কাগজ ডেস্ক : তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশে থাকার আগ্রহ হারাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা। অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব মোটামুটি সব খাতের ওপর আঘাত হানায় উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমাতে চাচ্ছেন তারা। এই লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির পাসপোর্ট অফিসে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভিড়। পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য শ্রীলঙ্কান নাগরিকদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে লাইনে। এতে করে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়ছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আর এম আর লেনোরা নামে এক নারী গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার ইমিগ্রেশন বিভাগের সদর দপ্তরের বাইরে সাপের মতো এঁকে বেঁকে যাওয়া একটি লাইনে দুই দিন ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। মূলত একটি পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় এবং একইসঙ্গে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা এই দেশটি ছেড়ে যাওয়ার সুযোগের আশায় কষ্ট সহ্য করেও সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। পেশায় গার্মেন্টস কর্মী লেনোরার স্বামী শ্রীলঙ্কায় একটি ছোট রেস্তোরাঁয় রান্নার কাজ করতেন। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ওই রেস্তোরাঁ থেকে তার স্বামীকে ছাঁটাই করা হয়। আর এরপরই কুয়েতে গৃহকর্মীর চাকরির জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন ৩৩ বছর বয়সি লেনোরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, রেস্তোরাঁয় রান্নার গ্যাস নেই। অন্যদিকে খাবারের খরচ আকাশ ছুঁয়েছে। আর এই কারণেই আমার স্বামী চাকরি হারিয়েছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন এবং বেতন খুব কম। লেনোরা বলেন, দিনে প্রায় ২৫০০ শ্রীলঙ্কান রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩৪ টাকা) উপার্জন করেন তিনি। এই টাকায় দুই সন্তান নিয়ে জীবনযাপন করা অসম্ভব। গত সপ্তাহে নয়ারা এলিয়া শহর থেকে ১৭০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোয় পৌঁছান আর এম আর লেনোরা। সেখানে পৌঁছানোর পর প্রয়োজনীয় কাগজ হাতে নিজের প্রথম পাসপোর্টর জন্য লাইনে দাঁড়ান তিনি।
রয়টার্স বলছে, পাসপোর্টের ওই লাইনে লেনোরার সঙ্গে শ্রমিক, দোকানের মালিক, কৃষক, সরকারি কর্মচারী এবং গৃহিণীরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে এমনও ছিলেন যারা কেবল পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় সারা রাত ধরে লাইনে অবস্থান করেছেন। মূলত তাদের সবাই গত সাত দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সংকট থেকে বাঁচতে চান। একটু উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। শ্রীলঙ্কার সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪৫টি পাসপোর্ট ইস্যু করে শ্রীলঙ্কান সরকার। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ে পাসপোর্ট ইস্যুর এই সংখ্যাটি ছিল ৯১ হাজার ৩৩১টি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতে গত বছরের তুলনায় অনেক মানুষ পাসপোর্ট হাতে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেনোরা বলেন, আমি আমার মেয়েদের শিক্ষিত করতে চাই। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।