নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নে রাক্ষসী যমুনা গিলে খাচ্ছে ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি। বর্ষার আগেই যমুনায় শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন । চোখের নিমিষেই ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকেই। নদীগর্ভে শেষ আশ্রয়টুকু চলে যাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষের। অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মধ্যে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, ঈদগা মাঠ ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।
প্রতিবারের মতো এবারো যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, রাস্তাঘাটসহ ফসলি জমি। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এভাবেই যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। ভাঙনে দিশাহারা নাগরপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী মানুষ। ইতোমধ্যে উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইশা মাইঝাইল, খাষ ঘূনিপাড়া, চরসলিমাবাদ, ভূতের মোড় এবং ভারড়া ইউনিয়নের শাহাজানি, মারমা, উলাডাব এবং দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর, কাটি নিশ্চিতপুর, বাক কাটারীসহ বিভিন্ন গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে আরো অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এসব এলাকার স্থানীয়রা।
ভাঙন প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিরা প্রতি বছর নানা প্রতিশ্রæতি দিলেও স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষা মৌসুমে জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
খাষ তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. দানেজ শেখ বলেন, ‘২ বছরে আমি ৬ বার ঘরবাড়ি সরিয়েছি। এখন আমার যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। পয়পোলাপান নিয়ে কী করব কোথায় যাব।’ স্থানীয় সার্জেন্ট (অব.) আলতাব হোসেন বলেন, এবার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাড়ি ভেঙে যায়। ছেলেমেয়েদের এক স্কুলে ভর্তি করলে পরের বছর আরেক স্কুলে দিতে হয়। এতে করে সন্তানদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে । আমাদের মতো এমন অসহায় অবস্থায় আর জানি কেউ না পড়ে।
ভাঙনকবলিত এলাকাবাসী রাবেয়া, আমেনা, মনছের আলী ও রহিম বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব নদীতে চলে গেছে। এখন আমাদের সহযোগিতা করবেন কে। আমরা সব সময় সরকারের কাছে দাবি করে আসছি, নদীতে একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ দেয়ার জন্য। কিন্তু কে শোনে আমাদের কথা। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কথার কোনো দাম নাই। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এ নদীতে বেড়িবাঁধ হবে। কিন্তু এত বয়স হয়ে গেল আজ পর্যন্ত বাঁধের এক অংশও দেখতে পারলাম না। আর কবে দিব। নদীর ভাঙনে বাড়িঘর সব শেষ। এখন যেটুকু আছে তা এ ভাঙনে শেষ হয়ে যাবে। প্রতি বছর নদীর ভাঙন দেখা দেয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলে যায়। এগুলো আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। এখন আবার অসময়ে যমুনা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর এ নদীর তীরে যদি বাঁধ থাকত তাহলে আমাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হতো না।
সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম অপু বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে যমুনা পাড়ের হাজারো মানুষের দুঃখ-দুর্দশা চিরতরে দূর হবে এমনটাই প্রত্যাশা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ভাঙনরোধে ইমার্জেন্সি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
ভাঙনরোধ ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই। নদী ভাঙনকবলিত এলাকার জনসাধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পুনর্বাসন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭৬টি পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে ৩৮ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে।