খন্দকার মোশাররফ : বিএনপিকে নির্যাতন করে দমিয়ে রাখা যাবে না

আগের সংবাদ

দুই সংকটে তৈরি পোশাক খাত : সংকট কাটলে ৮ বছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের আশা

পরের সংবাদ

দুবছর পর আবারো ‘হেইয়ারে হেইয়াহো’ সুরে মুখর তিতাস

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ঢেউয়ের কলতান, হেইয়ারে হেইয়াহো আর সারিবদ্ধ বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দে উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী। দুপাড়ের হাজারো দর্শকের করতালিতে উৎসবমুখর পরিবেশ। গতকাল রবিবার তিতাসপাড়ে ভাদ্রের প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ উপভোগ করেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসায় ২ বছর পর এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। গতকাল রবিবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল দারাজ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানী লিমিটেড, ইউনিভার্সেল মেডিকেল সার্ভিস লিমিটেড।
করোনা মহামারি পরিস্থিতির জন্য বিগত দুই বছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই এবারের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা চলাকালে তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর সুকুমার বিনোদন পিপাসু দর্শকদের প্রাণভরা উচ্ছ¡াস যেন একাকার হয়ে উঠে।
তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার শিমরাইল কান্দিগাঁও গ্রাম পয়েন্ট থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে পৌর এলাকার মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পর্যন্ত (প্রায় দেড় কিলোমিটার) গিয়ে প্রতিযোগিতা শেষ হয়। নৌকাবাইচে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের ছয়টি করে এবং কিশোরগঞ্জের একটি নৌকা রয়েছে। প্রথম চারটি ধাপে ১৩টি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রত্যেকটি ধাপ থেকে একটি করে বিজয়ীসহ চারটি নৌকা চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
বেলা আড়াইটায় তিতাসের শিমরাইলকান্দি গাঁওগ্রাম পয়েন্টে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
উদ্বোধনের পর রংবেরংয়ের বাহারি পোশাক পরা মাঝিদল তাদের সুসজ্জিত নৌকা নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এসময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়।
দুপাড়ের দর্শনার্থীরাও স্বত:স্ফুর্ত আবেগে সুর মেলায় মাঝিদের সাথে-‘মারো টান, হেইয়ারে হেইয়াহো’।
এদিকে, উৎসবমুখর পরিবেশে এ নৌকাবাইচ উপভোগ করতে তিতাসের দুই তীরে প্রায় অর্ধ লাখ দর্শনার্থী জড়ো হন। তারা তীরবর্তী ভবনের ছাদ, বিভিন্ন ঘাট এবং নৌযানের ওপর বসে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। আবার কেউ কেউ নৌকা ভাড়া নিয়ে পরিবার পরিজন, বন্ধু-বান্ধবকে সাথে নিয়ে নৌকা বাইচ উপভোগ করে। এ সময় বাইচ নির্বিঘœ করতে নদীতে জেলা পুলিশ ও নৌ পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দেন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিকালে মেড্ডা সরকারি শিশু পরিবার পয়েন্টে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মেয়র নায়ার কবির ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ফাহিমা খাতুন প্রমুখ।
প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারী নৌকাকে ১ লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী নৌকাকে ৬০ হাজার টাকা ও তৃতীয় স্থান অধিকারী নৌকাকে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হয়। এছাড়া বাকি অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক দলকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়