মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন : পেয়ারুলের মনোনয়নে আ.লীগ নেতাকর্মীদের উচ্ছ¡াস

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও দক্ষ সংগঠক উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ঘটনায় উচ্ছ¡সিত এলাকার নেতাকর্মীরা। ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত পেয়ারুল ইসলাম নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামের প্রান্তিক এলাকায় উন্নয়ন কাজ করবেন বলে আশা অনেকের। তিনি নিজেও চট্টগ্রামের নেতাদের পরামর্শ নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর উন্নয়নে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।
গত শনিবার সন্ধ্যায় পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়ন প্রাপ্তির খবরে তার জন্মস্থান ফটিকছড়িতে এবং চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। মনোনয়ন প্রাপ্তির পর চট্টগ্রামে পৌঁছার পর তাকে স্বাগত জানিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংবর্ধনা দেয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, দলীয় সভানেত্রীর নিজস্ব টিম, বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক জরিপে যিনি এগিয়ে ছিলেন, তাকেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কোনো বিতর্কিত, অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি জেলা পরিষদের মনোনয়ন পাননি। যারা ত্যাগী, গ্রহণযোগ্য ও পরীক্ষিত তারাই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে জেলা পরিষদ। এখানে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তা, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, দলে ত্যাগ ও আনুগত্য ইত্যাদি বিবেচনায় মনোনয়ন দিয়েছেন। নানা কারণে যারা বিতর্কিত হয়েছেন, দলের শীর্ষ পদে থাকলেও তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। প্রত্যেকের জীবনবৃত্তান্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ৬০টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মনোনয়ন পেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে মূল্যায়ন করেছেন তার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সারা জীবন ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করেছি। ভবিষ্যতেও করব। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। আমার সঙ্গে থাকায় চট্টগ্রামবাসীর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। যারা মনোনয়ন চেয়েছিলেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি জেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামবাসীর উন্নয়নে প্রাণপণ চেষ্টা করব। চট্টগ্রামের এমপি-মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দের পরামর্শ নিয়ে, সমন্বয় করে চট্টগ্রামের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করব।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে অতীতে তেমন আগ্রহ দেখা না গেলেও এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ১৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র নিয়ে জমা দেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, মো. ইদ্রিস, পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সহসভাপতি ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, অধ্যাপক মো. মাঈনুদ্দিন প্রমুখ।
, সহসভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. ওসমান গণি চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি লায়ন শামসুল হক, রূপালী ব্যাংকের পরিচালক আবু সুফিয়ান, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের সাবেক মহাসচিব আবুল হাশেম, আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রশিদ।
এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ১৯৫৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর ফটিকছড়ির নানুপুর ইউনিয়নের কিপাইতনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকেই তার রাজনীতির হাতেখড়ি। উপজেলার আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৭৩ সালে স্কুলছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন নাজিরহাট কলেজে। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন কলেজ ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক। একই বছরে তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যে কয়জন নেতা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক।
এটিএম পেয়ারুল ১৯৯০ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৩-৯৪ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহসম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে নৌকার হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন, তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে ফটিকছড়ির ভুজপুরে মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। কয়েকশ গাড়ি ও মোটরসাইকেলসহ মিছিলটি কাজীর হাটে পৌঁছলে বড় মাদ্রাসার মসজিদের মাইক থেকে গুজব ছড়িয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে গাড়িবহরসহ হামলা চালানো হয়। জামায়াতে ইসলামীর ওই এলাকার আমির শফিউল্লাহ নূরীর নেতৃত্বে এ হামলা হয়। হামলায় আওয়ামী লীগের ৩ কর্মী মারা যান। আহত হন পুলিশসহ শতাধিক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। পুড়িয়ে দেয়া হয় প্রায় দুইশ মোটরসাইকেল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়