মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

পায়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে অদম্য মেধাবী মানিক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : জন্ম থেকেই দুই হাত না থাকলেও সুস্থ ও স্বাভাবিক অন্য শিক্ষার্থীর মতোই পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন মানিক রহমান। পা দিয়ে লিখেও অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় তার লেখা মাধুর্যপূর্ণ। এই শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক রহমানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। তার বাবা মিজানুর রহমান একজন ক্ষুদ্র ওষুধ ব্যবসায়ী। বাবা-মায়ের বড় ছেলে মানিক। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সে বড় হয়ে ওঠে। তার দুটো হাত না থাকলেও পড়ালেখায় কখোনো পিছিয়ে পড়েনি এই লড়াকু সৈনিক। তাকে কঠোর পরিশ্রম করা শিখিয়েছেন তার পরিবার। শুধু যে দুই পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তা না। মানিক পা দিয়েই আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে। শুধু মোবাইলে কথা বলাই নয়, সে পা দিয়েই কম্পিউটার টাইপ, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী।
মানিক ২০১৬ সালে জছি মিঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পায় এবং ২০২০ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এজন্য মানিকের মা মরিয়ম বেগমের অবদানটাই অনেক বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (পাইলট) ও ফুলবাড়ী (কুড়ি)-৬৬৮নং কেন্দ্রের ৮নং কক্ষে সে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দেয়। মানিক রহমান বলেন, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহর রহমতে পিএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমাদের দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে যেন এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।
ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (পাইলট) স্কুলের কেন্দ্র সচিব মশিউর রহমান জানান, মানিক রহমান প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হওয়ায় তার জন্য চৌকিতে বসে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বাড়তি ২০ মিনিট দেয়াসহ সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছি। তিনি আরো জানান, জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের চেয়ে পড়ালেখা ও লেখার ধরন একেবারে আলাদা। পা দিয়ে লিখে কিভাবে এত সুন্দর লেখা হয় এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার। আমি মানিক রহমানের মঙ্গল কামনা করছি। সে যেন বাবা-মা ও তার স্বপ্ন পূরণ করে আত্মনির্ভরশীল হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়