মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

বন্দুকবাজির অবসান হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে : ঐতিহাসিক বন্দুক আইন পাস

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে একটি বড় পদক্ষেপ নিলেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। নি¤œ ও উচ্চকক্ষে পাস হওয়া বিলে একদিনের মাথায় স্বাক্ষর করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে বন্দুক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন পেল দেশটির নাগরিকরা। বিলে স্বাক্ষরের আগে বাইডেন বলেন, বন্দুক নিয়ন্ত্রণে আনতে যা প্রয়োজন ছিল, তার চেয়ে আইনের বিধিনিষেধ কম হয়েছে। তবুও এই আইন জীবন বাঁচাবে বলে মনে করেন তিনি।
নতুন এই আইনে বলা হয়েছে, ২১ বছরের কম বয়সি কেউ আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে চাইলে, তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নানা বিষয় কঠোরভাবে যাচাই করা হবে। একই সঙ্গে হুমকি হিসেবে বিবেচিত অস্ত্রধারীদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নিতে ‘লাল পতাকা’ আইন প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। বিগত কয়েক সপ্তাহে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা প্রকট আকার ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বেশ কয়েকটি স্থানে ভয়বহ বন্দুক হামলার পর দেশজুড়ে দাবি ওঠে- অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের দাবিতে। বাফেলো এবং উভালদের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলায় ১৯ শিশুসহ ৩০ জনের বেশি লোক নিহত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে দ্বি-দলীয় বিলটি একত্রিত হয়। নতুন এই আইনের ফলে আইনগতভাবে অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের রাজ্যে যদি কোনো বন্দুকধারীকে বিপজ্জনক মনে করে তাহলে তাদের হাত থেকে অস্ত্র দূরে রাখতে পারবে। বিলে স্বাক্ষর করার সময় বাইডেন তার পাশে থাকা স্ত্রী জিলকে বলেন, ঈশ্বরের কৃপায় এটি অনেক জীবন বাঁচাতে চলেছে।
এর আগে বন্দুক মালিকদের অধিকার প্রসারিত করে আইনটির সংস্কার করে সুপ্রিম কোর্ট। তারা জানায়, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী আত্মরক্ষার জন্য জনসমক্ষে একটি হ্যান্ডগান বহন করার ক্ষমতা থাকবে নাগরিকদের। এই রায়ের পর বাইডেন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট কিছু ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে একটি অস্ত্র সংক্রান্ত এবং আরেকটি হলো দেশব্যাপী গর্ভপাতের অধিকারকে বেআইনি ঘোষণা করা। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বিভাজনকারী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বন্দুক বিক্রির ওপর নতুন নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জেতার জন্য ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা প্রচারণার অংশ হিসেবে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনে স্বাক্ষর করেছেন বাইডেন।
নতুন এই আইনের অধীনে যা থাকছে : ১. বন্দুক সহিংসতা রোধে প্রণীত নতুন এই আইনের অধীনে ২১ বছরের কম বয়সি ক্রেতাদের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড কঠোরভাবে যাচাই করা হবে। ২. মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম এবং স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তহবিলে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে। ৩. হুমকি হিসেবে বিবেচিত লোকদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণের জন্য ‘লাল পতাকা’ আইন প্রয়োগ করতে তহবিল বরাদ্দের মাধ্যমে অঙ্গরাজ্যগুলোকে উৎসাহিত করা হবে। ৪. অবিবাহিত অন্তরঙ্গ সঙ্গীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে বন্দুক বিক্রি নিষিদ্ধ করতে তথাকথিত ‘বয়ফ্রেন্ড লুপহোল’ বন্ধ করা।
জি-৭ সম্মেলনের জন্য জার্মানি সফরের আগে বাইডেন বলেছিলেন, এই সময়ে যখন ওয়াশিংটনে কিছু করা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, আমরা ফলপ্রসূ কিছু করছি। আমরা যদি বন্দুকের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারি তবে আমাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এর আগে বন্দুক সুরক্ষা আইন পাস উপলক্ষে আগামী ১১ জুলাই হোয়াইট হাউস ইভেন্টে বন্দুক সহিংসতার শিকার পরিবার এবং আইন প্রণেতাদের আতিথ্য করার ঘোষণাও দিয়েছেলেন বাইডেন। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ বিলটি পাস করতে ১৫ জন রিপাবলিকান সিনেটর ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দেন। আর এতেই ৬৫-৩৩ ভোটে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষে বিলটি পাস হয়। বিলে মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম এবং স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে দেশটির ফেডারেল তহবিলে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। বিবিসি বলছে, ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন বন্দুক আইন শক্তিশালী করার যে কোনো প্রচেষ্টা রিপাবলিকান পার্টি বরাবরই বাধাগ্রস্ত করেছে। টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর জন কর্নিন বলেন, বন্দুক নিয়ন্ত্রণের এই বিলটি আমেরিকানদের আরো নিরাপদ করবে। জন কর্নিনের ভাষায়, কিছু না করে চুপ করে বসে থাকা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে আমেরিকান জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দায়িত্বের বরখেলাপ। এর আগে দিনের পর দিন অস্ত্র আইন কঠোর করার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘গুলি থেকে মুক্তি চাই’ স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেন এবং তিনি কংগ্রেসকে আগ্নেয়াস্ত্র সুরক্ষা আইন পাস করার আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তাবিষয়ক সংগঠন ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’ (এমএফওএল) দেশজুড়ে প্রায় ৪৫০টি সমাবেশের পরিকল্পনা করে। সংগঠনটি জানায়, সাধারণ মানুষ যেখানে নিয়মিত বন্দুক হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে, তখন রাজনীতিকদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেয়া হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়