একদিনে ২৭৮ করোনা রোগী শনাক্ত

আগের সংবাদ

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব : বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি ও পরিবেশ, বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে

পরের সংবাদ

মামলা আদালতে চলমান : আগেই বাদী-বিবাদীর হাতে রায়ের কপি, নথিতে নেই

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কোড়লগাড়ী গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী মেহেদী মির্জা লুলুর নিয়োগের বৈধতা চালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি মামলা জয়পুরহাট অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চলমান রয়েছে।
সেই মামলার আপিল শুনানির দিন ধার্য্য থাকলেও নিষ্পত্তির আগেই রায় প্রদান করা হয়েছে। ওই আদালতের বিচারকের স্বাক্ষরিত এমন রায়ের আদেশের কপি বাদী ও বিবাদীর হাতে রয়েছে। তবে মামলার মূল নথিতে ওই আদেশের কপি নেই। অথচ মামলার নথিতে থাকা ৪১নং আদেশটি কজলিস্টে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আপিল শুনানির জন্য রয়েছে। নথিতে না থাকলেও বিচারকের স্বাক্ষর করা ওই আদেশের কপি দেখিয়ে মামলার বিবাদী জমি দখলে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন ঘটনায় মামলার বাদীসহ অবাক এলাকাবাসী। এ খবরে হৈচৈ পড়ে গেছে আদালত পাড়ায়।
মামলার বাদী আজাহার আলী বলেন, আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ গোলাম সরোয়ার স্বাক্ষরিত রায়ের কপি হাতে রয়েছে। রায়ের কপির সত্যতা ও মামলার আপডেট তথ্য জানতে আদালতে ইনফরমেশন স্লিপে আবেদন করেন তিনি। আদালত লিখিত স্লিপে জানান কোনো রায় হয়নি, মামলাটি চলমান রয়েছে।
বাদী আজাহার আলী বলেন, ওই আদালতের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী যোগসাজশ করে চলমান মামলাকে নিষ্পত্তি হয়েছে দেখিয়ে ২৩ পাতার একটি রায় জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করেন এবং সেই রায়ের কপিতে বিচারকের স্বাক্ষর নেন। আবার সেই রায়ের জাবেদা কপি তুলে বিবাদীরা তাদের নিয়োগকৃত আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার বাদীসহ বিভিন্ন দপ্তরে পৌঁছান।
এ দিকে মামলা চলমান থাকলেও জালিয়াতি করে বিচারকের স্বাক্ষর নেয়া ২৩ পাতার ওই রায় বিভিন্ন দপ্তরে সরবরাহ ও জমি দখলের চেষ্টায় গত ২৪ আগস্ট জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০/২০১৭ মিস আপিল মামলার বিবাদী ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন চলমান মামলার বাদী আজাহার আলী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালত ও বাদীর আইনজীবী উজ্জল হোসেন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কোড়লগাড়ী গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ১০০ বিঘা সম্পত্তির ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী ছিলেন ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মজিদ। তার মৃত্যুর পর মোতাওয়াল্লী নিয়োগ পান মেহেদী মির্জা লুলু। তিনিও মারা গেলে তার ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব পান। তার মোতাওয়াল্লী নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই গ্রামের আজাহার আলী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (৫০১৯/১৫) দায়ের করেন। গত ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই রিট মামলায় রায় পান বাদী। সেই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন বিবাদী। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট লিভ-টু-আপিল (১৪৬৫/১৬) প্রত্যাখ্যান করে রিট পিটিশনার আজাহার আলীকে জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিস আপিল দায়ের করার পরামর্শ দেন। পরামর্শ পেয়ে আজাহার আলী জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিস আপিল (২০/২০১৭) দায়ের করলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালতে পাঠানো হয়। গত ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর জয়পুরহাট অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আদালত মিস আপিলের নথিপ্রাপ্ত হন এবং ওই মামলা আজো চলমান রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, আদালত চলতি বছরের ২০ মার্চ ৪১নং আদেশে পরবর্তী শুনানির দিন ২৩ আগস্ট ধার্য্য করেন। ওইদিন আদালতে হাজির হয়ে বাদী আজাহার আলী আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করেন এবং আদালত আগামী ২৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করেন। অথচ গত ১০ মার্চ ওই মামলার বিচারক গোলাম গোলাম সরোয়ার স্বাক্ষরিত ৪১নং আদেশ মূলে ২৩ পাতার একটি রায়ের জাবেদা কপি সরবরাহ করা হয় আদালত থেকেই। বাদীর হাতে সেই রায়ের কপি পৌঁছলে তিনি আদালতের মাধ্যমে জানতে পারেন মামলার নথিতে কোনো রায়ের কপি নেই। বরং আদালত তাকে জানান মামলা চলমান রয়েছে।
অনুসন্ধানে আদালতে রায়ের জাবেদা নকল সরবরাহ রেজিস্টারে দেখা গেছে বিবাদী মাহবুবুর রহমানের পক্ষে গত ১৬ মার্চ আইনজীবী এডভোকেট আবু তালেব জাবেদা নকলের জন্য আদালতে আবেদন করেন। আবার তিনি ওই দিন রেজিস্টার বহির ৮৯১ সিরিয়ালে ২০/১৭নং মিস আপিল মামলার রায়ের আদেশের জাবেদা নকল গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে বিবাদী মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ১০ মার্চ আদালত ২০/১৭নং মিস আপিলের রায় প্রদান করেছেন ও রায় আমার পক্ষেই হয়েছে। পরে রায়ের জাবেদা কপি আমার আইনজীবী এডভোকেট আবু তালেবের মাধ্যমে ওই আদালত থেকে উঠিয়ে নকলের ফটোকপি মামলার বাদীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আমি নিজেই পৌঁছে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ওই রায় নাকি জালিয়াতি করে দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা করেছেন বাদী আজাহার।
এ বিষয়ে বিবাদীর আইনজীবী এডভোকেট আবু তালেব বলেন, রায় প্রদানের পর তার জাবেদা নকল উঠানোর জন্য আদালতে যে আবেদন করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। ওই আবেদনে আমার নামে যে স্বাক্ষর দেয়া রয়েছে সেই স্বাক্ষর আমার না। আমার স্বাক্ষরের সঙ্গে আবেদনের স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই।
বাদী আজাহার আলী বলেন, মামলা নিষ্পত্তির আগে রায়ের কপি হাতে পেয়ে আমি অবাক। মামলা চলমান রয়েছে এটাই জানি। শুনানির দিনে হাজিরাও দিয়েছি। মামলা নিষ্পত্তির আগেই রায় প্রদান কীভাবে সম্ভব। তাই পরদিন আদালতে গিয়ে আমার আইনজীবীকে ওই রায়ের কপি দেই।
তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এমন কোনো রায় হয়নি। তা জানতে পেরে জালিয়াতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি এবং আদালতে নতুন একটি মামলা করি।
বাদীর আইনজীবী এডভোকেট উজ্জল হোসেন বলেন, যে রায় দেয়া হয়েছে তা ২০/১৭নং মিস আপিলের নথিতে পাওয়া যায়নি। আদালতে ওই রায় নিয়ে যা কিছু করা হয়েছে তা জালিয়াতির মাধ্যমেই করা হয়েছে।
সে কারণে বাদী গত ২৪ আগস্ট জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসলি এডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল পিপি বলেন, যারা এমন জালিয়াতি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আছেন তারা যেই হোক না কেন তাদের ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়