টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব : করোনা কাটিয়ে ফিরছে জৌলুস

আগের সংবাদ

প্রাণঘাতী রূপে প্রলম্বিত ডেঙ্গু : ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ৫৬ জেলায়, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সব জেলায়ই রোগী > ডেঙ্গু : সংক্রমণ

পরের সংবাদ

দ্রুত ওজন কমাতে জুম্বা…

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আশরাফুল ইসলাম রানা
সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিমিত খাদ্যাভাস ও শরীরচর্চার বিকল্প নেই। এ নিয়ম মানতে গিয়ে রোজকার জিমে ভারোত্তোলন আর পুশআপ করতে করতে একঘেয়েমি চলে আসে অনেকেরই। পাশাপাশি ব্যস্ততা কিংবা জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করতে অনীহাও অনেকের। কিন্তু জুম্বা সেখানে ব্যতিক্রম। নাচতে নাচতে যদি ওজন কমে, তবে নাচই ভাল! জুম্বাতে শরীরের অবাঞ্ছিত মেদ যেমন ঝরবে, তেমন এই ধরনের অনুশীলন করলে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে। মূলত কলম্বো থেকে আসা এই ফিটনেস ডান্স ফর্ম এখন বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় ও ট্রেন্ডে ইন।

জুম্বার অতীত- বর্তমান
শরীরের মেদ কীভাবে কমাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। রোজ জিমে গিয়ে গা ঘামানো অনেকের অপছন্দ। কিন্তু স্বাস্থ্য ফিট থাকাটাও জরুরি।
জিরো ফিটনেস থেকে স্বাস্থ্যবান থাকতেই জনপ্রিয় ও সহজ সমাধান- জুম্বা। 
আজকাল স্বাস্থ্য সচেতনরা অনেকেই ঝুঁকছেন জুম্বা ডান্সের দিকে। জুম্বা, লাতিন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিউজিকের সেট করা একটি নাচের ফিটনেস প্যাকেজ। এই শারীরিক অনুশীলনের দ্রুত এবং ধীর দুই রকমই গতিবিধি হয় শরীরে। যার ফলে ধারাবাহিক গতিতে কোনও নাচের চেয়ে আরও বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়তা করে। এটি একটি সম্পূর্ণ-বডি ওয়ার্কআউট। তাই এর ফলে আপনি আপনার পেশীগুলি আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবেন। 
এই ফিটনেস প্রোগ্রামটি ২০০১ সালে প্রথম বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন কলম্বিয়ার এক নৃত্যশিল্পী এবং কোরিওগ্রাফার বেতো পেরেজ। বর্তমানে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ এই জুম্বা ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ফিট রাখছেন এবং লাতিন আমেরিকা ছাড়িয়ে এখন প্রায় ১৮৫টি দেশে এই জুম্বা শেখানো হচ্ছে।
একই সাথে শরীর ও মন ভাল রাখতে তাই এখনই শুরু করতে পারেন জুম্বা ডান্স। তবে বিশেষজ্ঞদের মত, যে কোনও ধরনের অনলাইন ভিডিও দেখে বাড়িতে এই কৌশল অবলম্বন না করে, সার্টিফাইট পেশাদার কারও থেকে এই ফিটনেস ফর্মের প্রশিক্ষণ নেয়া বেশি কার্যকরী।  এক ঘণ্টার জুম্বা অনুশীলনে প্রায় ৩০০-৯০০ ক্যালোরি বার্ন হতে পারে। ফলস্বরূপ সপ্তাহে এক ঘণ্টার ২-৩ টি জুম্বা ক্লাস করলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাঙ্খিত চেহারা পেতে পারেন আপনি। তবে একই সাথে ফিট থাকতে স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া করাও জরুরী। 

কীভাবে করতে হয়
জুম্বা একাধিক নাচের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে যেমন সালসা, চাচাচা, মাম্বো, ফ্লামেঙ্কো, সাম্বা কিছু এরাবিক মুভমেন্ট ইত্যাদি। জুম্বা এক্সসারসাইজ প্যাকেজটি শিশু থেকে বয়স্ক ( ৪ থেকে ৬৫ বছর) ও বিভিন্ন লেভেল যেমন বিগেনার, অ্যাডভানস ইত্যাদির কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে। জুম্বা ক্লাস সাধারণত ১ ঘণ্টার মত হয়ে থাকে যেখানে একজন জুম্বা একাডেমির দ্বারা সার্টিফায়েড ট্রেনার থাকেন।
এই ওয়ার্ক আউট ফর্ম শুধু ফিটনেসের জন্য না। এটি এক প্রকার ফান-অ্যাক্টিভিটিও। তাই ছোটরাও এটি করতে মজা পায় এবং মনেই হয় না আলাদা করে ব্যায়াম করছেন।
এতে শুরুতে সফট করে গান শুরু হয়। সময়ের সাথে সাথে দ্রুত হয় লয়, তার সঙ্গে বাড়তে থাকে নাচের গতি ও বডি মুভমেন্ট। দ্রুত তালের এই নাচের সময় হৃৎস্পন্দনের গতিও বেড়ে যায়। তাই জুম্বার শেষ ১৫ মিনিটে আবার প্রশান্তির গান বাজিয়ে স্বাভাবিকে নাচের গতিকে নামিয়ে আনা হয়। মনে রাখবেন নাচের গতি আস্তে আস্তে না কমিয়ে হুট করে জুম্বা শেষ করে দিলে হার্টের ক্ষতি হতে পারে। বর্তমান সময়ে নেচে ওজন কমাতে তাই জুম্বার বিকল্প পাওয়া কঠিন।

জুম্বার রকম ভেদ
সাধারণত ৯ ধরনের জুম্বা হয়। তারই কয়েকটি হল জুম্বা গোল্ড যা তৈরি হয়েছে বয়স্ক মানুষের কথা ভেবে। এটা বয়স্কদের পেশির সঠিক সঞ্চালনা, পেশির শক্তি অর্থাৎ দুর্বলতা দূর করার কথা ভেবে করা হয়েছে। জুম্বা অ্যাকুয়া হল এক ধরনের জুম্বা যা সুইমিং পুলে করা হয়। অ্যাকুয়া জুম্বা ৩০ মিনিটের ক্লাস হয়। এই ধরনের জুম্বা সাধারণত অগভীর পুলে করা হয়। এই ধরনের অ্যাকুয়া জুম্বা ক্লাস খুব বেশি হয় না। জুম্বা কিডস হল বিশেষ ধরনের জুম্বা যা ৪ থেকে ১২ বছরের ছোট শিশুদের কথা ভেবে করা হয়েছে। তবে আমাদের দেশে মিউজিক ফিটনেস প্রোগ্রামে মূলত চারটি বেসিক ল্যাটিন সুরের ওপর অনুশীলন করানো হয়। সালসা, মেরেঙ্গে, রেগেটন ও কুম্বিয়া এই চার সুরের নির্ধারিত তালে তালে চলে জুম্বা ড্যান্স। সাধারণত বিভিন্ন রিদিমের মিউজিক যেমন দ্রুত, মধ্যম ও ধীর মিউজিক ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের ও বিভিন্ন দেশের গান বা কোনও বিশেষ ভাষার গান ব্যবহার করা হয়।

মিলবে অনেক উপকার

বলাই বাহুল্য শরীর ও মন ভাল রাখতে শুরু করতে পারেন জুম্বা ডান্স। জুম্বার মাধ্যমে সারা শরীরের ব্যায়াম হয়। সালসা ও অ্যারোবিক্সের সংমিশ্রণ রয়েছে একটি পরিপূর্ণ জুম্বা প্রোগ্রামে। এটি করার ক্ষেত্রে ঠিক বা ভুল বলে কিছু হয় না। সঙ্গীতের তালে তালে ঠিক মতো অঙ্গসঞ্চালনা করলেই হয়ে যায়। একটি গবেষণায় প্রকাশ, ৩৯ মিনিটের একটি জুম্বা ক্লাসে প্রতি মিনিটে ৯.৩ ক্যালোরি ঝরে থাকে। কাজেই ওজন ঝরাতে চাইলে জুম্বা হতে পারে আনন্দময় সহজ সমাধান। জুম্বাতে দ্রুত তালের লয়ে নাচতে হয়, ফলে শরীরের নমনীয়তা অনেক বেড়ে যায়। অনেক বেশি কর্মক্ষমতা তৈরি হয়। এ ছাড়া এটি সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
যেহেতু এটি কার্ডিওভাসকুলার ট্রেনিং তাই রক্ত চলাচল কোষে কোষে বৃদ্ধি পায় যার ফলে আমাদের ত্বক অনেক ভাল থাকে। তাছাড়া জুম্বা করলে পেশি টানটান হয় ফলে শরীর আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ফান আর মজার নাচের মাধ্যমে জুম্বা ওজন কমানো, সম্পূর্ণ বডি টোনিং, রিদপিন্ডের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্ট্রেস রিলিভ , ব্রেন এর সাথে শরীরের কোঅর্ডিনেশন, মানসিক স্বাস্থ্যেও উন্নয়ন ইত্যাদি কাজ করে থাকে। এছাড়াও যাদের হজমের বা গ্যাসট্রিকের সমস্যা তারা জুম্বা অবশ্যই করুন কারণ এই এক ঘন্টার জুম্বা ক্লাস এতটাই পরিশ্রমের হয় যে আপনার খিদে পেতে বাধ্য এবং খাওয়ার পরে তা হজম হতেও সমস্যা করবে না। এছাড়াও জুম্বা নাচকে যোগাযোগদক্ষতা বাড়ানোর একটা কৌশলও বলা হয়। একসঙ্গে অনেকের অনুশীলন করার ফলে সামাজিক দক্ষতা বাড়ে। দূর হয় সামাজিক ভীতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়