মর্টার শেল নিক্ষেপ,: রোহিঙ্গা নিহত, আহত ছয়জন

আগের সংবাদ

মাঠে মারমুখী আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

এসসিও সামিটে ইউক্রেন ‘যুদ্ধ সমাপ্তি’র ইঙ্গিত পুতিনের!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংগঠন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) উজবেকিস্তান সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যে বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন পুতিন। কিন্তু কিভাবে সেই সমাপ্তি টানবেন বা কিভাবে যুদ্ধের সময় কমিয়ে আনবেন- তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। ফলে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে। যদিও মোদি আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন সমস্যার সমাধান চাইছেন, তবুও পুতিনের এই ইঙ্গিত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহল। ভারত যে যুদ্ধের বিরোধী, সেটা এই বৈঠকে স্পষ্ট করে বলেছেন মোদি। সেটা আগে তিনি ফোনেও বলেছেন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আবারো আলোচনা হবে, সে কথাও বলেন মোদি। ভারত-রাশিয়া যে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধু তাও মনে করিয়ে দেন তিনি। জবাবে পুতিন বলেন, ইউক্রেন নিয়ে আপনার উদ্বেগের কথা আমি জানি। এই বিষয়টি দ্রুত শেষ হোক সেটা আমরাও চাই। এই বিষয়ে যাই হয় সেটা তিনি মোদিকে জানাবেন বলে প্রতিশ্রæতিও দেন।
তবে পুতিনের পরবর্তী পদক্ষেপ রহস্যময় বলেই মনে করছেন অনেকে। পশ্চিমা কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ আরো জোরদার হতে পারে। কারণ কয়েকজন এশীয় নেতার সঙ্গে এই সম্মেলনে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনীয় বেসামরিক স্থাপনায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘সতর্কতামূলক’ হামলা ছিল। তার মানে আরো ভয়ঙ্কর অভিযান সামনে আছে।
যদিও কোন পূর্বশর্ত উল্লেখ না করে পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। রুশ প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার চেষ্টা করছে এবং মস্কো এগুলোর পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তার কথায়, প্রকৃতপক্ষে আমরা সংযতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি। তবে এটি সাময়িক। পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আমাদের জবাব আরো ভয়াবহ হবে।
গত বুধবার রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স¤প্রতি দখলমুক্ত করা ইজিউমে একটি গণকবর পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে অন্তত ৪৪৫ জনের মরদেহ রয়েছে।
এরপরও পুতিন বারবার রাশিয়ার আক্রমণ জোরদার হতে পারে বলে সতর্ক করে আসছেন। মার্কিন কর্মকর্তারাও এখন এই হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাদের ধারণা, ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন বাড়াতে পারে রাশিয়া অথবা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহকারী ন্যাটো দেশের ওপর হামলা চালাতে পারে। ইউক্রেনের পূর্ব বা দক্ষিণে আক্রমণ জোরদার বা ইউক্রেনীয় নেতৃত্বকে টার্গেট করে অভিযান শুরু করতে পারে রাশিয়া।
শুক্রবার পুতিন বলেছেন, আমরা নিজেদের পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে লড়াই করছি না। আক্রমণের সামরিক পরিকল্পনায় কোন সামঞ্জস্য আনার প্রয়োজন নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু পুতিন যখন মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসেন তখন তার কণ্ঠ ছিল অনেক বেশি সংযত। যুদ্ধের সময় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্থানের উৎস চীন ও ভারত। রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়কৃত মূল্যে তেল কিনছে ভারত। রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভোটাভুটিতে ভোটদানে বিরত থেকে পুতিনকে স্বস্তি দিয়েছে দেশ দুটি। রুশ তেল না কিনতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়কৃত মূল্যে অপরিশোধিত তেল কিনে যাচ্ছে ভারত। এমন সময় তারা রুশ তেল কিনছে যখন খাদ্যদ্রব্য ও জ¦ালানির মূল্য বাড়ছে। ইউক্রেনের এক কূটনীতিক বলেছেন, এই ছাড়ের মূল্য ইউক্রেনীয়দের রক্তে পরিশোধ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে এখন অনেক দৃঢ় হলেও মস্কোর সঙ্গে তাদের দীর্ঘ ও পুরনো বন্ধন রয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য স্বল্পমূল্যের অস্ত্রের প্রধান উৎস এখনো রাশিয়া। ফলে শুক্রবার মোদি যখন ক্যামেরার সামনে বলেন, ‘আজকের যুগ যুদ্ধের নয়’, তখন তা ইঙ্গিত দেয় ক্রেমলিন তাদের বন্ধু হলেও এখন নিজেদের একটু দূরে রাখতে চাইছে নয়াদিল্লি। মোদিকে পুতিন বলেছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য দায়ী ইউক্রেন। কিয়েভ শান্তি চাইছে না। কিন্তু পুতিন স্বীকার করেছেন যুদ্ধের বিষয়ে মোদির অসন্তুষ্টি রয়েছে। নিজের সংবাদ সম্মেলনে পুতিন আরেক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। বলেছেন, চীনের সরকারও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে খুশি নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক খাদ্য ও জ¦ালানির বাজারের অস্থিতিশীলতা চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। রুশ সংবাদমাধ্যমে পুতিনের উজবেকিস্তানে বেশ কয়েকটি এশীয় দেশের নেতার সঙ্গে বৈঠককে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে পশ্চিমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া হিসেবে তুলে ধরছে। শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, তুরস্ক শিগগিরই রুশ গ্যাসের মূল্য রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করবে। এতে করে মার্কিন ডলারের ওপর রাশিয়ার নির্ভরশীলতা কমবে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে সেই ইঙ্গিতই মিলেছে। বিশ্বের প্রথম ও দ্বিতীয় জনবহুল দুই দেশের রাষ্ট্রনেতারা এক্ষেত্রে ‘সাবধানী পদক্ষেপ’ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা খারিজ করেছিলেন পুতিন। বরং আক্রমণের তীব্রতা আরো বাড়ানোর ‘বার্তা’ ছিল মস্কোর তরফে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়