ঢাকা কলেজ : ক্যান্টিনে খাওয়া নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০

আগের সংবাদ

ভাঙা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির মচ্ছব : সড়ক খনন নীতিমালা উপেক্ষিত > তিন মাসের কাজ বছরজুড়ে > সেবা সংস্থার কাজে সমন্বয় নেই

পরের সংবাদ

দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে পারত চসিক ও সিডিএ : চট্টগ্রামে নালায় পড়ে সাদিয়ার মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীতে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শেহরীন মাহবুব সাদিয়ার (১৯) মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো যেত। ওই মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অবহেলার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা নিতে পারত চট্টগ্রাম নগরীর এই দুই কর্তৃপক্ষ।
ওই দুর্ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গত শনিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চে জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয় বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। তবে এখনো শুনানির দিন ধার্য করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদামতলী মোড়ের কাছে আগ্রাবাদ অবস্থিত। শেখ মুজিব রোডের ফুটপাত দিয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ চলাচল করে। ওই এলাকার মাজারগেটের রাস্তার পাশের নালাটি রাস্তার নিচ দিয়ে কালভার্টে মিলিত হয়েছে। এটি আনুমানিক ১১ ফুট চওড়া এবং ১০ ফুট গভীর। নালাটি রাস্তার পাশে অবস্থিত হওয়ায় এবং এ নালার প্রান্তে রাস্তা সংশ্লিষ্ট জায়গায় বক্স কালভার্ট থাকায় এখানে দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষের আরো সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তাই ডাস্টবিন ভাঙার সময় নালাটিকে সুরক্ষিত করা ও নালা সংলগ্ন জায়গায় উঁচু দেয়ালের মাধ্যমে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃষ্টি কারণে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। সেই ঝুঁকিপূর্ণ ফুটপাত ধরে পিচ্ছিল গার্ডারের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া সময় পা পিছলে পড়ে যান সাদিয়া। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঘটনাকে দুর্ঘটনা বললেও নালার অবস্থান ও পানি প্রবাহ বিবেচনা করে সেই স্থানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। এই দুর্ঘটনা এড়াতে চসিকেরও দায়িত্ব ছিল। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে সেই স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল।
প্রতিবেদনে মতামত অংশে বলা হয়, সাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় চসিক ও সিডিএ কেউই দায় স্বীকার করেনি। উভয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ওই মেয়ে অসাবধানতাবশত গার্ডারের ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে নালায় পড়ে মারা যান এবং এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নালার অবস্থান ও নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থলে নালা সংলগ্ন রাস্তায় আগে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন ও দেয়াল ছিল। তা নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করছিল। কিন্তু লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সিডিএ। তাই পাশের ডাস্টবিনটি ভেঙে ফেলে। সেখানে রাস্তার পাশে ফুটপাতের কাজ করা হলেও নালার ওপরের অংশে ফুটপাতের কাজ করা হয়নি এবং কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেনি সিডিএ। ফলে ফুটপাত হয়ে হাঁটার সময় নালার কাছে এসে ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে হেঁটে যেতে হত, অথবা ১ ফুট প্রশস্ত হুইল গার্ড ব্যারিয়ারের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে হত, যা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর সেই হুইল গার্ড ব্যারিয়ারের ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে নালায় পড়ে যান সাদিয়া।
প্রতিবেদনের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী এডভোকেট মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। আদালতে নথিভুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে শুনানির পর আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে চশমা কিনে মামার সঙ্গে বাসায় ফিরছিলেন সাদিয়া। আর চশমা পড়া হয়নি তার। নগরীর আগ্রাবাদের মাজার গেট এলাকার খোলা নালায় পড়ে যান তিনি। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। শুধু সাদিয়া নয়, ওই বছর নগরীতে নালা ও খালে পড়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়