যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ : সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পেছাল

আগের সংবাদ

বিসিবির ধমকে পিছু হটলেন সাকিব : বিসিবি সভাপতি পাপনের আল্টিমেটামের পর বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়ে চিঠি

পরের সংবাদ

মজুরি বৃদ্ধির দাবি : দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন চা শ্রমিকদের

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিকুল চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে : মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দেশের চা বাগানগুলোতে গতকাল বুধবারও দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন চা শ্রমিকরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকালে চা শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের নাচঘরের সামনে মিলিত হন। এ সময় নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে বক্তব্য দেন চা শ্রমিক নেতারা। পরে শ্রমিকরা চা বাগানের সেকশনে মিছিল বের করেন।
চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দ্বিবার্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯ মাস আগে। তবুও চা শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশি চা সংসদের দ্বিবার্ষিক চুক্তির সমঝোতার কুল কিনারায় নেই।
এই চুক্তির জন্য দ্রুত বৈঠকে বসার দাবিতে এবার আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। আন্দোলনের প্রথম ধাপে প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি জানান, এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দেশের সব চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। একই ধারায় আজ বৃহস্পতিবারও করা হবে। তবে কিছু চা বাগানে মঙ্গলবার পবিত্র আশুরার বন্ধ থাকায় সে সব চা বাগানে তা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বিজয় হাজরা জানান, এই তিন দিনের কর্মসূচিতে মালিক পক্ষ আলোচনার সময় না দিলে নতুন করে আরো বড় কর্মসূচি দেয়া হবে। তিনি জানান, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি সংবলিত দাবিনামা তারা ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি সাবমিট করেন। মালিক পক্ষের তালবাহানায় তা ১৯ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। চা শ্রমিক নেতা পংকজ কন্দ জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১১ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানসহ সারা দেশের ২৪১টি চা বাগানে তিন দিনের জন্য এ কর্মবিতরতির ঘোষণা দেয়া হয়।
আর চা জনগোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি শ্রীমঙ্গল রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চা শ্রমিক নেতা বিজয় বুনার্জী জানান, চুক্তির মেয়াদ একটা শেষ হয়ে নতুন করে আরেক চুক্তির সময় চলে এসেছে। নিয়ম মতো আইন অনুযায়ী চা শ্রমিকদের বেতন বাড়তো আরো ১৯ মাস আগেই। কিন্তু মালিকপক্ষের তালবাহানায় এক চুক্তির মেয়াদ অতিক্রম করে এখন পরবর্তী চুক্তির কাছাকাছি।
চা শ্রমিক নেতা পরিমলসিং বারাইক জানান, নির্দিষ্ট সময়ে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেড়বছর আগেই শ্রমিকদের বেতন বাড়তো। এ অবস্থায় বর্তমান ঊর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে চা শ্রমিকরা কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন। চা শ্রমিক নেতা পরেশ কালিন্দি বলেন, বর্তমান সময়ে বাজার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। কিন্তু তারা বারবার তালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকরা ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফেঁপে উঠছেন। দেশ-বিদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে ন্যূনতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বৃদ্ধি করার দাবি করে আসছেন গত ১৯ মাস ধরে।
তিনি বলেন, মালিকপক্ষ ইতোমধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরি হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও হবে না।
মানসম্মত একটি মজুরি আশা করেন মালিকপক্ষের কাছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী দুই বছর পর পর মজুরি বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছেন। গত ২০ মাস ধরে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না। তিনি বলেন, ৩ দিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে দেশের সব বাগান একসঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হবে। পাশাপাশি রাজপথে এসে দাঁড়াবেন তারা। ডাক দেবেন বৃহৎ আন্দোলনের।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্দ শিবলী জানান, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে কর্মবিতরতি দিলে উৎপাদনে ঘাটতি হবে। তা ছাড়া শ্রমিকরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি জানান, প্রতি চুক্তিতেই শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়। এবারো করা হবে। কিন্তু চায়ের দাম বাড়েনি দীর্ঘদিন, এটাও বিবেচনার বিষয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়