পড়েছে। বাস যাত্রীতে ঠাসা। পেছনের দিকে ঝক্কির ভয়ে অনেকে বসতে চায় না। তাই একবারে পেছনে একটি ছিট পাওয়া গেল বটে। বডিতে স্প্রে করে ভালোই হয়েছে- তা না হলে গাদাগাদিতে শরীরে বৃষ্টির পানি আর কাপড়ের মাখামাখিতে এক ধরনের দুষ্টুমিষ্টি গন্ধ বের হতো। স্প্রে করাতে এখন বেশ মিষ্টি একটা সুবাস আসছে! গাড়িতে উঠলে সাধারণত আমার ঘুম পায় না। আজ কেন জানি না চাইলেও ঘুম চলে আসছে। যদিও এমন মিষ্টি আবহাওয়া সচারচর পাওয়া যায় না।
পাশের এক যাত্রী বলল- জানালার গøাসটা একটু বন্ধ করবেন প্লিজ। পাশে কোনো মেয়ে যাত্রী হলে এমনটি বলতো না। কেননা বৃষ্টি মেয়েদের অসম্ভব প্রিয়। আমি জানালা না দিয়ে বৃষ্টির দিকে ফিরে বসলাম।
গাছপালা যেন বৃষ্টির জলে স্নান করছে। বৃষ্টির সুঘ্রাণ ভেসে আসছে। নদী তীরের দৃশ্য যেন আরো অপরূপ। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বাসের হেলপার আর বেশিক্ষণ জানালা খোলা রাখতে দিল না। ঘুমও আসল না। কিন্তু ঘুমের রেশ রয়ে গেল। হেলপার টাকা চাইতে এলো। এতক্ষণ হেলপারকে ভালো করে দেখিনি। লোকটি মোটাসোটা আর অরিজিনাল টাক। যেন ফুটবলার জিনেদিন জিদান! পার্থক্য হলো ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত ফুটবলার চিকনাচাকনা আর এই হেলপারের শরীর জিদানের তিন ডাবল। দেখে মনে হলো, চুল যে কবে সব পড়ে গেছে সে নিজেও জানে না। ছোট বাসে এত মোটাসোটা লোক হেলপার হলে বাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরাও একটু অস্বস্তি বোধ করে। টাক মাথার লোকেরা একটু বুদ্ধিমান হয়! তবে একে দেখে তেমনটি মনে হলো না।
হেলপার বলল- আপনি কোথায় যাবেন। আমি কিছু না বলে প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে শক খেলাম! মানিব্যাগ যথাস্থানে নেই। ভিড়ের মধ্যে মানিব্যাগ বের করতে কষ্ট হচ্ছে- এমন ভান দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে হেলপারকে বললাম, একেবারে শেষ প্রান্তে যাব। সামনে গিয়ে দিব মামা। চারপাশে যাত্রীদের ভিড় দেখে হেলপার ভ্রæ কুঁচতে চলে গেল।
মানিব্যাগ ছিনতাইও হয়নি, পড়েও যায়নি। মনে হলো কর্মস্থলে ফেলে রেখে এসেছি। এমনটি সাধারণত হয় না। কেন যে এমন হলো! ভীষণ লজ্জা করছে। লজ্জা-টজ্জার কথা বাদ দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বসে রইলাম। ঠিক কী করা যায়! বৃষ্টি থেমে গেছে। হঠাৎ বাইরে চোখ গেল। অসম্ভব সুন্দর একটি মেয়ে স্কুটি চড়ে যাচ্ছে। মাথায় হেলমেট নেই। বাতাসে সোনালি কেশ দোল খাচ্ছে। নিশ্চিতভাবে মনে হলো মেয়েটি একটু ভাব নিচ্ছে! সে যাই হোক, মেয়েরাও এখন সব পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে, সাহস করে বাইক চালাচ্ছে- এটা কম কথা নয়।
হঠাৎ আমাদের বাসটি থেমে গেল। বাসে নাকি ত্রæটি ধরা পড়েছে। ড্রাইভার জানাল, বাস আর যাবে না। যাত্রীদের চোখে-মুখে অসন্তোষ। মারমুখী ভঙ্গিতে হেলপারকে ঘিরে ধরেছে অনেক যাত্রী। গন্তব্য স্থান এখনো খানিকটা দূর। নিরুপায় হয়ে বাকি পথ যেতে হেলপার যাত্রীদের গন্তব্য স্থানের টাকা দিয়ে দিচ্ছে। আমিও ঘোরের মধ্যে হেলপারের কাছে গেলাম। হেলপার আমার হাতেও একটা নোট ধরিয়ে দিল। মনে মনে ভাবলাম, কোনো টাকা না দিয়েও এতপথ এসে আবার যাওয়ার টাকা পেলাম!
পেছনে হাঁকডাক চলছে- আমায় একটা ট্যাকা দ্যান ভাই, আমায় একটা ট্যাকা দ্যান…। হেলপারের কাছ থেকে ফ্রি পাওয়া টাকাটা ওই ভিক্ষুককে দিয়ে দিলাম। ভিক্ষুক গায়ে হাত দিয়ে দোয়া করলেন। ভিক্ষুকরা এমনিতেই কতসব কথা বলে। তাদের কাছে যেন দোয়ার বক্স থাকে, টাকা দিলেই ফরফর করে বেরিয়ে আসে। ভাবলাম, তাদের দোয়ায় কাজ হলে তারা নিজেদের জন্য দোয়া করে না কেন? দোয়ার জোরে তারা তো নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পারে? সব সৃষ্টিকর্তার খেলা!
কিছুতেই মাথায় আসছে না বাকি পথ কীভাবে যাব। কোনো বুদ্ধিও পাচ্ছি না। আমার যখন টেনশন হয় তখন ললাট ঘামে। ঘামলে নিজের কাছেই অস্বস্তি লাগে। টিস্যুও খুঁজে পাচ্ছি না। মনে পড়েছে, পকেট টিস্যুর বক্সটা রেখেছি কাঁধে থাকা ব্যাকপ্যাকে। টিস্যু খুঁজতে ব্যাগের মধ্যে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগটাও সেখানে পড়ে আছে!

:: লৌহজং, মুন্সীগঞ্জ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়