করোনার ভুয়া রিপোর্ট : সাবরিনা-আরিফসহ আটজনের মামলার রায় ১৯ জুলাই

আগের সংবাদ

মসলার বাজারে ঈদের আঁচ : খুচরা বাজারে দামের উল্লম্ফন, ডলার সংকট ও এলসি জটিলতার অজুহাত

পরের সংবাদ

গ্রামীণ টেলিকমের মামলার সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন : শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের চুক্তি দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সমঝোতা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি, রিটকারী শ্রমিকদের আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফিস নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সমঝোতা নিয়ে অবৈধ লেনদেন হওয়ার অভিযোগ ওঠায় মামলাটি রিকল করে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের আইনজীবীর ফিস নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু নয়, উপমহাদেশে এমন কোনো আইনজীবী নেই, যার ফিস ১২ কোটি টাকা হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে কিনা? সেই প্রশ্ন রেখে আদালত গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যকার চুক্তি দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা কে কত বকেয়া টাকা পেয়েছেন, তার তথ্য দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল শুনানির শুরুতে হাইকোর্ট আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয় তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না, কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠুক। এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেননি যার ফিস ১২ কোটি টাকা হবে। এ পর্যায়ে আদালত ডক্টর ইউনূসের আইনজীবীকে বলেন, আপনি কত টাকা ফিস নিয়েছেন? তখন আইনজীবী বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন। এ সময় চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী এডভোকেট ইউসুফ আলী আদালতকে জানান, চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি ৮ শ্রমিকের মধ্যে ৪ জন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর ৪ জন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি।
মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট ইউসুফ আলী। পরে অভিযোগ ওঠা শ্রমিকদের আইনজীবী এডভোকেট ইউসুফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ১২ কোটি টাকা নেয়ার খবর একটা গুজব।
এদিকে, গ্রামীণ টেলিকমের মামলা রিকল প্রসঙ্গে সূত্র জানায়, গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি সমঝোতার পেছনে ২৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন হয়েছে মর্মে জানা যায়। এ সমঝোতার অর্থ মামলার আইনজীবী এবং গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের একাউন্টে লেনদেন হওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া লভ্যাংশ প্রদান এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গত ২৭ এপ্রিল উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। উক্ত চুক্তি অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ গত ৫ মে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান ব্র্যাঞ্চে একটি একাউন্ট খোলে (অপপড়ঁহঃ হধসব : এৎধসববহ ঞবষবপড়স, অপপড়ঁহঃ হঁসনবৎ : ২১৫১৫০০০০২৫৬৮) তাতে গ্রামীণ টেলিকম অন্য একটি একাউন্ট (অপপড়ঁহঃ হধসব : এৎধসববহ ঞবষবপড়স, অপপড়ঁহঃ হঁসনবৎ : ০৫৬১৩০১০০০০০০০১০, ইউনাউটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিরপুর শাখা) থেকে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ৬২১ টাকা জমা দেয়া হয় এবং এর প্রেক্ষিতে শ্রমিক-কর্মচারীরাও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।
চুক্তি অনুযায়ী, উক্ত একাউন্ট থেকে সম্পূর্ণ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের প্রাপ্য হলেও একাউন্টটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৭ মে বর্ণিত একাউন্টের চেক নং-১৪৮৯১৯৯ এর মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা এবং ২৫ মে চেক নং-১৪৮৯৩৬৭ এর মাধ্যমে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার তিন শত একানব্বই টাকা ও চেক নং-১৪৮৯৩৬৯ এর মাধ্যমে এক কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ছয় হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের (অপপড়ঁহঃ হড় : ১০১১১০০০৪৭১৭২, ডাচ বাংলা ব্যাংক) একাউন্টে জমা দেয়া হয়। উক্ত একাউন্টটির সিগনেটরি হিসেবে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান। গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়ন (অপপড়ঁহঃ হড় : ১০১১১০০০৪৭১৭২, ডাচ বাংলা ব্যাংক) নামীয় একাউন্টটি হতে গত ১৯, ২৬, ২৯ মে এবং ০২ জুন পৃথক ১৩টি চেকের মাধ্যমে সর্বমোট ২৫ কোটি টাকা ১০টি একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। ট্রান্সফারকৃত অর্থসমূহের মধ্যে শ্রমিকদের আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী এককভাবে পেয়েছেন ৯ কোটি টাকা। এছাড়া ইউসুফ আলী ও অপর আইনজীবী জাফরুল হাসান চৌধুরী যৌথভাবে পেয়েছেন ৬ কোটি টাকা, উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের আইনী প্রতিষ্ঠান এটর্নিস পেয়েছে এক কোটি টাকা এবং গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও ইউনিয়নের অপর নেতা মো. মাইনুল ইসলাম প্রত্যেকে পেয়েছেন ৩ কোটি টাকা করে। এছাড়াও লোকমান ও কামরুল নামক জনৈক ব্যক্তিদ্বয় যথাক্রমে ৪০ লাখ ও ১০ লাখ টাকা বর্ণিত একাউন্ট থেকে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন করেছেন।
জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিসে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। এরপর সেই নোটিসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ কর্মী। এই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশ নেয়ার তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়