করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ে ফের স্কুল বন্ধ

আগের সংবাদ

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯ দফা নির্দেশনা : ঝুঁকি মোকাবিলায় নজরদারিতে চাকরিচ্যুত পুলিশরা

পরের সংবাদ

তিন বন্ধুর অভিযান

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একটি ছায়া। কালো ছায়ামূর্তি। ছায়াটার মাথার ওপর মনে হয় টর্চ লাইটের আলোর মতো জ্বলছে। আলোটা সামনের দিকে পথ দেখাচ্ছে। ছায়াটা আলোর পেছন পেছন হাঁটছে। প্রথম দেখল আবির। সাকি আর লাভু ছিল পেছনে। ওরা তিন বন্ধু। পরস্পর আত্মীয়। তিনজনই ক্লাস এইটে পড়ে। আবির হচ্ছে মামাতো ভাই। সাকি আর লাভু মাসতুতো ভাই। তিনজন তিন এলাকার হলেও এখন আবিরদের এলাকা নয়নপুরে সবাই।
নয়নপুরটা খুবই সুন্দর মনোরম। চারদিকে পাহাড় ঘেরা একটি গ্রাম। পাহাড় বলতে উঁচু-নিচু ছোট ছোট টিলা। অনেক দূরে ঘন গাছপালায় কালো কালো উঁচু পাহাড়। উঁচু পাহাড়ের ওপাড়ে নাকি আরেকটা দেশ। তবে পাহাড়টা ডিঙ্গিয়ে যাওয়া সহজ নয়। পাহাড়ের পর পাহাড় আছে। কয়েকদিন লেগে যায় পাহাড়ের সীমানা অতিক্রম করতে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যোদ্ধারা নাকি এ পাহাড় পাড়ি দিয়ে সেখানে যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে গিয়েছিল। দেশটার নাম ভারত।
এ পাহাড় নিয়ে অনেক অজানা কথা আছে। যেগুলো শুনলে গল্প মনে হলেও সত্যি ঘটনা। মাঝে মাঝে শহর থেকে অনেকে বেড়াতে আসে এ গ্রামে। তারা পাহাড় দেখে, পাখিদের গান শোনে। পাহাড়ি ঝর্ণার জলে স্নান করে খুশি হয়। কিন্তু ভয়টা হচ্ছে দিন দুপুরে লোকজন হারিয়ে যাওয়া। বছরে এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটে থাকে। তাতে কিছু দিনের জন্য এলাকাটা স্থবির হয়ে যায়। মানুষ হাসতে ভুলে যায়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ইশকুলে যায় না।
এখানেই শেষ নয়। হারিয়ে যাওয়া লোকজনের হাড়গোড় পাওয়া যায় কয়েকদিন পর। কাপড়চোপড় দেখে স্বজনরা চিনতে পারে। কিন্তু তাতে ভ্রমণে আসা থেমে থাকে না মানুষের। অনেকে আবার উৎসুখ হয়ে রহস্য উদঘটন করতে চালায় অভিযান। কিন্তু রহস্যের কেউ কিনার করতে পারে না।
গ্রামের লোকেরা বলে এগুলো কোনো দেবতার কাজ। আবার কেউ কেউ বলে ভূতের কাণ্ড।
ছায়াটা দেখে সাকি আর লাভুর গা শিউরে ওঠে। মনে পড়ে যায় সেই সব ভুতুড়ে কথা। এবারেই প্রথম সাকি আর লাভু মামার বাড়ি এসেছে একা। বছরের অন্য সময় ইশকুল ছুটিতে মা বাবার সাথে বেড়াতে আসত। তিন বন্ধু ফোনে ফোনে কথা বলে ঠিক করে বেড়াতে আসার ব্যাপারটা। তারপর বাবা-মাকে রাজি করানো হয়।
আবির এ রহস্যের সন্ধান পেতে অনেক দিন থেকে প্ল্যান করে আসছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছিল না। তাই এবার খালাতো ভাইদের নিয়ে নিজে নিজেই প্ল্যানটা করে তাদের সাথে যোগাযোগ করে।
আবির কালো ছায়াটা দেখে না দেখার ভান করে এগিয়ে যাচ্ছে। মনে ভয় থাকলেও বন্ধুদের কাছে ভয়টা দেখাতে চাচ্ছে না। আবির কৌশলে ওদের থেকে একটু পেছনে সরে আসে। ছায়াটা তখনো সামনেই হাঁটছে। চারদিকে ঝোপঝাড়ে আঁধারটা বেশ গাঢ়। হঠাৎ এক লক্ষèী পেঁচা বিচ্ছিরি একটা শব্দে ডেকে ডেকে উড়ে গেল। তখনই চোখ পড়ে সাকির।
আবির ওটা কী রে। তিন বন্ধু থমকে যায়।
কই কই। কোথায় কী?
সামনে দেখ না। ঐ যে কালো ছায়ার মতো। ওখানে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে।
হ্যাঁ। টর্চের আলোর মতো তো। লাভু বলল।
ও। দেখেছি। টর্চের আলো জ্বেলে কেউ আসছে মনে হয়। আবির বলল। মানুষ হলে তো দেখতে পেতাম। ওটা যে একটা ছায়। আমি শিউর। সাকি জবাব দেয়।
বুঝিস না। পাহাড়ি এলাকা। কত কিছুর দেখা পাওয়া যাবে এখানে।
হঠাৎ ভূকম্পনের মতো পুরো পাহাড় কেঁপে ওঠে। ওরা তিনজন তিনদিকে কাত হয়ে পড়ে যায়। ও মারে বলে চিৎকার দিয়ে উঠে লাভু। মিনিট দুই পরে ওরা উঠে দাঁড়ায়। সাকি বলল, আবির চল চল বাড়ি ফিরে চল। কোনো বিপদ হতে পারে। সাই দেয় লাভু। তিন বন্ধু মুহূর্তে হাত ধরাধরি করে দেয় ছুট। কিছু দূর এসে একটি টিলার ওপর উঠে দাঁড়ায় তিনজন। আবির বলে, ব্যাপারটা তো বুঝতে পারছি না। তখন আকাশে চাঁদটা দেখা যাচ্ছিল। পুরো পাহাড়ি এলাকা নীরর নিঝুম। চারদিকে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।
ওরা তাকিয়ে দেখছিল ছায়াটাকে। ছায়া এবার পেছনের দিকে অর্থাৎ তিন বন্ধুর দিকে মুখ করে এগিয়ে আসছে। ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবারো পুরো পাহাড় এমনভাবে কেঁপে উঠল তিন বন্ধুর টিলা থেকে তিন দিকে কাত-চিৎ হয়ে পড়ে যায়। যেন সমস্ত গাছপালা ভেঙে পড়ছে তাদের ওপর। এক একজন এমন চিৎকার করে উঠল সেই শব্দে যেন আকাশ-বাতাসও কেঁপে উঠল।
ওদের সেই চিৎকারে হকচকিয়ে উঠে এক মধু সংগ্রাহকারীর দল। তাদের হাতে ছিল আগুনের উজাল। মধুর চাক কাটার সময় বাঁশের মাথায় শুকনো খড় মুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। ওরা তিনজনের চিৎকারের আওয়াজটা ধরে হই হই রব তুলে ছুটে আসে ওদের দিকে। এ সময় আবির নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় কোনো মতে। কিন্তু সে মনোবল হারায়নি। তার সাথে সব সময় একটা ছোড়া, ইলেকট্রিকের তার আর ম্যাচবক্স থাকে। সে নিজেকে অভিযাত্রী মনে করে কিনা! কয়েক মিনিট পর সাকি আর লাভুও হয়তো জ্ঞান ফিরে পেয়েছে। তারা খুঁজতে থাকে আবিরকে। জোরে জোরে ডাক পারে আবির আবির। আর আবির দেখলো সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার কয়েক হাতের মধ্যে সেই ছায়াটা। মাথায় আলোটা জ্বল জ্বল করে জ্বলছে আর ছায়াটা তার হাত নাড়ছে। আবির সাহস করে তার ছোড়াটা পকেট থেকে বের করে দুই পা এগিয়ে শরীরের যত শক্তি আছে সবটা দিয়ে আঘাত করে ছায়াটাকে, এ সময় সাকি আর লাভু করে চিৎকার দিয়ে ওঠে। খুব কাছেই ছিল সাকি আর লাভু। তারা দেখতে পায় ছায়াটাকে জড়িয়ে ধরে আছে আবির। এমন সময় মধু সংগ্রহকারীর দলও এসে হাজির। তাদের উজালের আলোয় দেখা গেল আবির একটা কলাগাছকে ছোড়াটি গেঁথে দিয়েছে। চাঁদের আলোটা কলাগাছের ওপর এমনভাবে পড়েছে পাতাগুলো যেন মানুষের হাতের মতো নাড়াচাড়া করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়