করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বেইজিংয়ে ফের স্কুল বন্ধ

আগের সংবাদ

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯ দফা নির্দেশনা : ঝুঁকি মোকাবিলায় নজরদারিতে চাকরিচ্যুত পুলিশরা

পরের সংবাদ

অরই

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমি অরই।
শীতকালে আমি তিনাপিপিদের বাসার উঠান ঝাঁট দিই।
আমরা থাকি এক বাসায়, তিনাপিপিরা থাকে এক বাসায়। আমাদের বাসায় আমি থাকি, আমার মা, আমার বাবা, আমার মাম্মান, আমার বাবু, আমার সেবন, আমার ভাই থাকে। আর আমার বড়বাবা থাকে ঢাকায়। সত্যি সত্যি বড়বাবাকে আমি জীবনে দেখিইনি। ফোনে কথা বলি।
‘ও বড়বাবা তুমি কবে আসবে?’
‘এই তো শীত পড়লেই অরই।’
ওরে! বড়বাবা আমাকে অরই বলে কেন? অরই তো আমাকে বলে সেবন। বড়বাবার ছোট ভাই আমার বাবু, তার ছোট আমার সেবন, তার ছোট আমার বাবা। সেবন আমাকে অরই বলে, কাটুসি মাটুসি বলে, কার্টুন বলে, কত কী বলে।
আর আমার একটা বোনু আছে। বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। আমি রোজ ভিডিও কলে আমার বোনুর সঙ্গে কথা বলি।
তিনাপিপিদের বাসায় তিনাপিপি পূর্ণাপিপি থাকে। আর আমার দোলন কাকা থাকে। আর আমার সেজদা, ফুলদা, ছোড়দা, ঠাম্মি, ফুলদি থাকে। বড়বাবাকে আমি একদিন বলেছি, তিনাপিপি পূর্ণাপিপিকে না দেখলে আমার ঘুম ধরে না। বড়বাবার কী হাসি!
আমাদের বাসা থেকে তিনাপিপিদের বাসা দেখা যায়। হেঁটে এইটুক। কিন্তু করোনার জন্য এখন সব সময় আমি তিনাপিপিদের বাসায় যেতে পারি না। সকালে একবার যাই, দুপুরে একবার যাই আর সন্ধ্যায় একবার যাই। মাস্ক পরে যাই। স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে যাই।
এখন সকাল না দুপুর?
বৃষ্টির জন্য আমি বুঝতেই পারছি না।
পূর্ণাপিপি মায়ের ফোনে কল দিল।
‘এই তুই কি করিস রে?’
‘এখন কি দুপুর পূর্ণাপিপি?’
‘কী বলি আর কী বলে! এখন রাত। গভীর রাত ১২টা। শোন তুই মাস্ক পরে থাক। স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে নে একবার। আমি আর তুই এক জায়গায় যাব।’
আমি যে কী খুশি হলাম!
পূর্ণাপিপি নিয়ে যাবে, মা তবে কিছু বলবে না, বাবা তবে কিছু বলবে না। না হলে এই বৃষ্টির মধ্যে আমাকে বাইরে নিয়ে যাবে কে? কোনদিন আর কেউ না। এ জন্য আমি পূর্ণাপিপিকে সব থেকে ভালোবাসি। তিনাপিপিকেও সব থেকে ভালোবাসি। কিন্তু পূর্ণাপিপি যে বলল রাত এখন!
‘ও বাবা’
‘কী?’
‘পূর্ণাপিপি বলল দুপুর এখন-।’
‘দুপুরই তো।’
‘এ! দুপুর না! দুপুর না! পূর্ণাপিপি দুপুর বলেনি। দুপুর বলেনি। রাত বলেছে। ১২টা বলেছে।’
এই সময় পূর্ণাপিপি এলো।
‘এই আয়।’
‘এখন কি রাত বলো?’
‘না রে বাবা এখন দুপুর। তিনটা বত্রিশ মিনিট আটচল্লিশ সেকেন্ড। চল্। তোর এই মাস্কটা তো খুব সুন্দর। কে দিলোরে?’
‘দোলন কাকা।’
‘অ। সে তোকে মাস্ক এনে দেয় আর নিজে মাস্ক পরে না। দাঁড়া-!’
‘দোলনকাকা মাস্ক পরে তো।’
‘চুপ কর সাক্ষী গোপালনী। চল।’
অল্প অল্প করে বৃষ্টি ধরে এল।
আমি পূর্ণাপিপির আঙুল ধরে হাঁটছি।
পূর্ণাপিপি বলল, ‘শোন, তোকে একটা সিক্রেট কথা বলি। আমরা এখন কেকের দোকানে যাব। কেক অর্ডার করব। কেন বল তো?’
‘কেন?’
‘তুই বল।’
‘কেক খাব।’
‘তা তো খাবিই। কিন্তু সেটা কেন? কাল তোর তিনাপিপির জন্মদিন, বুঝেছিস? কেকটা তার জন্য হবে সারপ্রাইজ।’
‘কেক কখন কাটবে?’
‘কাল সন্ধ্যায়। কিন্তু তুই একদমই কিন্তু কাউকে একথা বলতে পারবি না। তিনাপিপিকে তো না-ই না। আন্ডারস্ট্যান্ড? বুঝেছিস?’
‘বুঝেছি।’
‘দেখব।’
আমি আর পূর্ণাপিপি কেকের অর্ডার দিয়ে বাসায় ফিরলাম। চিপসের দোকান বন্ধ বলে পূর্ণাপিপি আমাকে চিপস কিনে দিতে পারল না, চকোলেট কিনে দিল। কাল দোকান খুললে চিপস কিনে দেবে।
আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
সন্ধ্যা হয়ে গেল।
রাত হয়ে গেল।
খুব বৃষ্টি। খুব বৃষ্টি। ইস রে! এই বৃষ্টিতে আমি কি আর তিনাপিপিদের বাসায় যেতে পারব?
‘মা।’
‘কী?’
‘পূর্ণামাকে ভিডিও কল দাও।’
তিনাপিপি পূর্ণাপিপিকে আমি তিনা মা পূর্ণা মাও ডাকি। আমার যখন মনে হয় ডাকি।
মা ভিডিও কল দিল।
পূর্ণাপিপি ধরল, ‘কী রে? হ্যাঁ?’
আমি খুব আস্তে আস্তে বললাম, ‘পূর্ণা মা।’
‘মতলব কী বল?’
‘তিনাপিপিকে কথাটা একটু বলে দিই।’
‘কী? তোকে না বললাম এটা সারপ্রাইজ। তিনাপিপি কেন কাউকে বলবি না।’
‘আচ্ছা, বলব না। তুমি আমাকে নিয়ে যাও পূর্ণা মা?’
‘এখন কীভাবে নিয়ে যাবে রে? বৃষ্টি কমুক দেখি।’
‘বৃষ্টি কমলে নিয়ে যাবে সত্যি?’
‘তিন হাজার তিন সত্যি।’
বাবা বলল, ‘বৃষ্টি আজ রাতে আর ধরবে না। টেলিভিশনে বলেছে।’
ইহ্!
বৃষ্টি কমল।
পূর্ণাপিপি তুবও ছাতা নিয়ে এল।
‘এই যে, আসেন।’
আমার বাবা আমাকে আরেকটা মাক্স পরিয়ে দিল। আমার মা স্যানিটাইজার দিয়ে আমার হাত ধুইয়ে দিল।
দুই এক ফোঁটা বৃষ্টি এখনও পড়ছে।
পূর্ণা মা বলল, ‘তোর বড়বাবা ফোন করেছিল। বলেছে ধাক্কা নিয়ে তোকে বৃষ্টিতে ফেলে দিতে।’
‘ইহ্! না।’
বড়বাবার ভিডিও কলের ফোন নাই। বড়বাবা বলেছে সে গরিব মানুষ, ভিডিও কলের ফোন কেনার টাকা তার নাই। কী কথা! আমি কী আর ছোট আছি রে বাপু! সব বুঝি।
পূর্ণাপিপি আবার সাবধান করে দিল, ‘খবরদার। তিনাপিপিকে কিন্তু কিছু বলবি না। ঠিক আছে?’
‘বলব না।’
‘মনে থাকে যেন।’
‘মনে থাকবে।’
‘কত মনে থাকে রে তোর! দেখব।’
দোলন কাকা ছাড়া আর সবাই ঘরেই আছে তিনাপিপিদের। ঠাম্মি আমাকে দেখেই বলল, ‘এলেন রানী রাসমনি।’
তিনাপিপি বলল, ‘রানী রাসমনি কাকে বলো মা? ইনি হলেন মাশা।’
ঠাম্মি বলল ‘মশা কে আবার?’
‘মশা না মাশা। ও তুমি চিনবে না। ‘মাশা এন্ড দ্য বিয়ার’-এর মাশা।’ তিনাপিপি বলল।
আমি ‘মাশা এন্ড দ্য বিয়ার’ দেখি।
আমি মাশা। বিয়ার কে? ভালুক?
সেজদা না ফুলদা?
ছোড়দা না। বিয়ার ফুলদা।
পূর্ণাপিপি চা করে আনল।
আমিও চা খাই।
ছোড়দার কোলে বসে খাব।
তিনাপিপি পূর্ণাপিপি আর একদমই আমাকে কোলে নিতে চায় না। বলে আমি বড় হয়ে গেছি। সেজদা ফুলদা ছোড়দা একথা বলে না। করোনা বলে, না হলে ছোড়দা রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে কোলে নিয়ে মর্নিং ওয়াক করে। রাস্তায় হাঁটে। নদীর পাড়ে যায়। আমি নদীতে শুশুক দেখেছি একদিন। ভুস করে উঠল আর ডুবল। আবার উঠল আর ডুব দিল। আমি তো আর বুঝিনি শুশুক, ছোড়দা বলল, ‘দেখেছো, শুশুক?
‘শুশুক। এমা! হি হি হি।’ আমি খুব হাসলাম। ভুস করে উঠে আর ডুব দেয়। শুশুক! শুশুক!
তিনাপিপির ফোন বাজল।
তিনাপিপি ফোনে কথা বলতে উঠল।
পূর্ণাপিপি আবার রান্না ঘরে গেছে। আমি ছোড়দার কোলে বসে চা খাচ্ছি। ছোড়দাকে কানে কানে বললাম, ‘ছোড়দা, কাল তিনাপিপির জন্মদিন জানো?’
ছোড়দা বলল, ‘তাই নাকি? জানি না তো।’
‘ওররে! আস্তে কথা বলো। শোনো, তুমি কিন্তু কাউকে বলো না। পূর্ণা মা কেকের অর্ডার দিয়েছে। তিনাপিপিও কিন্তু কিচ্ছু জানে না। তুমিও বলো না। এটা সারপ্রাইজ।’
ছোড়দা বলল, ‘আচ্ছা বলব না।’
সেজদা বলল, ‘আমাদের মাশা কী বলল শুনলাম না।’
আমি ছোড়দাকে ভালোবাসি, সেজদাকেও ভালোবাসি। এজন্য সারপ্রাইজের কথাটা সেজদাকেও কানে কানে বললাম। ফুলদা, ঠাম্মি, ফুলদিকেও বললাম।
পূর্ণাপিপি তিনাপিপি ফিরল।
তিনাপিপি বলল ‘মিস অরই, কানে কানে কী বলছেন সবাইকে?
আমাকে মিস অরই ডাকছে তিনাপিপি? কী বলব আর চুপ করে থাকলাম।
তিনাপিপি বলল, ‘কিরে? বোবা হয়ে গেছিস এখন?’
আমি পূর্ণাপিপিকে দেখলাম।
তিনাপিপিকে সারপ্রাইজের কথাটা বলে দিলে কি পূর্ণাপিপি এক নদী রাগ করবে?
পূর্ণাপিপি এরকম করে। আমার সঙ্গে এক নদী রাগ করে, এক পুকুর রাগ করে, এক সমুদ্র রাগ করে।
তিনাপিপি বলল, ‘এই কী রে, সবাইকে কী বলেছিস, আমাকে বল।’
এখন আমি আর না বলে পারি?
তবে তিনাপিপিকেও বললাম কানে কানে, ‘কাল তোমার জন্মদিন তুমি জানো?’
‘না তো। তোকে কে বলল?’
‘পূর্ণাপিপি।’
‘তাই নাকি? খুব ভালো কথা।’
‘পূর্ণাপিপি কেক অর্ডার করেছে।’
‘ও বাবা!’
‘হ্যাঁ। কিন্তু এটা কিন্তু সারপ্রাইজ। তুমি কাউকে বলো না।’
পূর্ণাপিপি বলল, ‘এই অরই বড়ই, কী বলিস রে?’
‘কিছু না। কিছু বলি না। বলিনি।’
‘কিছু বলিস নি? তৃণা তোকে কী বলল রে?’
তিনাপিপি বলল, ‘সেটা সারপ্রাইজ।’
পূর্ণাপিপি বলল ‘দেখো কাণ্ড! তোকে যদি আর কোনোদিন আমি কোনো সারপ্রাইজের কথা বলেছি!’
হায় রে! সত্যি পূর্ণাপিপি আর কোনো সারপ্রাইজের কথা আমাকে আর কোনোদিন বলবে না নাকি? হায় রে!
‘আর কোনোদিন বলব না পূর্ণা মা।’
পূর্ণাপিপি বলল, ‘হয়েছে! কত দেখলাম।’
‘সত্যি বলব না। আর শীতকালে তোমাদের উঠোনের সব ধুলো আমি ঝাঁট দিয়ে দিই কি না দেখো।’
তারা হাসল। পূর্ণাপিপি, তিনাপিপি, ঠাম্মি, ফুলদি, সেজদা, ফুলদা, ছোড়দা সবাই। আমি কী হাসির কথা যে বললাম! ইস রে!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়