কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

নওগাঁর জবই বিলে পাখির অভয়াশ্রম গড়ার দাবি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : নওগাঁর সাপাহার উপজেলার জবই বিলে শত শত পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটেছে। সারা বিল এলাকা এখন পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত। তবে পাখিপ্রেমীদের মতে, বিলে পাখির আগমন শুরু হলেও এর অবস্থান হবে মাত্র কিছু দিনের জন্য। তাই বিলটিতে অভয়াশ্রম গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রতি বছরের মতো এবারো শীত শুরু হওয়ার পর থেকে অতিথি পাখিরা আসছে। একই সঙ্গে বেড়েছে পাখিপ্রেমীদের আগমন। কেউ পাখি দেখে সময় কাটাচ্ছেন কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত। সম্প্রতি এমনই দৃশ্য দেখা গেছে বিল এলাকায়।
অতীতে কচুরিপানায় বিল ঢেকে থাকায় সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের অতিথি পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখপাখালি সারা বছর থাকত এই বিলে। কালক্রমে ‘জাল যার জলা তার’ নীতি অবলম্বন করায় কচুরিপানা বিলুপ্ত হয়েছে। বিলে ধান চাষ শুরু হওয়ায় পাখিরাও আসছে না তেমন। বিগত কয়েক বছর ধরে বিলটি একেবারে পাখিশূন্য অবস্থায় থাকে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে ‘জাল যার জলা তার’ নীতি বাতিল করে বিলটিকে বৃহৎ মৎস্য প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। এরপর বিলপাড়ের কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক ‘জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ সংস্থা’ তৈরি করে বিলে পাখি সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। এরপর বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের (বিবিসিএফ) পরামর্শে ২০১৯ সাল থেকে এই বিলে অবস্থানকারী বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জরিপ শুরু করে ‘জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ সংস্থা’। তাদের জরিপ মতে, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫৯৩টি, ২০২০ সালে ৭ হাজার ৬৮৩টি এবং ২০২১ সালে ৯ হাজার ৭১২টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি অবস্থান করে এই বিলে। ২১ সালে পরিযায়ী পাখির মধ্যে পাতি সরালি ৪ হাজার, লালঝুটি ভুতিহাঁস ২০০, গিরিয়া হাঁস ১ হাজার ২০০, পিয়াংহাঁস ১ হাজার, পাতি তিলিহাঁস ২০০, টিকিহাঁস ৫০, কালাপাখ ঠেঙ্গি ২০, গেওয়া-বাটান ৫০, প্রশান্ত সোনাগিরিয়া ২০০, পাতি ভুতিহাঁস ৭৫০, কালামাথা গাংচিল ৪, পশ্চিমা কানা কাপাসি ২টি, চখাচখি ১০০টি ছিল।
দেশি প্রজাতির চা-পাখি ৪০০, বেগুনি বক ২, কানিবক ৫০, বাজলা বক ৫০, গো-বক ৪২, শামুখখোল ১ হাজার, পানকৌড়ি ২০০’, খাটো কান পেঁচা ২, বড় বক ১৫, মাছ মুরাল ২, সাপ পাখি ৩, ধুপনি ১০০, কালামাথা গাংচিল ৪, পশ্চিমা কানা কাপাসি ২, পাতি মাছরাঙা ৫০, সাদা বুক মাছরাঙা ১০টিসহ প্রায় ২৮ প্রজাতির পাখি জরিপে পাওয়া গেছে বলে জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান জানিয়েছেন।
পাখি সংরক্ষণকারী কিংবা পাখিপ্রেমীদের মতে, অতীতের মতো বিলে পাখি সংরক্ষণ কিংবা আগমন শুরু হলেও এর অবস্থান হবে মাত্র কিছু দিনের জন্য। মৎস্য প্রকল্পের মৎস্যশিকারিরা নির্দিষ্ট সময় পার হলে বিলে যখন মাছ ধরা শুরু করে ঠিক তখনই পাখিগুলি কোথাও কোনো অভয়াশ্রম না পেয়ে ফিরে যায়। কয়েক বছর ধরে এই বিলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিলের নির্দিষ্ট কোনো এক জায়গায় সরকারিভাবে একটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলার জন্য জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটি, সাপাহার উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন বিভাগ ছাড়াও বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংগঠন দাবি করে আসছেন। তাদের দাবি, এই বিলে সরকারিভাবে বিলের নির্দিষ্ট একটি অংশে অভয়াশ্রম গড়ে তুললে সারা বছর সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ, জীববৈচিত্র্যের হরেক রকম প্রাণী নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে তাদের দাবি, অচিরেই বৃহৎ এই বিলে যেন একটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে একটি অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়, তা না হলে আর কয়েক দিন পরেই মৎস্য প্রকল্পের মৎস্যশিকারিদের মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়ে যাবে। হয়তো বিলে আসা পাখিগুলি ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়