একদিনে ২৭৮ করোনা রোগী শনাক্ত

আগের সংবাদ

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব : বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি ও পরিবেশ, বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে

পরের সংবাদ

এক মাসে ৩২টি : জামালপুরে ট্রান্সফরমার চুরির প্রতিযোগিতা!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে চলছে ট্রান্সফরমার চুরির প্রতিযোগিতা। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পল্লী বিদুতের ৩২টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত এক মাসে জামালপুর সদর উপজেলার গোপালপুর, দখলপুর ও মির্জাপুর গ্রামে চুরি হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের ১৯টি ট্রান্সফরমার। এছাড়াও জেলার সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ,ইসলামপুর, বকশিগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ থেকে চুরি হয়েছে আরো ১৩টি ট্রান্সফরমার।
স্থানীয়রা বলছেন, রাতের আঁধারে মহাসড়কের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে ঢাকনা ফেলে রেখে যায় চোরচক্র। এরপর থেকেই বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে তাদের। সদর উপজেলার গোপালপুর বাজার এলাকার সমিলের শ্রমিক শিল্পীন মিয়া বলেন, ২৭ তারিখ সকাল বেলা আইসে আমরা দেখি যে বিদ্যুৎ নাই। কিসের জন্য বিদ্যুৎ নাই বুঝতে পারতাছিলাম না। পরে খাম্বার কাছে গিয়ে দেখি উপরে ট্রান্সফরমার নাই। নিচে খালি বাস্ক পইরে আছে। তারপর থাইকে বিদ্যুৎ নাই।
তিনি আরো বলেন,এই চুরির পেছনে পল্লীবিদ্যুতের লোক জড়িত আছে। কারণ কারেন্ট যখন না থাকে, তখন ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তাহলে চোরেরা কিভাবে জানলো যে কারেন্ট থাকবে না। পল্লীবিদ্যুতের লোক জড়িত না থাকলে এমন চুরি সম্ভব না।
ট্রান্সফরমার চুরির কারণে ভরা মৌসুমে সেচ প্রদান বন্ধ থাকায় আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। দখলপুর এলাকার কৃষক হাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির পর থাইকে এই দিকে বিদ্যুৎ নাই। তাই আমরা ৫০-৬০ বিঘা জমিতে সেচ দিতে পারতাছি না। এই গ্রামের কৃষকরা খেতে পানি দিবের পাইতাছে না। কৃষকরা হাহাকার করতাছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রান্সফরমার চুরির পর বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে দোকানপাট, মুরগির খামারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কারো সাড়া পাচ্ছেন না তারা। দ্রুত নতুন ট্রান্সফরমার লাগানোর দাবি তাদের।
গোপালপুর বাজার এলাকার সমিল ব্যবসায়ী এমরান মিয়া বলেন, ট্রান্সফরমার চোরে নেয়ার পর থেকে আমরা খুব কষ্টে আছি। এখন আমরা চলতে পারতাছি না। মেল, কারখানা সব বন্ধ। এই এলাকায় চোরে নিয়ে যাওয়া ট্রান্সফরমার যদি সরকার অতি শিগগির লাগাই দেয় তাহলে আমরা ব্যবসা কইরে মোটামুটি চলতে পারব।
মির্জাপুর গ্রামে মুরগির খামারি কুদরত আলী বলেন, আমার মুরগি আছিলো। ওই মুরগি একদম অল্প বয়সে, সময় না হইতেই বিক্রি কইরে দেয়া লাগছে। এই বিদ্যুতের জন্য। এই যে আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরতাছি বিদ্যুতের জন্য কেউ কোনো সাড়া দিতাছে না।
ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম বলেন, এদিকে ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। এইটা একটা বড় সিন্ডিকেট। এদের গ্রেপ্তার করলে আমরা খুশি হইতাম। দ্রুত গ্রেপ্তার করলে আঙ্গর জন্যে উত্তম হইতো।
জেলার সচেতন নাগরিকদের দাবি, জ¦ালানি ও বিদ্যুতের এই সংকটময় সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে একটি বিশাল চক্র। এই চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় না আনা হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জামালপুরের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সংকট দূর করতে সরকার যখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে ঠিক সেই সময়ে একটি বিশাল চক্র সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ট্রান্সফরমার চুরি করছে। ইতোমধ্যেই জামালপুর ও শেরপুর জেলায় প্রায় শতাধিক বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এ অবস্থায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে যদি চক্রটিকে চিহ্নিত না করা যায় এবং এদেরকে যদি পাকড়াও না করা যায় এরা বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে। জনরোষ তৈরির মাধ্যমে সরকারকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে। আমরা অনতিবিলম্বে এই চক্রটিকে পাকড়াও করার জন্য স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা সিয়াম বলেন, এটি একটি আন্ত:জেলা সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সব চুরিগুলো হচ্ছে। এর ফলে আমরা যারা সাধারণ জনগোষ্ঠী, আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা খুব বিপদে আছি। অনতিবিলম্বে প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি থাকবে এদেরকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
এসব বিষয়ে জামালপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অতি সাম্প্রতিক সময়ে জামালপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আওতায় পূর্বাঞ্চলে ট্রান্সফরমার চুরি যাচ্ছে। ট্রান্সফরমার চুরির তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের অফিসের লোকবল দিয়ে তদন্ত করাই। তদন্ত করার পর তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে আমরা থানায় এফআইআর করে থাকি।
তিনি আরো বলেন, চুরি যাওয়া এলাকায় আমরা তাৎক্ষনিকভাবে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করি। ইতোপূর্বেও মাইকিং করা হয়েছে এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের সচেতন করার জন্য অবহিত করা হয়েছে।
জামালপুর জেলায় পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার। যার মধ্যে সেচ ও শিল্প গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়