ধানমন্ডিতে ট্রাকের ধাক্কায় নারী নিহত

আগের সংবাদ

অনাস্থা ভোটে স্পিকারের গড়িমসি

পরের সংবাদ

আত্মজীবনী আমাকে অনেক বেশি টানে

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একজন মানুষ যত বেশি বই পড়বে তার তত কল্পনা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। বই পড়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বই পড়ার নানা দিক নিয়ে কথা হয় অভিনেত্রী ফারজানা ছবির সঙ্গে। সাক্ষাৎকার : রেজা শাহীন

ছেলেবেলার পাঠ
সাধারণত ছোটবেলায় সবাই গোয়েন্দা সিরিজ, কমিক্স কিংবা গল্পের বই পড়ে থাকে কিন্তু আমি পুরোই উল্টো। আমার উপন্যাসের প্রতি ঝোঁক ছিল। আমার জন্মদিনে আমার বড় ভাই আমাকে একটা বই উপহার দেয়। আমি তখন ক্লাস সিক্স-এ পড়ি। বইটির নাম ‘ঈশপের গল্প’। মূলত এই বইটি পড়ার পর থেকে স্কুলের বাইরের বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহটা অনেক বেড়ে যায়।
এরপর আমি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প পড়া শুরু করি। রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প পড়ার পর তার লেখা উপন্যাস টানা পড়তে লাগলাম। নজরুলের বইও পড়েছি। যতই বড় হচ্ছি ততই আমার পড়ার পরিধি বাড়তে থাকে। গজেন্দ্রকুমার মিত্রের একটা বই আমার মস্তিষ্কে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তখন। বইটির নাম ‘কলকাতার কাছেই’। এটা একটা বড় উপন্যাস। বইটি আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছে।
আমার যে বয়স ছিল তখন ওই বয়সে ‘কলকাতার কাছেই’ এই বইটা আমার পড়ার কথা নয় কিন্তু কেন জানি বইটি পড়ে আমি অনেক আনন্দ পেয়েছি। এমনো হয়েছে পরীক্ষার আগের রাতে পাঠ্যবইয়ের পড়া বাদ দিয়ে এই বইটি লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছি আম্মুর ভয়ে। গজেন্দ্রকুমার মিত্রের বইটি আমার পড়ার রুচিবোধটা উন্নত করেছে, পরিবর্তন করে দিয়েছে।
আমার অভিনয় শিল্পীদের জীবনী পড়তে ভালো লাগত। তাদের জীবন কেমন কেটেছে, তাদের জীবন সংগ্রাম ইত্যাদি বিষয় জানার কৌতূহল ছিল। মনীষীদের জীবনী পড়েছি অনেক। আমার মনে আছে বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রীর লেখা ‘জীবনের জলছবি’, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জীবনীসহ অনেক মনীষীদের জীবনী পড়েছি। আমি যখন অভিনয় করতে শুরু করি তখন সত্যজিৎ রায়ের লেখা বইগুলো সংগ্রহ করতে থাকি। এরপর কত শত বই পড়েছি সেগুলো বলতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে।

সাম্প্রতিক পাঠ
এখন জীবনটা খুবই পাল্টে গেছে। এক সময়ে প্রচুর বই পড়া হতো। এখন বই পড়ার চেয়ে সিনেমা দেখার আগ্রহটা বেশি। কোনো লেখকের গল্প বা উপন্যাস থেকে যদি সিনেমা বানানো হয় তাহলে আমি ওই সিনেমাটা দেখি। কারণ সিনেমায় সে লেখকের গল্পটা ভিজ্যুয়াল দেখানো হয়।
যেহেতু আমি একজন অভিনয়শিল্পী তাই সিনেমা দেখলে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারফর্মেন্স উপভোগ করতে পারি।
‘সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ’ বইটা পড়ছি এখন। মৃণাল সেনের লেখা ‘আমার সিনেমা’ বইটা পড়ে শেষ করলাম স¤প্রতি।

যে ধরনের বই পড়া হয় বেশি
আমি ভ্রমণকাহিনী, উপন্যাস, জীবনী পড়তে পছন্দ করি। যে লেখাটা পড়ে আমি আনন্দ পাই সেই লেখার প্রতি ঝুঁকে পড়ি। এমন নয় যে আমি শুধু উপন্যাস পছন্দ করি বলে অন্য বই পড়ি না। আমি সব ধরনের বই পড়ে থাকি। আত্মজীবনী আমাকে অনেক বেশি টানে।

প্রিয় লেখক
এটা বলা আমার জন্য খুব কঠিন। সবার লেখাই আমার পড়া হয় কম বেশি। আমার যদি কোনো বইয়ের কয়েক পাতা পড়ার পর ভালো না লাগে তাহলে আমি সে বইটা আর পড়ি না। আর কোনো বইয়ের যদি কয়েক পাতা ভালো লেগে যায় তাহলে আমি সে বইটা পড়তে থাকি।

লেখালেখি
লেখালেখি করার অভ্যাস আছে। এখনো বই লেখা হয়নি। সামনে হয়তো হবে। আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিবেক’ গল্প থেকে নাট্যরূপ দিয়েছি। আমার লেখাটার নাম ‘অদৃশ্য পলেস্তারা’। মানিক বন্দ্যোপাধ্যার আরেকটি গল্পের নাট্যরূপ
দিয়েছি। সেটির নাম ‘হলুদ পোড়া’। আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে চাই। আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে আভিনয় করি। আমার মনে হয় আমার মতো এত বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করা আমাদের এখানকার অনেক অভিনেত্রীর সৌভাগ্য হয় না। আমি কখনো বই লিখলে আমি আমার নিজের কথাই লিখব।

বইমেলার স্মৃতি
খুব ছোট থেকেই বইমেলায় যাওয়া হয়। তখন পরিবারের সঙ্গে বইমেলায় গিয়েছি। কখনো বাবার সঙ্গে কখনো বা বড় ভাইয়ের সঙ্গে। বড় হওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে বইমেলায় যাওয়া হয়েছে অনেকবার। বইমেলার স্মৃতিগুলো সাজানো গুছানো না। টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি আছে। গত বছর বইমেলায় গিয়েছি আমার ছেলে এবং হাজব্যান্ডকে নিয়ে। প্রতি বছরই বইমেলায় গিয়ে বই কেনা হয়। এবার যাওয়া হয়নি কাজের ব্যস্ততায়। কারণ বইমেলা চলাকালীন সময়ে আমার দুইটা সিনেমার শুটিং ছিল। আমি তখন ঢাকার বাইরে ছিলাম।

কেন বই পড়ব
বই কল্পনার চোখকে প্রসারিত করে। সত্যিকার অর্থেই বই হচ্ছে অবিচল বন্ধু। একজন মানুষ যদি একা সুনসান সাগর তীরে বসে থাকে আর তার সঙ্গে যদি একটা বই থাকে তাহলে সে বইয়ের সব চরিত্রে তার আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। আমার ক্ষেত্রে এরকম হয়। বই একজন মানুষকে একা হতে দেয় না। তাই বই পড়ার প্র্যাকটিসটা খুব জরুরি। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয় তাহলে তারা খারাপ প্রবণতা থেকে দূরে থাকবে।
আমরা যদি শিশু বয়স থেকে ছেলেমেয়েদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারি তাহলে সার্বিকভাবে আমাদের পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং জাতিগতভাবে একটা শক্তিশালী ভিত তৈরি করতে পারব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়