রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

দেশে দেশে বন্যা খরা দাবানল : প্রকৃতির পাল্টা প্রতিশোধ!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ভারত, পাকিস্তানে যখন বন্যা, তখন দাবানলে পুড়ছে ইউরোপ। আবার চীনের এক পাশ যখন খরায় পুড়ছে, অন্য পাশ তখন বন্যায় প্লাবিত। বাংলাদেশেও প্রকৃতির আচরণ বোঝা দায়। এই খরা তো এই বন্যা। বর্ষায় বৃষ্টির দেখা পাওয়া ভার। শরৎকালে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে যাওয়ার বদলে ক্ষণে ক্ষণে কালো মেঘে ঢেকেছে আকাশ। বর্ষার বৃষ্টি ঝরেছে শরতে। দুপুরবেলা কটকটে রোদে শরীর যখন ঘামছে, সন্ধ্যাবেলাতে আবার তখন শীত শীত অনুভূতি। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জলবায়ুবিষয়ক ওয়েবসাইট কার্বন ব্রিফ বলছে, কার্বন নিঃসরণে প্রথমে রয়েছে কানাডা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া। তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে এশিয়ার দেশগুলোয়। হঠাৎ আসা প্রবল বর্ষণে এ বছর বিপর্যস্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। গত মে ও জুনে বাংলাদেশ ও ভারত বন্যার কবলে পড়ে। কিছুদিন আগের বন্যায় পাকিস্তানে ১ হাজার ১০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। জলোচ্ছ¡াসে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। দেশটির এক-তৃতীয়াংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।
পাকিস্তানে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বন্যার জন্য গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণকে দায়ী করেছেন। জিও নিউজের খবরে জানা যায়, এক সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, ‘আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এখন প্রকৃতিও পাল্টা প্রতিশোধ নিচ্ছে। এসব কারণে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’ এএফপির প্রতিবেদনে পাকিস্তানে এমন বন্যার কারণ সম্পর্কে বলেছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গ্রানথাম ইনস্টিটিউটের জলবায়ুবিজ্ঞানের শিক্ষক ফ্রেডরিক ওটো। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ঐতিহাসিক নথিপত্রে দেখা যায়, মানুষ বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করা শুরু করার পর থেকে এ অঞ্চলে বৃষ্টি বেড়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এই সপ্তাহে বলেছে, গত ৫০ বছরে বিশ্বে আবহাওয়া-সম্পর্কিত দুর্যোগ পাঁচ গুণ বেড়েছে। এতে গড়ে প্রতিদিন ১১৫ জন প্রাণ হারাচ্ছে।
সিএনএন ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের প্রধান আবহাওয়াবিদ সরদার সরফরাজ সতর্ক করে বলেছেন, উষ্ণতা বাড়ার কারণে হিমবাহ গলতে থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এর জন্য মূলত জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী। শুধু চলতি বছরই বিভিন্ন হ্রদে হিমবাহ গলার পরিমাণ অন্য সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলো যখন বন্যাপ্লাবিত, তখন মধ্যপ্রাচ্য আরও বেশি উষ্ণ হচ্ছে। আগামী নভেম্বরে মিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের কপ ২৭ জলবায়ু সম্মেলন। এই সম্মেলনকে সামনে রেখে রিভিউস অব জিওফিজিক্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হালনাগাদ গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষকেরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রতি দশকে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ৪৫ ডিগ্রি। আর এ সময়ের মধ্যে প্রতি দশকে বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ২৭ ডিগ্রি। ১৯৮১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে। মিসর, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, বাহরাইন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানকে গবেষণার আওতায় রাখা হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য যে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও অঞ্চলটির বড় ধরনের দায়ও আছে। তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম একটি উৎসে পরিণত হওয়ার পথে আছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের দিক থেকে কয়েক বছরে অঞ্চলটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থান দখল করে নেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে শুষ্কতা বাড়ার পাশাপাশি ইউরোপে বাড়ছে গরম। চোখ রাঙাচ্ছে দাবানল। এ বছর গ্রীষ্মের দাবদাহে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ পুড়েছে দাবানলে। ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন ও গ্রিসের হাজার হাজার হেক্টর এলাকা ধ্বংস হয়েছে দাবানলে। দাবানলে মারা গেছে কয়েকশ মানুষ। গরমের কারণে যুক্তরাজ্যে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
চীনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তো অদ্ভুতুড়ে। এ বছরের জুন থেকে আগস্ট মাসে চীন একদিকে বন্যায় ডুবেছে, আবার অন্যদিকে খরায় পুড়েছে। এ সময় চীনের দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংজুতে প্রবল বন্যা হয়। সেই পরিস্থিতির মধ্যেই দেশটির মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর কিছুদিন পর তীব্র দাবদাহের কারণে চীনে ‘হলুদ সতর্কতা’ বা ইয়েলো অ্যালার্ট জারি করা হয়।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়