পদ্মা সেতু উদ্বোধন : বুয়েটে ক্লাস বন্ধ থাকবে ২৫ জুন

আগের সংবাদ

বর্ণিল উৎসবে খুলল দখিন দুয়ার

পরের সংবাদ

সিলেটে পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : “পানি উঠোন পর্যন্ত উঠেছিল। ভেবেছিলাম বৃষ্টি থামলেই পানি কমে যাবে। কিন্তু মাঝরাতে হঠাৎ করে এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে মাত্র দুই তিন ঘণ্টায় ঘরের ভেতর হাঁটু পানি হয়ে যায়। ছেলেকে দিয়ে পরিবারের সব সদস্যকে তার নানার বাড়ি পাঠিয়ে দিই। এরপর টানা সাতদিন। বাড়িতে আমি আর গরু-মহিষ।”
কথাগুলো বলেন গোয়াইনঘাটের পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের ষাটোর্ধŸ কৃষক মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ঘরের বিছানাপত্র, আসবাব, ধানের গোলা, খড়ের গাদা সবই ডুবেছে। ¯্রােতে সরে গেছে ভিটার মাটি। এই ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে তা জানা নেই মোহাম্মদ আলীর।
তিনি বলেন, সরকারি ত্রাণ কে কতটুকু পেয়েছে তা আপনারা ভালো বলতে পারবেন। কিছু কিছু ছেলেপেলে এসে ত্রাণ দিয়ে গেছে। আমরা না হয় এসব খেয়ে বেঁচে যাব। কিন্তু গবাদিপশুর কি হবে? খড়ের গাদা ভেসে গেছে, মাঠেঘাটে এখনো গলা সমান পানি। এই গরু মহিষগুলোই আমার শেষ সম্বল। খাবারের অভাবে এগুলো মারা গেলে আমার আর কিছুই থাকবে না।
দুর্দশার এই চিত্র মোহাম্মদ আলীর একার নয়। দেশের উত্তরপূর্ব সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের বেশিরভাগ গ্রামের বাসিন্দাদের অবস্থাই এমন। সারিঘাট থেকে গোয়াইনঘাট অভিমুখী সড়কে ঢুকতেই চোখে পড়ে রাস্তার দুই ধারে ধান, খড়, বিছানা, বালিশ, আসবাবপত্র, লাকড়ি শুকানো হচ্ছে লাইন ধরে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরেই ঘরদোর গোছগাছে লেগে পড়েছেন সবাই। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
রাস্তার ধারে খড় শুকাচ্ছিলেন পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাহার উদ্দিন। প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে এসে বলতে লাগলেন, ত্রাণ দিতে এসেছেন? ত্রাণ লাগবে না। এই কদিন খেয়ে না খেয়ে কেটে গেছে। কিন্তু বন্যার পানি নামার পর কোথায় যাবো? ঘরের সমস্ত আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের গোলা ভেসে গেছে। খড়ের গাদার অর্ধেকের বেশি খড় নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে আউশ ধানের বীজতলাও। রাস্তার পাশে শুকাতে থাকা ধান দেখিয়ে বলেন, দেড়শ মণ ধান হয়েছিল এবার, দেড় মণও বাঁচাতে পারিনি। সারাবছর কিভাবে কাটবে জানি না। ত্রাণ তো সারাবছর দেবেন না।
গোয়াইনঘাটের মোট ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সবারই চিন্তা একই। বন্যা পরবর্তী দিন কেমন কাটবে? কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন?
আলাপ হয় স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে। আলীরগাঁও ইউনিয়নের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ত্রাণের চেয়ে পুনর্বাসনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়ের পরেই আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। খুব শিগগিরই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা পাঠানো হবে। যার যতটুকু ক্ষয়ক্ষতি সেই অনুযায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে আশা করি।
তাহমিলুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ত্রাণের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি আশা করি কেউই ত্রাণ বঞ্চিত থাকবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়