হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

প্রকৃত ব্যবসায়ীরা উপেক্ষিত : ডিসিআর কাটা দোকানে ভাড়া বাণিজ্য

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর বাজারে ব্যক্তি মালিকানাধীন দোকানঘরের সংখ্যা সীমিত। এদের মধ্যে ডা. মো. মফিজ উদ্দিন, মো. ইয়ার উদ্দিন এবং মো. জিন্নাহর দোকান ঘর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাকি সব দোকানঘরই ডিসিআর কাটা। এই ডিসিআর কাটা দোকানঘরের সংখ্যা ৮৪টি। মূলত ব্যবসা আছে কিন্তু বাজারে নিজস্ব দোকান নাই, তাদেরই চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা করার জন্য ডিসিকাটা দোকানঘরগুলো বরাদ্দ দেন এসিল্যান্ড। নিয়ম অনুযায়ী এই ডিসিআর কাটা দোকানঘরগুলো অন্য কারো কাছে ভাড়া দেয়া যাবে না। তবে অভিযোগ রয়েছে, মহাদেবপুর বাজারের ডিসিআর কাটা প্রায় দোকানঘরই ভাড়া দেয়া। ডিসিআর কাটা দোকানঘরপ্রাপ্তরা প্রকৃত ব্যবসায়ী না। তাই তারা এই দোকানঘর অন্যের কাছে ভাড়া দেন এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া আদায় করেন। যা ডিসিআর কাটা ঘরের ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘন। আবার একজন ব্যক্তি একাধিক বরাদ্দ পাবে না শর্ত উল্লেখ থাকলেও বাস্তবক্ষেত্রে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি বাজারের একাধিক ঘরের মালিক।
জানা গেছে, এসিল্যান্ডের মাধ্যমে বাৎসরিক ২৬৫ টাকায় ডিসিআর কাটা দোকানঘরগুলো ভাড়া নেন দোকানঘরহীন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। তবে মহাদেবপুর বাজারে দোকানঘরহীন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে ডিসিআর কাটা দোকানঘর বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এ কারণে তারা মাসিক প্রতিটি ডিসিআর কাটা দোকানঘর আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। এমনকি ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা ভাড়া বাবদ অগ্রিম নিচ্ছেন। কিন্তু এসিল্যান্ড কর্তৃক এই ঘরগুলো তাদের পাওয়ার কথা নয়।
মহাদেবপুর বাজারে ব্যবসা আছে, দোকান নাই এমন ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে ওই বাজারে ব্যবসা করেন। কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনো দোকানঘর নেই। অথচ ডিসিআর কাটা দোকানঘরগুলো তাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় না। অনতিবিলম্বে এসিল্যান্ড অফিস থেকে তদন্ত করে অব্যবসায়ীদের ডিসিআর বাতিল করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নামে তা বরাদ্দ দেয়া হোক। এতে বেগবান হবে দেশের অর্থনৈতিক চাকা।
মহাদেবপুর বাজারের ডিসিআর কাটা দোকানের মালিক মো. হানিফ বলেন, ‘ইউনিয়ন ভূমি অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, ইউএনও অফিস কিংবা অন্য কোনো সরকারি দপ্তরের লোকজন আমাদের ডিসিআর কাটা দোকানঘরের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে আসলে তাদের বলি- আমার ঘরের একাংশে যিনি ব্যবসা করছেন, তিনি আমার ব্যবসায়িক অংশীদার। আমি অন্য দোকানদারের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ঘর ভাড়া দিয়েছি এমন কথা কখনো প্রশাসনের লোকজনের কাছে বলি না। কারণ ব্যবসা করার জন্য সরকার আমার নামে ডিসিআর কেটে দিয়েছেন। এ ঘর অন্য কারো কাছে ভাড়া দেয়ার বিধান নেই। এমনকি বরাদ্দ প্রাপ্ত দোকানঘরের ভিটা পাকা, দোকানে সাটার লাগানো কিংবা ঘর দোতলা করতে হলে অবশ্যই এসিল্যান্ড অফিসের অনুমতি নিতে হয়। এই বাজারের অধিকাংশ ঘরের ভিটা পাকা, সামনে সাটার এবং কয়েকটি ঘর দোতলা ও ওয়াল করা হয়েছে। কিন্তু কয়টি ঘরের মালিক এসিল্যান্ড অফিসের অনুমতি নিয়েছেন? আমি আমার ঘরের একাংশ স্বপন মেকারের কাছে মাসে আড়াই হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছি।’ স্বপনের কাছ থেকে অগ্রিম কত নিয়েছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘অগ্রিম ত্রিশ হাজার টাকা এবং মাসিক ভাড়া আড়াই হাজার টাকা।’
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, বর্তমানে যেসব ডিসিআর কাটা দোকানঘর মালিক নিজে ব্যবসা না করে অন্য দোকানদারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন, তাদের বিষয়ে কী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা অবগত নন? অবশ্যই জানেন। কিন্তু সম্পর্কের খাতিরে কিংবা অন্য কোনো বিশেষ কারণে আসল তথ্য মাটি চাপা পড়ে আছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাজারের মূল ব্যবসায়ীরা। মহাদেবপুর বাজার বনিক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি হায়দার আলী জানান, তৎকালীন জমিদার মহাদেব রায় তার নিজ জমিতে এ বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাজারের প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে সরকারের কাছে আমার দাবি, যে বা যারা ডিসিআরের ঘর অন্যের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তাদের ডিসিআর অনতিবিলম্বে বাতিল করা হোক। একই সঙ্গে যারা বাজারের প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হোক। শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আনিছুর রহমান খান বলেন, ‘ডিসিআর কাটা ঘর অন্যের কাছে ভাড়া দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মহাদেবপুর বাজারের এই বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। ডিসিআর কাটা ঘর যারা ভাড়া দিয়েছেন ডিসি স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুন বরাদ্দ দেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়