হাজারীবাগের বিস্ফোরণ : পা হারানো দিলীপসহ শঙ্কাজনক অবস্থায় ২

আগের সংবাদ

পাঁচ কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু!

পরের সংবাদ

অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে শত কোটি টাকার সেতু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর থেকে : জামালপুরের ইসলামপুরে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে একাধিক অবৈধ ড্রেজার দিয়ে এক মাস ধরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু। স্থানীয়দের দাবি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন। তবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় পর্যায়ে ক্রীড়া চর্চা বাড়াতে জামালপুরের ইসলামপুরের দক্ষিণ শুভাকুড়া গ্রামে নির্মিত হচ্ছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে ৩ একর জমির ওপর মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। মিনি স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করার জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে একাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে এক মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিনিময় কন্সট্রাকশনের প্রভাবশালী প্রতিনিধি।
শুভাকুড়া গ্রামের বাসিন্দা আজাহার আলী বলেন, এক মাস ধরে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে স্টেডিয়াম মাঠ ভরাট করা হয়েছে। তবে মাটি কাটা শেষ হলে আমাদের এলাকা উন্নত হবে, পুলাপান খেলাধুলা করতে পারবে।
মিনি স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে রয়েছে ৫৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম সেতু। ২০১৮ সালে ইসলামপুরের সঙ্গে বকশিগঞ্জ উপজেলা ও শেরপুর জেলাকে সরাসরি সংযুক্ত করতে ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে এলজিইডি। শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম সেতুর ৩০ মিটারের মধ্যে একাধিক অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে এক মাস ধরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ধসে পড়েছে সেতুর পূর্ব পাশের এপার্টমেন্টের সিসি ব্লক। বালু উত্তোলন দ্রুত বন্ধ না হলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। এতে লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে বলে দাবি স্থানীয়দের। ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মো. শাকিল বলেন, ‘নদীর অবস্থা খুব খারাপ। শুধু ড্রেজারের কারণে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হইছে। কোন সময় জানি এই শত কোটি টাকার ব্রিজ ভাইঙ্গে পইরে যাবো গা। এইগুলা তো ঠিক না। সরকারের পরিকল্পনা নেয়া উচিত।’
ব্রিজ দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ইজিবাইক চালক হৃদয় বলেন, এ ব্রিজ দিয়ে শেরপুর- বকশিগঞ্জের লোকও আসা যাওয়া করে। নিয়মিত লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। এই ব্রিজটার যদি কোনো ক্ষতি হয়, আমাদের অনেক কষ্ট হবে। এ জন্য আমাদের বালু তোলা বন্ধ করা দরকার।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের দাবি, মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য ব্রহ্মপুত্র থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদের পূর্বপাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে হুমকিতে রয়েছে শত শত একর ফসলি জমি ও বেশ কিছু বসতভিটা। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় হুমকির মুখেও পড়তে হচ্ছে তাদের। ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, আমার বাড়িঘরের অবস্থা খুব খারাপ। কাছারের ওপর এখন ভাঙছে। বালু তোলা বন্ধ করার জন্যই আমরা সুপারিশ করেছি। তারা সুপারিশ মানে না। ড্রেজার দিয়ে বালু কাটতাছে। তারা বলে স্টেডিয়াম করব। আল্লাহর কাছে সইপে দিছি। আল্লাহ যদি থুয়ে দেয় থাকব। আর না হইলে হইরে যাওয়া লাগব।
সেখানকার বাসিন্দা মহর আলী বলেন, একটা সেতুর ৩০০ মিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও মাটি কাটতাছে একদম ব্রিজের ৩০ মিটারের মধ্যে। একদিকে ব্রিজের ক্ষতি হইতাছে। আরেকদিকে এই জায়গায় যতো গভীর হইতাছে আমাদের জায়গা সম্পত্তির তত ক্ষতি হইতাছে। বাড়িঘর নিয়েও হুমকির মধ্যে আছি আমরা। আমি এর জন্যে ড্রেজারে মাটি কাটবার দিমুনা বইলে নিষেধ করছিলাম। মাটি কাটবার নিষেধ করার পর তখন আঙ্গরে হুমকি দিছে। বলে যে, পুলিশ আসব। আইসে তগরে বাইরেব, বাইরে ধইরে নিয়ে যাবো গা। হুমকির কারণে তারপর আর কোনো প্রতিবাদ করি নাই।
এদিকে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত পাইপের কারণে ব্যাহত হচ্ছে নৌযান চলাচল। ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝি মো. মজিবর রহমান বলেন, এই ড্রেজারের জন্য নদী দিয়ে নৌকা চলাফেরা করা অসুবিধা হয়ে গেছে। বড় নৌকা চলতে পারে না। আর আমরা কোনো মতে চলতাছি। তাও উজান দিকে যাবারই পাই না। তবে এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা এর প্রতিনিধির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সেতুটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, নদীটি ভাঙতে ভাঙতে আমাদের এপার্টমেন্টের কাছে আসে। আমাদের এপার্টমেন্টসহ প্রটেকশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা আমাদের এলজিইডির পক্ষ থেকে এই ব্রিজটি টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এদিকে এলজিইডি চাইলে পানির নিচের ক্ষতি পরিমাপ করে কারিগরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত পাউবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ বলেন, এখানে পানির নিচে কতটুকু ক্ষতি হলো, কতটুকু ভাঙন আছে। রিভার বেডে কতটুকু স্কাউরিং আসে। এটা পেথিমেটিক সার্ভে করলে বোঝা যাবে এবং সেই অনুযায়ী এখানে মেরামতের ডিজাইন হবে। মোহাম্মদ আবু সাঈদ আরো বলেন-এলজিইডি অনেক বড় একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট। তারপরও যদি তারা চায়, যদি প্রয়োজন মনে করে তাহলে এক্ষেত্রে পাউবো কারিগরি সহযোগিতা করতে রাজি আছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় মোবাইল ফোনে বলেন, জেলার যে কোনো জায়গায় যারা বালু উত্তোলন করবে তাদের তালিকা তৈরি করে আমরা নিয়মিত মামলা করার জন্য তহসিলদার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। এই বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্তও আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়