ঢাবির সাবেক অধ্যাপক শামসুল হক মোল্লা মারা গেছেন

আগের সংবাদ

বদলে যাচ্ছে মাদকবিরোধী যুদ্ধ

পরের সংবাদ

বাঁধ কেটে মৎস্য নিধনের মহোৎসব : শান্তিগঞ্জে শত শত হেক্টর ফসলি জমি হুমকির মুখে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হোসাইন আহমদ, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে : সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের জামখোলা হাওরের বাঁচাডুবি বিলের ইজারাদার নীতিমালা অমান্য করে জলমহাল শুকিয়ে চলছে মৎস্য নিধনের মহোৎসব। জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য নিধনে জামখোলা হাওরের ফসলরক্ষা স্থায়ী বাঁধ কেটে ফেলায় জামখোলা হাওরের শত শত হেক্টর ফসলি জমির বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। স্থায়ী বাঁধটি কেটে দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
হাওরের কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকার প্রতি বছর হাওরের ফসল রক্ষায় ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে আসছেন। কিন্তু আমাদের হাওরের একটি প্রভাবশালী অসাধু চক্র জামখোলা হাওরে অবস্থিত উন্নয়ন স্কিমের আওতায় ইজারাপ্রাপ্ত সমিতির লোকজনদের কাছ থেকে সাবলিজ নিয়ে জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য নিধনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। এতে নীরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।
সরজমিন জামখোলা হাওরের বাঁচাডুবি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধরমপুর গ্রামের পূর্ব পার্শ্বে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। পরে ধরপুর গ্রামবাসী ওই বাঁধটি স্থায়ী রাস্তা হিসেবে হাওরে চলাচল করে আসছেন। কিন্তু ইজারাদারের লোকজন জমলহালটি সেচ করার প্রস্তুতি নিয়ে স্থায়ী বাঁধটি কেটে ফেলায় জলমহালটি শুকিয়ে তলদেশে পানি চলে গেছে। এতে ইজারাদারের লোকজন জলমহালটি শুকিয়ে মৎস্য নিধন করছে।
উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, জামখোলা হাওরের বাঁচাডুবি জলমহালটি ১৪২৬ বাংলা হতে ১৪৩১ বাংলা সন পর্যন্ত ৬ বছর মেয়াদে ইজারা নেয় দরগাপাশা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি দরগাপাশা গ্রামের মো. ছানু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ মিয়া। কিন্তু মৎস্য সম্পদ কৌশলে বিনষ্ট করছে ইজারাদার কর্তৃক অধিক মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা। ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর এই সমিতিগুলোর লোকজন জলমহালটি অপেশাদার মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে বেশি মূল্যে বাৎসরিক সাব-ইজারায় দরগাপাশা গ্রামের তৌহিদ খুরশিদুজ্জামান চৌধুরী নাজমল এর বিক্রি করে দিয়েছে।
দরগাপাশা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ছানু মিয়া জানান, বিলটি ইজারা এনে ভাগিদারদের দিয়ে ফিসিং করছি। বাঁধ কেটে না দিলে বিলের মাছ ধরা যাবে না, তাই ভাগিদাররা বাঁধ কেটে দিয়েছে। দরগাপাশা গ্রামের তৌহিদ খুরশিদুজ্জামান চৌধুরী নাজমুল আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাদের টাকার প্রয়োজন হলে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। ভাগিদার সম্পৃক্ত করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের সমিতিতে লোকজন দিয়ে ফিসিং করা যায় না। তাই দুই/তিন গ্রামের লোকজনকে বিলের ভাগিদার দেয়া হয়েছে। তারাই আমাদের বিলটি ফিসিং করছেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কোনো সুযোগ নেই। আমি ইউএনও স্যারকে অবহিত করেছি। ওনার পরামর্শ অনুযায়ী, পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম জানান, ওই বাঁধটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যাতে করে এই এলাকার মানুষের হাওরের ফসল আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু একটি অসাধু চক্র তাদের জলমহাল ফিসিং করার জন্য আমাদের তৈরি করা ফসলরক্ষা বাঁধটি কেটে দিয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কমিটি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার-উজ জামান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলীকে বলেছি, বিলের ইজারাদারকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এই বাঁধটি বিলের ইজারাদাররা বেঁধে দিতে হবে। তবে কোনো কারণে তারা বাঁধটি মেরামত না করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে মেরামত করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়