চট্টগ্রাম অফিস : ব্যাবসায়িক দ্ব›দ্ব ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ এলাকায় আফজাল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। ওই সময়ে আফজালের বড় ভাই মো. মামুন এবং তার অপর এক ভাই ইকবাল নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় জেলহাজতে ছিলেন।
চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে মামুন তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর মিরসরাইয়ে যুবলীগকর্মী মো. শহিদুল ইসলাম আকাশকে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন মো. মামুন ও তার সহযোগীরা।
গতকাল রবিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমনই তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ। এর আগে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রথমে নগরের পাহাড়তলীর সিডিএ মার্কেট এলাকা থেকে মূল আসামি মো. মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রাত ৮টায় তার দুই সহযোগী মুকেশ চন্দ্র দাস ওরফে সৌরভ দাস (২৪) ও মো. ইকবালকে (২২) চাঁদপুর জেলার পুরান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, জেল থেকে বের হয়ে মামুন ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তার সহযোগী মোতালেব, রাজু, নেজাম, হামিদ ও মুকেশসহ পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর যুবলীগকর্মী মো. শহিদুল ইসলাম আকাশকে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে আসামিরা।
নিহত শহিদুল এবং তার বাবা প্রতিদিনের মতো তাদের ফার্নিচারের দোকানে যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় মো. মামুন এবং তার সহযোগীরা বিভিন্ন অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দোকানে গিয়ে শহিদুল ইসলামকে গালাগাল করতে থাকে। একপর্যায়ে শহিদুল ইসলামের প্রতিবাদ জানালে আসামি মো. মামুন তাকে টেনে দোকানের বাইরে নিয়ে যায় এবং কিরিচ দিয়ে মাথার পেছনে গভীর জখম করে আহত করে।
এম এ ইউসুফ বলেন, আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে শহিদুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামি মো. মোতালেব তার হাতে থাকা ধামা দিয়ে শহিদুলকে গলায় এবং থুতনীতে গুরুতর জখম করে। একপর্যায়ে শহিদুলের বাবা তার ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে মামুন তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এবং দোকানের সামনে রাস্তায় তার বুকের উপর বসে হুমকি দেয়- যদি সে বেশি নড়াচড়া করে তবে তাকেও জবাই করে দেবে।
এরপর মামুন ও তার সহযোগিরা তাদের হাতে থাকা ছুরি, কিরিচ এবং বিভিন্ন ধারাল অস্ত্র দিয়ে শহিদুলকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে তারা গুরুতর আহত অবস্থায় শহিদুলকে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
তিনি আরো বলেন, আকাশকে হত্যার পরপরই তারা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। গত ২১ সেপ্টেম্বর নিহত শহিদুলের বোন বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে মূল আসামি মো. মামুন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।