গুলিস্তান : ভবনের ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫ পথচারী

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাদের ঘোষণা : খেলা হবে রাজপথে

পরের সংবাদ

ইপিবির তথ্য : বছরের শুরুতেই পোশাক রপ্তানিতে সুবাতাস

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের শুরুটা দুর্দান্ত করেছে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। নতুন (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে ৬৮৫ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা, যা দেশীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকার সমান। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৫৯৯ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ওই সময়ের মধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তাতে বাজারটিতে পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। পরের বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। তবে করোনার থাবায় রপ্তানি নি¤œমুখী হতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত ৫২৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় ২০২০ সালে। গত বছরের মে মাস থেকে বাজারটিতে রপ্তানি আবার বাড়তে থাকে। তবে আবার রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই বেশি কিনছেন মার্কিন নাগরিকরা। সে কারণে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের বিক্রি কিছুটা কমে গেছে বলে জানান বিকেএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত অর্থবছরের ন্যায় চলতি অর্থবছরেও ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার। চলতি বছরের শুরু জুলাই মাসে এই বাজারে ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৬৮৫ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা গত বছরের একই সময়ে ৫৯৯ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আলোচিত সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও আমাদের পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন থেকে ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে এবং ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতি এ মুহূর্তে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানির উচ্চ মূল্য এবং সরবরাহের ঘাটতি বিশ্ব পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেহেতু আমরা বিশ্ববাজারে কাজ করি, আমাদের শিল্পও এর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
গত দেড় বছরে সুতার দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ, মালবাহী খরচ বেড়েছে ৫০০ শতাংশ, রং, রাসায়নিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ, ন্যূনতম মজুরি গত বছরের শুরুতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে আমাদের গড় উৎপাদন গত ৫ বছরে খরচ বেড়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ। সেইসঙ্গে উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা আমাদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় ৪৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে উৎপাদনশীলতা ৫৫ শতাংশ এবং তুরস্কে ৭০ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে, আমরা নির্মাতারা পণ্য এবং বাজারের অতিরিক্ত ঘনত্ব, বিশেষ বাজারে অনুপস্থিতি, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের উন্নতি ইত্যাদির মতো দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা খরচ কমিয়ে এবং আমাদের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে প্রতিযোগিতামূলক থাকার চেষ্টা করছি।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য জার্মানিতে আরএমজি রপ্তানি, বছরে ২ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ৫১৭ মিলিয়নে পৌঁছেছে। স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ইতালি এবং পোল্যান্ডের মতো প্রধান দেশগুলোতে আমাদের পোশাক রপ্তানি যথাক্রমে ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া ইউকে এবং কানাডায় রপ্তানি যথাক্রমে ৩২ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বাজার দুটিতে ৩৬৬ দশমিক ৪২ মিলিয়ন এবং ১১২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। একই সময়ে অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি বছরে ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ৫৪৫ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি যথাক্রমে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, ৭১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ২২ দশমিক ২৭ বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়