খন্দকার মোশাররফ : বিএনপিকে নির্যাতন করে দমিয়ে রাখা যাবে না

আগের সংবাদ

দুই সংকটে তৈরি পোশাক খাত : সংকট কাটলে ৮ বছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের আশা

পরের সংবাদ

আসাদুজ্জামান নূর : মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কম ছিল তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণির

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাবি প্রতিনিধি : রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ কম ছিল। অপরপক্ষে নিরক্ষর কৃষকের সন্তানরাই মুক্তিযুদ্ধে বেশি অংশগ্রহণ করেছেন। গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের শততম আয়োজন ‘কিশোরের মুক্তিযুদ্ধ, মেসবাহ কামালের স্মৃতি ও সংগ্রাম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রকৃত সত্য হলো, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ ছিল নিরক্ষর কৃষকের সন্তান। যারা ইতিহাস, রাজনীতি বা ইতিহাসবিদদের জীবনী পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছে তাদের সংখ্যাটা আদতে কম ছিল। তিনি আরো বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চ এলে আমরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেখি। এতে শহুরে দুএকজন মুক্তিযোদ্ধা কথা বলেন। তবে এর বাইরেও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছেন। তাদের কথা আমরা শুনি না। গ্রামের নিরক্ষর কৃষকের সন্তান যারা হয়তো সর্বোচ্চ স্কুল পর্যন্ত পড়েছে তাদের মধ্যে গভীর দেশপ্রেমের ভাবনাটা কীভাবে এলো সেটা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। একটা লুঙ্গি, গেঞ্জি পরে তারা হালকা অস্ত্র নিয়ে রাতে বেরিয়ে পড়েছে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী একটি সেনাবাহিনীর সামনে। এই সাহস, দেশপ্রেম কোথা থেকে তারা পেলো?
তিনি বলেন, তাদের বিশ্বাসের জায়গাটা ছিল অন্তত প্রবল যে, দেশ স্বাধীন হবে এবং আমরা একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পাবো। তবে এই বিশ্বাসের জন্ম হয়েছে কোথা থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, বঙ্গবন্ধু বলেছেন যুদ্ধে যেতে হবে। দ্বিতীয় কোনো বিষয় তাদের মাথায় ছিল না। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার কাছে বঙ্গবন্ধু সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না কিন্তু সশরীরে উপস্থিত না থেকে এত প্রবলভাবে উপস্থিত থাকতে পারে সেটা মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেননি তারা অনুভব করতে পারবেন না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাতা ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোররা অমানবিক যা কিছু দেখেছে মানসিকভাবে তাদের সারাজীবন ধরে এটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এছাড়া ধর্ষণ দ্বারা পুরো জাতি বা কমিউনিটিকে অপমান করা হয়, যা পাকিস্তানিরা আমাদের করেছে। পাকিস্তানি যোদ্ধাদের অস্ত্র দেয়া হয় এবং যা খুশি সেটা করার ক্ষমতা দেয়াতে তারা তাদের শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলেছিল। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোরদের অবদানকে যেভাবে তুলে ধরার কথা সেভাবে তুলে ধরা হয় না। তাদের ইতাহাসকে চর্চা করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, একাত্তরে আমাদের সবার বয়স অন্তত ১০ বছর করে বেড়ে গিয়েছিল। সে সময়টা এমন ছিল যে মনে হতো ইথারে কথা ভেসে আসছে। কোনো ঘটনা ঘটলে সারাদেশে মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে যেত। রেডিও টেলিভিশন তখন পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তারপরও বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা একদিন পরে প্রচারিত হয়েছে।
জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক বিভাগের সম্পাদক অঞ্জন মেহেদীর সঞ্চালনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জন-ইতিহাস ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. সানিয়া সিতারা। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক শরিফ উদ্দিন আহমদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়