সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীরীতি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনো নিখোঁজ অন্তত ২৭ : মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরের সংবাদ

মেয়ের নামটি অর্ণি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১:০০ পূর্বাহ্ণ

ডাক্তারের চেম্বার। মহিলা ডাক্তার আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখাচ্ছেন। মনিটরে একটা মানব শিশুর অস্পষ্ট আকৃতি নড়াচড়া করছে। ডাক্তার জানালেন, অনাগত সন্তানটি মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের দিকে মুখ ফেরাল। দুজনের মুখেই তৃপ্তির হাসি।
বাসায় ফেরার সময় রিকশাতে নিঝুমের মুখে রোদ লাগছিল দেখে অর্ক হাতের ছায়া দিয়ে বউয়ের মুখ ঢাকল। সাবধানে হাত ধরে রিকশা থেকে নামিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময় কোলে তুলে নিতে চাইল। নিঝুম বলল- পাগল।
নিঝুমের শাশুড়ি ডায়াবেটিসের রোগী। বিকালে পার্কে হাঁটা শেষে ফেরার পথে হকারের কাছ থেকে দুটো শিশুদের ছড়ার বই কিনে নিয়ে আসল। নিঝুম তো অবাক! শাশুড়ির দিকে বিস্ময়ভরা চোখে তাকাতেই শাশুড়ি বলল, ক’দিন পরে তো লাগবেই, তাই আগেভাগেই নিয়ে এলাম।
ঘরের দেয়ালে দুটো বাচ্চার ছবি ঝোলানো। নিঝুম সারাদিন মোবাইলে, ইউটিউবে বেবি কেয়ার লিখে সার্চ দিয়ে শিশু সেবার পদ্ধতি সম্পর্কে জানল। দিন দিন তার পেট তরমুজের মতো ফুলে উঠছে।
অফিস থেকে ফেরার সময় অর্ক দুই জোড়া জুতা নিয়ে ফিরল। একই কালার, একই ডিজাইন, শুধু সাইজের পার্থক্য। বড় আর ছোট। বড়গুলো মায়ের জন্য, ছোটগুলো মেয়ের। সঙ্গে একটা রাবারের খেলনা ডলফিন। ডলফিনটা নিয়ে দুজন দুজনকে ভয় দেখানোর ভঙ্গি করল। অর্ক হঠাৎ নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল। কপালে চুমু খেল। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, আমাদের মেয়ের নাম রাখব অর্ণি…। অর্কের ‘অর’ নিঝুমের ‘নি’।
এমন সময় নিঝুম কুঁকড়ে উঠল। ইশারায় বোঝাল পেটের ভেতর বাচ্চাটা নড়েচড়ে উঠেছে। অর্ক পেটে কান পাতল, মুচকি হাসি দিল। তারপর চুমু খেল, যেন মেয়েকেই চুমু খাচ্ছে।
সময় ঘনিয়ে আসছে। গোসলখানার মেঝেতে পা পিছলে পড়ে গেল নিঝুম। বাইরে থেকে একটা তীব্র চিৎকার শোনা গেল, মাগো… তারপর অ্যাম্বুলেন্সের হর্ন, লালবাতিটার ঘোরাঘুরি। স্ট্রেচারে চড়িয়ে সোজা অপারেশন থিয়েটারে। থমথমে পরিবেশে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে অর্ক হন্তদন্তের মতো এখানে সেখানে ফোন করছে- রক্ত চাই, রক্ত। ‘ও’ নেগেটিভ।
ডাক্তার টাওয়েলে মুড়িয়ে নবজাতককে কোলে নিয়ে দরজা খুলল- চাঁদের মতো মেয়ে হয়েছে। তবে মা…
কী হয়েছে ডাক্তার? নিঝুম কি মারা গেছে?
ডাক্তারের মাথায় দুষ্টচক্র ভর করল- না, এখনো মরেনি। তবে জীবন সংকটাপন্ন।
আসলে নিঝুম মারা গেছে। ডাক্তার নিজের হাতেই নিঝুমের মুখ চাদর দিয়ে ঢেকে এসেছেন। ডাক্তার চাইছেন কিছু টেস্ট করার ছুতোয় টাকা হাতিয়ে নিতে। প্রাইভেট হাসপাতাল। একটা দিনের সিট ভাড়া মানেও অনেক টাকা। অপারেশন থিয়েটারে থাকা অন্য একজন জুনিয়র ডাক্তার বিষয়টা বলে দিতে চেয়েছিল। তিনি তাকে চোখের ইশারায় থামিয়ে দিলেন। তারপর আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন- খুব সৎ সাজার ভাব নাও দেখছি! হাসপাতালের লাভ না দেখাতে পারলে চাকরি থাকবে তোমার?
পরদিন সকালে শিশুটি মারা গেল, যার নাম রাখার কথা ছিল অর্ণি। দুপুরে ডাক্তার জানালেন নিঝুমও মারা গেছে। মোটা অঙ্কের বিল চুকিয়ে বউ আর মেয়ের লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বসল অর্ক। সাদা কাপড়ে মোড়ানো কোলবালিশের মতো পাশাপাশি দুটি মরদেহ। একটি ছোট, একটি বড়। একে একে অতীতের স্মৃতি তার মনে পরতে থাকল। ডাক্তারের কাছে প্রথমদিন আসা, দুই জোড়া জুতা কিনে বাসায় ফেরা, বউয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলা- আমাদের মেয়ের নাম রাখব অর্ণি।

:: হারুয়া, কিশোরগঞ্জ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়