অনেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়ান ও সেলফি তোলেন : ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বর : নমুনা পরীক্ষায় ৮০ শতাংশেরই করোনা > ‘পজেটিভ’ হওয়ার ভয়ে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহ

পরের সংবাদ

জালিয়াতি করে জামিন জয়পুরহাট আদালতে : চারজনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : ব্যাংকে টাকা জমার চালান সৃষ্টি ও জালিয়াতি করে জয়পুরহাট আদালত থেকে আসামিকে জামিন নেয়ার ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে আদালতের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বৃহ¯পতিবার দুপুরে জয়পুরহাট যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কামরুল হাসানের পক্ষে সেরেস্তাদার মো. আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলো- জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাঁচুর চক গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে সোহেল রানা ও তার বোন পারুল বেগম, বড় ভাই আব্দুল করিম কাজী এবং আইনজীবী রেজাউল করিমের মুহুরি পাঁচবিবি উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আজিজার রহমান।
সংশ্লিষ্ট আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দুই ব্যবসায়ী আরমান হাবিব ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে আদালতে পৃথকভাবে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ২টি চেক জালিয়াতির মামলা করা হয়। আরমান হাবিবের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী শাহ মো. কামরুল হাসান ও সোহেল রানার মামলার বাদী আমানুল্লাহ। সংশ্লিষ্ট আদালত দুই আসামিকে এক বছর করে কারাদণ্ড ও চেকে উল্লেখিত সমপরিমাণ টাকা জরিমানা করেন। তারা কারাগারেও ছিলেন।
গত বছরের ১১ নভেম্বর আইনজীবী রেজাউল করিম আরমান হাবিবের জরিমানার ৩০ লাখের অর্ধেক ১৫ লাখ টাকা জমার সোনালী ব্যাংকের ১০৩ নম্বর চালান অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জমা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই আদালত আরমান হাবিবকে জামিন দিয়েছেন। অপর আসামি সোহেল রানার মামলার সমপরিমাণ জরিমানার ২৮ লাখ ১৬ হাজার টাকার অর্ধেক ১৪ লাখ ৮ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকের ৮৩ নম্বর চালান দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জমা দেন তার আইনজীবী আনিছুর রহমান। ২৮ নভেম্বর আসামি সোহেল রানা আদালতের জামিন পেয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান।
তবে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চালান মূলে ব্যাংক ও আদালতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আদালতে জমা দেয়া ১০৩ নম্বর ও ৮৩ নম্বর ব্যাংকের চালানে কোনো ব্যাংকে টাকা জমা করা হয়নি। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দুই আসামির জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট আদালত ওই আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই আসামির জামিন আদেশ বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
ব্যাংকের চালান জালিয়াতির ঘটনায় সোহেল রানার আইনজীবী এডভোকেট আনিছুর রহমান বাদী হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সোহেল রানার বড় ভাই আব্দুল করিম বোন পারুল বেগম ও আলম বাবু ওরফে নসু বাবুসহ অজ্ঞাত আরো ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ সোহেল রানার বড় ভাই আব্দুল করিমকে গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
বৃহ¯পতিবার আদালতে করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর জয়পুরহাট যুগ্ম ও দায়রা জজ আদালত থেকে ১৪ লাখ ৮ হাজার টাকার ভুয়া ও সৃষ্ট চালান দেখিয়ে কারাগারে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহেল রানাকে জামিন করানো হয়। যেহেতু সংশ্লিষ্ট আদালতে সৃষ্ট, ভুয়া ও জাল চালান জমা দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে কৌসলে আসামির জামিন নেয়া হয় সেহেতু যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পক্ষে সেরেস্তাদার আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
উল্লেখিত পৃথক পৃথক ২টি ঘটনার মামলার আইনজীবী রেজাউল করিম ও আনিসুর রহমান বলেন, মুহুরি ও মক্কেলের স্বজনরা ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার চালান এনে দিয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি সরল বিশ্বাসে চালানে স্বাক্ষর করেছি। চালানে সোনালী ব্যাংকের সিল ও কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিল। অবিশ্বাস করার মতো কোনো সূত্র ছিল না। ব্যাংকের চালান জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নন মর্মে দাবি করেন।
মুহুরি আজিজুর রহমান বলেন, আইনজীবীরা জামিন করিয়েছেন এবং তারাই ব্যাংকের চালান আদালতে জমা দিয়েছেন। মুহুরি হিসেবে আইনজীবীদের লেখা-লেখিতে সহযোগিতা করেছি। কে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিয়েছে সেটা আমি জানি না।
অপর দিকে জয়পুরহাট ২য় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার আব্দুল হান্নান বলেন যে, আইনজীবী নিজেই ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন বলে চালানে স্বাক্ষর করেছেন। যদি সেটি ভুয়া ব্যাংক চালান হয় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব আইনজীবীর।
উল্লেখ্য, এসব ঘটনায় আইনজীবী আনিসুর রহমানও জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার এজাহারনামীয় একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে মর্মে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি একেএম আলমগীর জাহান বলেন।
জয়পুরহাট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে জয়পুরহাট আইন-আদালত অঙ্গনে একটি সিন্ডিকেট অসৎ পন্থা অবম্বন করে অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন যা অনাকাঙ্খিত, আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এদের কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়