ঢাবি প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানে ৩০ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে উপাচার্য কার্যালয় পর্যন্ত পদযাত্রা করেন তারা। পরে সোয়া ৪টায় উপাচার্য লাউঞ্জে আয়োজিত এক কনফারেন্সে উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামানের কাছে ওই স্মারকলিপি জমা দেয়া হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয় হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। ওই সময় উপাচার্য লাউঞ্জে একটি সংক্ষিপ্ত প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে ঢাবি ছাত্রলীগের ৩০ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপিটি পাঠ করা হয়। এ সময় উপাচার্য বলেন, ‘ছাত্রলীগ প্রত্যেকটা দাবিকে অন্তত যৌক্তিকতার সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠভাবে একটি মহৎ উদ্দেশে উত্থাপন করেছে। শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনেকগুলো সুপারিশ এখানে আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যখন এই ধরনের শিক্ষার্থীবান্ধব ও জাতির উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিশ্চিত করতে চায়, তখন এটি নিঃসন্দেহে ছাত্র নেতৃত্বের প্রশংসনীয় দিক বলে ধরে নেয়া হয়।’
তাদের দাবিগুলো হলো : ভর্তুকি ও রেশনিং এর মাধ্যমে আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিনে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা। প্রতিটি হলে আধুনিক প্রযুক্তির কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করার জন্য বাস ও ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধি করা। যাবতীয় প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে অঁঃড়সধঃরড়হ চালু করা, মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবস্থা করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘মাস্টারপ্ল্যান’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আবাসন সংকটের স্থায়ী সমাধান করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড বিস্তৃতিকরণে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক, অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধি করা। পরীক্ষার ফলাফল জটিলতা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ক্যাম্পাসের সর্বত্র ‘ঝঃঁফবহঃ ঊ-সধরষ ওউ’ এর মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীকে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা ওয়াইফাই নিশ্চিত করা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সফল করতে একাধিক বিশেষায়িত ল্যাব যেমন- রোবটিক্স ল্যাব, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব, অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং ল্যাব, ডিএলএসআই ল্যাব স্থাপন। শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ মেডিকেল সেন্টার নির্মাণ ও সুলভে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রাপ্তির লক্ষ্যে ফার্মেসি চালু করা। বিভাগীয় কারিকুলাম নিয়মিত হালনাগাদের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা। ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঝঃঁফবহঃ ঊীপযধহমব চৎড়মৎধসসব এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি করা। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আকর্ষণীয় বৃত্তি ও সুবিধাসহ নিয়মিত ‘আন্তর্জাতিক বিজ্ঞপ্তি’ দেয়া। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের জ্ঞান ও চর্চাকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, লিংকড ইন পরিচালনা করা। শিক্ষার্থীদের জন্য রিসার্চ প্রজেক্টে অনুদান নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের জন্য বাজেটে বরাদ্দ করা। শিক্ষার্থীদের রিসার্চ অ্যাসিট্যান্ট ও টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার নীতিমালা তৈরি করা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা। ২৪ ঘণ্টা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি কার্যক্রম নিশ্চিত করা। মেয়েদের হলে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধি করা। শিক্ষার্থীদের ‘সফট স্কিল’ অর্জনের জন্য শর্ট কোর্স, সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা। মেট্রোরেলে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাস’ চালু করা। মোকাররম ভবন, মোতাহার হোসেন ভবন ও কার্জনে ক্যান্টিন স্থাপন। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য নিয়মিত ‘স্টার্টাপ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করা। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে পার্টটাইম কাজের সুযোগ দেয়া। ক্যাম্পাসে যানবাহন ও ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ন্ত্রণ করা। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য কালচারাল সেন্টার চালু করা। সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়ামে নারী শিক্ষার্থীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও মানসম্মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং বার্ষিক শিক্ষা সমাপনি ও সাংস্কৃতিক উৎসব চালু করা।