সেলুলয়েড পর্দায় প্রেমের কথা এলেই চোখে ভাসে সেরা কিছু জুটির কথা। হালযুগে জুটিপ্রথা বলিউডে তেমন আর নেই, কিন্তু প্রেমের ছবির দুর্দান্ত অনস্ক্রিন রোমান্স বললে তো জুটির কথা আসবেই।
‘দুজন কেবল দুজনার জন্য’, এমন অনুভূতি দর্শককে কেবল ম্যাচমেকিং জুটিই দিতে পারে!
বলিউড সিনেমার পর্দায় সর্বকালের সেরা ১০ রোমান্টিক জুটি নিয়েই এই নিবেদন
রাজ কাপুর-নার্গিস
আদিযুগের সাদাকালো পর্দাতেও রাজ আর নার্গিস ছিলেন দারুণ রোমান্টিক জুটি। বড়পর্দায় যৌথ আত্মপ্রকাশে জড়তার লেশমাত্র ছিল না তাদের। তবে এই রসায়ন কিন্তু শুধু পর্দাতেই আটকে ছিল না। বাইরের জগতেও তারা মজেছিলেন বেপরোয়া প্রেমে। রাজ বিবাহিত ছিলেন আগেই, তবে তাতে মোটেও আটকে থাকেনি তাদের প্রেম। বিশেষ করে ‘আওয়ারা’ (১৯৫১) ছবির পর থেকে নার্গিস মোটামুটি রাজের সঙ্গেই কাজ করেছেন। রাজ-নার্গিসের এই দুরন্ত প্রেমের ছোঁয়া পর্দাতেও অনায়াসেই ছড়িয়ে পড়ত। ‘আগ’, ‘বারসাত’, ‘আন্দাজ’, ‘আওয়ারা’ আর ‘শ্রী ৪২০’- ও তাই কখনো ভুলতে পারেননি সিনেমাপ্রেমীরা।

রাজেশ খান্না-শর্মিলা ঠাকুর
সুপারস্টার রাজেশ খান্নার গায়ে চ্যাম্পিয়নের তকমা লেগেছিল রোমান্টিক রোলের বদৌলতেই। আর পর্দার প্রেমে রাজেশের সেরা জুড়ি ছিলেন বাঙালি রূপসী শর্মিলা। ‘রূপ তেরা মাস্তানা’ ছবির আবেগঘন প্রেম কি কখনো মন থেকে হারাবার? রাজেশ-শর্মিলা জুটির দারুণ এই রসায়ন ‘আরাধনা’, ‘অমর প্রেম’, ‘দাগ’ ছাড়াও আরো অনেক ফিল্মকে করেছে স্মরণীয়।

গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রেহমান
হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগের কথায় গুরু দত্তের নাম এসেই পড়বে, আসবে ‘কাগজ কি ফুল’ আর ‘পিয়াসা’ ছবির নাম। আর এ ছবিগুলোর সাফল্যের মূলই ছিল গুরু আর ওয়াহিদার অসামান্য উপস্থিতি। কণ্ঠশিল্পী গীতা দত্তের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হলেও পর্দার বাইরে গুরু আর ওয়াহিদার তুমুল প্রেম আটকে থাকেনি। এমনকি গীতা-গুরুর দাম্পত্যেও অবশ্যম্ভাবীভাবে বিচ্ছেদ ঘটেছিল।

ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী
ছেলেটি পাঞ্জাবের বরপুত্র। মেয়েটি দক্ষিণের লাস্যময়ী রানী। ব্যাস, এই তো ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী! ধর্ম-হেমা জুটি গড়েছে ৪০টিরও বেশি ফিল্মের রেকর্ড। আর বাইরে বাইরে তো প্রেম বাড়ছিলই! হেমার রূপে জিতেন্দ্র আর সঞ্জীব কুমারও মজেছিলেন বেশ, কিন্তু জয়মাল্য পাঞ্জাবি নায়কের গলাতেই। এই ধামাকাদার রোমান্সের গোড়াপত্তন রমেশ সিপ্পির কালজয়ী কাল্ট ফিল্ম ‘শোলে’র সেটেই। আর পূর্বতন বলিউডি প্রেমকাহিনীর মতো এখানেও গোলযোগ-ধর্মেন্দ্র বিবাহিত। এ দিকে তার স্ত্রী প্রকাশ কাউরও ডিভোর্সে সম্মত হননি। ইসলামে দ্বিতীয় বিয়ে টেকনিক্যালি সমস্যা খাটে না বলে ১৯৭৯ সালের ২১ আগস্ট এই জুটি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। ধর্ম’র নয়া নাম হয় দিলাওয়ার খান ও হেমার নাম হয় আয়শা।

দিলীপ কুমার-বৈজয়ন্তীমালা
ষাটের দশকের রোমান্টিক জুটি হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন দিলীপ কুমার এবং বৈজয়ন্তীমালা। পর্দার দেবদাস-চন্দ্রমুখী এই জুটির সম্পর্ক ছিল একেবারেই পেশাদার। দক্ষিণী হলেও বৈজয়ন্তী চোস্ত হিন্দি বলতে পারতেন, এমনকি ভোজপুরিও। দিলীপ- বৈজয়ন্তীর জুটি সীমিত ছিল সেলুলয়েডেই, সায়রা বানুর সঙ্গে সুখী জীবনই কাটিয়েছেন দিলীপ কুমার।

অমিতাভ বচ্চন-রেখা
নিজ যুগের প্রায় সব সেরা অভিনেত্রীর সঙ্গেই কাজ করেছেন অমিতাভ, তবে রেখাই ছিলেন তার সেরা রোমান্টিক জুটি। বেশ কিছু ফিল্মে একসঙ্গে কাজ করবার পরই তাদের নিয়ে ‘গুঞ্জন’ শুরু হয়ে যায়, আর তা অমূলক ছিল না মোটেও! জশ চোপড়ার কালজয়ী রোমান্টিক ফিল্ম একেবারে অমিতাভের বাস্তব কাহিনীকেই সরাসরি পর্দায় হাজির করে। ‘সিলসিলা’ ছবিতে অমিতাভ জয়া ভাদুড়ির সঙ্গে বিবাহিত, কিন্তু রেখার সঙ্গে মেতেছেন তুমুল প্রেমে। বাস্তবেও ঘটনা কিন্তু তাই! আলোচিত এই ছবির পর অমিতাভ-রেখার পোস্ট ম্যারিটাল প্রেম তুমুল ঝড় বইয়ে দেয় অমিতাভের ব্যক্তিগত জীবনে। তবে শেষমেশ জয় জয়ারই হয়, ‘সিলসিলা’ ছবির পর আর কখনোই এক হয়ে কাজ করেননি অমিতাভ-রেখা জুটি। তবে, ‘সূর্যবংশম’ চলচ্চিত্রে খানিকটা ভিন্নভাবে হলেও দুজনেই যুক্ত ছিলেন। অমিতাভ এখানে ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে, আর তার বিপরীতে অভিনয় করা দক্ষিণী নায়িকার হিন্দি ডাবিংয়ের কাজটা সেরেছিলেন রেখা!

ঋষি কাপুর-নিতু সিং
শশী কাপুর আর রণধীর কাপুর, দুজনের সঙ্গে কাজ করলেও নিতু সিংয়ের সেরা জুটি রণধীরের অনুজ ঋষির সঙ্গেই। বলিউডের ‘লাভার বয়’ ঋষি আর নিতু একসঙ্গে কাজ করেছেন ডজনখানেক চলচ্চিত্রে। বহু প্রযোজকের কাছে এই জুটি ছিল তখন সবচেয়ে আকাক্সিক্ষত। ১৯৭৯ সালে মিডিয়াপাড়ায় তুমুল সরগরম তুলে গাঁটছড়া বাঁধেন এই জুটি। নিতুর তখন বয়স মাত্র ২১, ক্যারিয়ারের শীর্ষে অবস্থান, ফিল্মফেয়ার নমিনেশনও পেয়ে গেছেন এরই মধ্যে। কিন্তু কাপুর খানদানের কড়া রেওয়াজ, বিয়ের পরে অভিনেত্রী-বউদের ফিল্ম থেকে ইস্তফা দিতে হবে। ঋষি-নিতুর বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে নিতুরও ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে।

অনিল কাপুর-মাধুরী দীক্ষিত
আশির দশকের শেষভাগ আর নব্বইয়ের দশকের বড় একটা সময়জুড়ে অনিল-মাধুরীর ‘হট কেমিস্ট্রি’তে মাতোয়ারা ছিল বলিউডের রুপালি পর্দা। আবেগঘন দৃশ্যে অনিলের সঙ্গে মাধুরী ছিলেন সবসময়ই সাবলীল। সে সময় শ্রীদেবী আর মাধুরীর মধ্যে দারুণ প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছিল এই নিয়ে, কে সেরা জুটি হচ্ছেন অনিলের। এই লড়াইয়ে একেবারে সরাসরি জয় মাধুরীর!

শাহরুখ খান-কাজল
দর্শকের কাছে আর যাই হোক, কাজল-শাহরুখ জুটির রসায়ন নিয়ে কোনো ব্যাখ্যারই দরকার নেই! ফিল্মে কাজলের বিপরীতে শাহরুখ মানেই সুপারহিট, তাদের রেকর্ড তেমনটাই বলে। ‘বাজিগর’ থেকে ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ পর্যন্ত সব সময়ই জারি থেকেছে এই রেকর্ড। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির কথা তো বলাই বাহুল্য! এমনকি ‘কাল হো না হো’ বা ‘ওম শান্তি ওম’ ছবিতে কাজলের গেস্ট অ্যাপেয়ারেন্স, সেগুলোও পেয়েছে সুপারহিটের খেতাব।

আমির খান-জুহি চাওলা
আমিরের প্রথম ফিল্ম ‘হোলি’, জুহির শুরু ‘সালতানাত’। তবু আজো চলচ্চিত্রপ্রেমীরা বিশ্বাস করেন আমির-জুহির প্রথম ফিল্মই ‘কেয়ামাত সে কেয়ামাত তাক’! তুমুল আলোচিত এই ফিল্মের দারুণ সাফল্যের পর একসঙ্গে বেশ কিছু কাজ করলেও তেমন সাফল্য পাননি এই জুটি। তবে তাদের ‘দুজন দুজনার’ অনস্ক্রিন রসায়ন নিয়ে দর্শক সবসময়ই আলোড়িত ছিলেন।
:: মেলা ডেস্ক