শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে নি¤œচাপ : মঙ্গলবার আঘাত হানতে পারে ‘সিত্রাং’

আগের সংবাদ

সিত্রাংয়ের ভয়াবহ ছোবল ১৩ জেলায় : ভোলা ও নড়াইলে ৩ জনের মৃত্যু > তিন বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ > ২৫ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে > তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

আনন্দ দিনে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আজ নন্দিতার জন্মদিন। পানসি রেস্তোরাঁর এক কোনায় নিভৃতে সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে বলেছে। কিন্তু আমি সেখানে ঠিক মতো পৌঁছাতে পারবো কি না জানি না। আমি যে কোথাও বেহুদা আটকে আছি, ব্যাপারটা এমনও নয়।
সরকারি একটা অধিদপ্তরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির ভাইভা। লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষার পুলসিরাত পার হয়ে এখন ভাইভারের জন্য অপেক্ষায়। গতকালই কিশোরগঞ্জ থেকে অনন্যা বাসে ঢাকায় এসেছি। চাচাতো ভাই রাসেল। ঢাকায় পরীক্ষা দিতে এলেই যার বাসায় ঠাঁই হয় আমার। দুজন বন্ধুর সঙ্গে মেসের ছোট্ট একটা কক্ষ ভাগাভাগি করে দিন গুজার করে সে। সকাল হলেই তিতুমীর কলেজের সামনে থেকে অফিসের বাস ধরতে দৌড়ায়। রাত ৮টার পর বাসায় আসে।
বড়জোর দুজন থাকতে পারবে; এমনই ছোট্ট কক্ষটাতে আগে থেকেই ওরা তিন জন থাকে। আমি ও আমার মতো জরুরি কাজে ঢাকায় আসা আরো কোনো মেহমানের এখানে এসেই ভিড় জমাতে হয়। দেশগ্রাম থেকে আসা এমন মেহমানদের জন্য তখন তাদের খাটের জায়গা ছেড়ে মেঝেতে মাদুর পাততে হয়। ঢাকার মতো জায়গায় নিজেরাই যেখানে থাকতে পায় না, সেখানে মাসে তিন-চারবার করে এসে বিরক্ত করতে বড় বাধে। ঘুম আসে না তেমন। এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। নন্দিতা আমার একটা চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে। খুব বেশিদিন সে আর অপেক্ষা করতে পারবে না। পুলিশ সদস্য খালাতো ভাই তাকে কব্জা করবে। নন্দিতাকে রাজি করাতে বহুদিন ধরে পীড়াপীড়ি করছে ওই নাদান। তাকে হারানোর ভয়ও ঘুম না আসার আরেকটা কারণ।
এমন আধ-ঘুম, আধ-জাগরণের মধ্য দিয়েই কেটে যাওয়া রাত শেষ হয়। ভোর আসে। যে অফিসে ভাইভা দিবো, তা মতিঝিলের দিকে। সুতরাং হাতে অনেক সময় নিয়ে আমাকে ছুটতে হয়। মহাখালী থেকে ধুরুধুরু বুকে ফাইলপত্র হাতে নিয়ে কোনো রকমে বাসে উঠি। আগের দিনের যাত্রাজনিত ক্লান্তি, রাতের বেলায় ভালো ঘুম না হওয়া- আমাকে অজান্তেই ঘুমের দেশে তলিয়ে দেয়। অনিচ্ছাকৃত ঘুমে কেটে যায় অনেকটা সময়।
বাস-হেল্পারের বিরক্তিভরা কর্কশ ডাকে আমার ঘুম ভাঙে, ‘অ্যাই মামা, গুলিস্তান না নামবেন কইলেন! নামেন না ক্যা? জলদি নামেন।’ আমি ত্বরিত গতিতে বাস থেকে নামি। বাকি পথ হেঁটে হেঁটে অফিসে পৌঁছাই। একজনের পরেই আমার ভাইভার সিরিয়াল। অফিসে গিয়ে জানতে পারি- ওই দপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় কী এক কাজে সচিবালয়ে আটকা পড়েছেন। দুপুরের আগে তিনি অফিসে পৌঁছাতে পারবেন না। ১০টার সময় শুরু হওয়া ভাইভা বেলা ৩টার আগে শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অথচ আমি ঢাকায় আসার আগে কথা দিয়েছিলাম ভাইভা শেষ করে দুপুরের আগেই কিশোরগঞ্জের বাসে উঠবো। যে কোনো মূল্যে সন্ধ্যা ৭টায় পানসিতে বসে নন্দিতার জন্মদিনের কেক কাটবো।
সময় এখন ৩টা বেজে ৪৫ মিনিট। একটু আগে মহাপরিচালক মহোদয় অফিসে প্রবেশ করেছেন। অফিসের লোকেরা চাকরিপ্রার্থীদের কাগজপত্র জমা নিতে শুরু করেছেন। বসের ইঙ্গিত পেলেই তারা ভেতরে ডাকবেন। আপাতত অপেক্ষা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই। যা হোক, নন্দিতাকে বোধহয় অপেক্ষায় রাখা ঠিক হবে না। তাই পকেট থেকে ফোন বের করি। এমন আনন্দ দিনে তাকে দুঃখ দেয়া কি ঠিক হবে?

:: নগুয়া, কিশোরগঞ্জ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়